<p>বিভক্তি কাটিয়ে প্রায় চার বছর পর এক হয়েছে গণফোরামের দুই অংশ। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে ২০২০ সালে দুটি আলাদা কমিটি গঠন করেছিল সংবিধান প্রণেতা ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন দলটি। </p> <p>বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণফোরামের ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় দ্রুত সময়ে মধ্যে জাতীয় কাউন্সিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণা দেন দুই অংশের নেতারা।</p> <p>প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত সভায় গণফোরাম দুই অংশের শীর্ষ নেতারাই এদিন এক মঞ্চে বসেছিলেন। দলটির শীর্ষ নেতা মোস্তফা মহসীন মন্টুর সভাপতিত্বে সভার প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা ও গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন। উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট এস এম আলতাফ হোসেন, ডা. মো. মিজানুর রহমান প্রমুখ শীর্ষ নেতারা।</p> <p>প্রধান অতিথির ভাষণে ড. কামাল হোসেন কামাল গণফোরাম সব সময় জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য রাজনীতি করেছে মন্তব্য করে উপস্থিত নেতাকর্মীদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর জানান। তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু রাজনীতি করার জন্য প্রতিজ্ঞা আমরা করেছিলাম। সে প্রতিজ্ঞা আমরা ধরে রাখতে পেরেছি। আমরা কারো কাছে বিক্রি হইনি। এখানে যারা আছে তাদের একজনও বিক্রি হয়নি।’</p> <p>দলটির ইমেরিটাস সভাপতি বলেন, ‘আমরা সাময়িক সুবিধার জন্য রাজনীতি করি না। আমরা চাইলেই তথাকথিত মন্ত্রী হতে পারতাম। কিন্তু আমরা সেটা করিনি। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠান ধরে রাখতে পারব কি না, আমরা তো টাকা দিয়ে নির্বাচন করিনি, আমরা ভোট কিনে নির্বাচিত হইনি। আমরা চাই, জনগণ সত্যিকার অর্থে ক্ষমতার মালিক হোক।’</p> <p>দেশকে দুর্নীতিবাজ ও লুটেরাদের হাত থেকে বাঁচাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে জনগণকে একত্রিত হতে হবে। ছাত্রসমাজ প্রমাণ করেছে তারা কারো কাছে বিক্রি হয়নি। তারা জীবন দিয়ে দেশকে রক্ষা করেছে। তারা দেশ পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের মানুষ পরিশ্রম করে উৎপাদন বাড়াচ্ছে তবু সংকট কেন?  আপনারা ঐক্যবদ্ধ হলেই দুর্নীতিবাজদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে পারব।’</p> <p>গণফোরামের সব নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধভাবে সব স্তরে রাজনৈতিক, সাংগঠনিক ও সামাজিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি জ্ঞাপন করেন গণফোরামের শীর্ষ নেতা জ্যেষ্ঠ অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। সভায় দুই অংশের যৌথ ঘোষণাপত্রে বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শ্রদ্বেয় ড. কামাল হোসেনের উপস্থিতিতে গণফোরাম ঐক্যবদ্ধভাবে সব স্তরে রাজনৈতিক, সাংগঠনিক ও সামাজিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছি। আমরা আরো ঘোষণা করছি, দ্রুততম সময়ে ঐক্যবদ্ধ গণফোরামের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।’</p> <p>২০১৮ সালের অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই গণফোরামের ভেতর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব শুরু হয়। পরের বছর ৫ মে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে দলে নতুন যোগ দেওয়া ড. রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।  এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা।  এরপর শুরু হয় বহিষ্কার-পাল্টাবহিষ্কার। এর জেরে ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে দুই ভাগ হয়ে যায় দলটি। কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন মূল অংশ থেকে বেরিয়ে যাওয়া অংশের নেতৃত্বে ছিলেন দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুসহ তিন নেতা। ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারিত রেজা কিবরিয়ার পদত্যাগের পর দুই অংশের এক হওয়ার কথাও শোনা যায়। তবে শেষ পর্যন্ত উদ্যোগ বিফলে যায়।</p>