<p>অন্যের মঙ্গল কামনা করা, অন্যকে সহযোগিতা করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। মুমিন নিজের জন্য যা পছন্দ করে, তার অন্য ভাইয়ের জন্যও তা পছন্দ করে। নিজের জন্য যা পছন্দ করে না, অন্য মুমিন ভাইয়ের জন্যও তা পছন্দ করে না। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি নিজের জন্য যা পছন্দ করে সেটা তার ভাইয়ের জন্যও পছন্দ না করা পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫১৫)</p> <p>এ জন্য কোনো মুমিন কখনো তার অন্য ভাইকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করবে না। কারো বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হবে না। সর্বদা অন্যকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে ওত পেতে থাকবে না। কারণ মহান আল্লাহ এ ধরনের অভ্যাসের মানুষকে পছন্দ করে না, বরং যারা অন্যের কল্যাণ কামনা করে, সাধ্যমতো অন্যকে সাহায্যের চেষ্টা করে, মহান আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন, উত্তম প্রতিদান দেন।</p> <p>আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে দুনিয়ার বিপদসমূহের মধ্যকার কোনো বিপদ থেকে রক্ষা করবে, এর প্রতিদানে আল্লাহ কিয়ামতের দিনের বিপদসমূহের কোনো বিপদ থেকে তাকে রক্ষা করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো গরিব লোকের সঙ্গে (পাওনা আদায়ে) নম্র ব্যবহার করবে, আল্লাহ তার সঙ্গে দুনিয়া ও আখিরাতে উভয় স্থানে নম্র ব্যবহার করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষত্রুটি গোপন করে রাখবে, আল্লাহও তার দোষত্রুটি দুনিয়া ও আখিরাতে উভয় স্থানে গোপন রাখবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্য করে, আল্লাহও ততক্ষণ তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৪৬)</p> <p>অন্যদিকে যারা সামান্য ক্ষমতা পেয়ে অন্যের ওপর অত্যাচার করে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে কিংবা নিজের চাটুকারিতার সুযোগ নিতে গিয়ে নিজের আশপাশের মানুষদের পেছনে লেগে থাকে, অন্যকে কষ্ট দিয়ে মানসিক শান্তি পায়, তাদের জন্য মহান আল্লাহ পক্ষ থেকে শাস্তি অপেক্ষা করছে। হিশাম (রা.)-এর পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার হিশাম ইবনে হাকিম ইবনু হিজাম সিরিয়ার কৃষকদের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এদের কঠিন রোদে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল। তিনি বলেন, এদের কী হয়েছে? তারা বলল, জিজিয়ার জন্য এদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অতঃপর হিশাম বললেন, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাদের সাজা দেবেন, যারা পৃথিবীতে (অন্যায়ভাবে) মানুষকে সাজা দেয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৫৫২)</p> <p>এ জন্য নবীজি (সা.) সাহাবায়ে কিরামকে কল্যাণকামিতার প্রতি গুরুত্বারোপ করতেন এবং অন্য মুসলিম ভাইয়ের মঙ্গল কামনার ব্যাপারে বায়াত গ্রহণ করতেন। জারির ইবনে আবদুল্লাহ আল-বাজালি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাছে সালাত (নামাজ) কায়েম করার, জাকাত প্রদান করার এবং সব মুসলমানের মঙ্গল কামনা করার বায়াত গ্রহণ করেছি। (বুখারি, হাদিস : ৫৭)</p> <p>অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, জিয়াদ ইবনে ইলাকা (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুগিরা ইবনে শুবাহ (রা.) যেদিন ইন্তেকাল করেন সেদিন আমি জারির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.)-এর কাছে শুনেছি, তিনি (মিম্বারে) দাঁড়িয়ে আল্লাহর প্রশংসা করে বলেন, তোমরা এক আল্লাহকে ভয় করো যাঁর কোনো অংশীদার নেই এবং নতুন কোনো নেতার আগমন না হওয়া পর্যন্ত শৃঙ্খলা বজায় রাখো, অতি সত্বর তোমাদের নেতা আগমন করবেন।</p> <p>অতঃপর জারির (রা.) বলেন, তোমাদের নেতার জন্য ক্ষমা চাও। কেননা তিনি ক্ষমা করা পছন্দ করেন। অতঃপর বলেন, একদা আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে আরজ করলাম, আমি আপনার কাছে ইসলামের বায়াত নিতে চাই। তিনি (অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে) আমার ওপর শর্ত দিয়ে বলেন, আর সব মুসলমানের মঙ্গল কামনা করবে। অতঃপর আমি তাঁর কাছে এ শর্তের ওপর বায়াত নিলাম। এই মসজিদের প্রতিপালকের শপথ! আমি তোমাদের মঙ্গল কামনাকারী। অতঃপর তিনি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন এবং (মিম্বার থেকে) নেমে গেলেন। (বুখারি, হাদিস : ৫৮)</p> <p>মহান আল্লাহ সবাইকে সুবুদ্ধি দান করুন। হিংসা-বিদ্বেষ মুক্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।</p> <p> </p>