<p>গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘প্রশাসনে এখনো ফ্যাসিস্টদের দোসররা বসে আছে। বিভিন্ন কাঠামোতে তারা বসে আছে। তারা খুনিদের আড়াল করার চেষ্টা করছে। তারা যেন খুনিদের আড়াল করতে না পারে। আপনারা যদি এদের বিচার করতে না পারেন তাহলে কেনো দায়িত্ব নিয়েছেন? বিচার আপনাদের করতেই হবে।’</p> <p>শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) নারায়ণগঞ্জ শহরের মিশনপাড়া এলাকায় হোসিয়ারি সমিতি মিলনায়তনে গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের উদ্যোগে আয়োজিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণ ও শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় সুযোগের সমতা, মর্যাদা ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ৭২ সাল থেকে আমরা দেখলাম ওই মুক্তিযুদ্ধের সময় যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তার বিপরীতে বাংলাদেশকে চালানো হয়েছিল। সাংবিধানিক ক্ষমতার কাঠামো দেখেন, সব ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত ছিল। এক হাতে মানুষের অধিকারের কথা বলেছে, আরেক হাতে সেটা কেড়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এভাবে যারা ক্ষমতায় গিয়েছে তারা পুরো জমিদারির মতো দেশ চালানোর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যে কারণে ৫৩ বছরে আমরা সুযোগের সমতা পাইনি। আমরা মানবিক মর্যাদা পাইনি। আমরা সামাজিক ন্যায় বিচার পাইনি। বরং আমাদের ভোটের অধিকারটা পর্যন্ত কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমাদের টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। আমি শুনেছিলাম ১১ লাখ কোটি টাকা, এখন শুনছি ১৮ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে তারা। এইভাবে তারা নিজেদের গদি টিকিয়ে রাখার জন্য জুলাই-আগস্টে নির্বিচারে আমাদের সন্তানদের হত্যা করেছে। ছাত্র-জনতা গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশ চলবে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী। বাংলাদেশ হবে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ। কেউ খাবে কেউ খাবে না, তা হবে না। ফ্যাসিস্টরা যে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করেছিল সেটাতে হবে না। আমাদের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত লাগবে। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত মানে গণতান্ত্রিক সংবিধান। এক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতার সংবিধান না। এ জন্য রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার লাগবে। আইনের সংস্কার লাগবে। যে আইন আমার গলাটিপে ধরে, আমার কণ্ঠরোধ করে, এই সব কিছুর সংস্কার লাগবে। যে আইন সাংবাদিকদের নির্যাতন করতে না পারে। রাষ্ট্রের যেকোনো নাগরিক যাতে মাথা উঁচু করতে পারে। রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর লাগবে। আশা করছি, অন্তর্বর্তী সরকার যথাযথভাবে এসব সংস্কার করবে।’ </p> <p>জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘উন্নয়ন মানে বড় বড় স্থাপনা না। উন্নয়ন বলতে বোঝায় একজন মানুষ সর্বনিম্ন কত আয় করে। সেটা নিয়ে তিনি যদি সম্মান নিয়ে বাচতে পারে, তার সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারে, তার পরিবারের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারে, পরিবারের ভবিষ্যৎ করতে পারে তাহলে বুঝব বাংলাদেশ উন্নতি করছে। আমাদের কয়েকটি বিল্ডিং কয়েকটি মেট্রো রেল আর কয়েকটি স্থাপনা দেখিয়ে বলবেন না, দেশ উন্নতি হচ্ছে। বাংলাদেশের উন্নতি বলতে বুঝি, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের উন্নতি যে উন্নতিতে প্রতিটি মানুষ মাথা উচু করে বাঁচতে পারে। জনগণ হতে হবে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহি করবে এ ধরনের রাষ্ট্র প্রত্যাশা করি। চব্বিশের জুলাইয়ে এই রাষ্ট্রের প্রত্যাশায় শহীদরা রক্ত দিয়েছেন। তাদের রক্তের ঋণের সঙ্গে আমরা যাতে বেঈমানি না করি সবাই সেই অঙ্গীকার করি।’</p> <p>গণসংহতি নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক অঞ্জন দাসের সভাপতিত্বে এদিন আরো বক্তব্য দেন সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, ছাত্র ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি ফারহানা মানিক মুনাসহ শহীদ পরিবারের সদস্যরা।</p>