<p>তিন বছর আগে মাহমুদুর রহমান নামের যে ব্যক্তিকে সাভারের জামিয়া খাতামুন নাবিয়্যিন মাদরাসার কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে, সেই ব্যক্তি বিএনপি নেতা আবুল হারিছ চৌধুরী কি না, তা নিশ্চিত হতে কবর থেকে দেহাবশেষ সংগ্রহ করে ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিচালককে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।</p> <p>হারিছ চৌধুরীরর মেয়ে সামিরা তানজিনের রিটে প্রাথমিক শুনানির পর বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। সিআইডির পরিচালকের প্রতি এ আদেশ দেওয়া হয়েছে। </p> <p>আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহদীন চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন রেদওয়ান আহমেদ রানজীব ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন।</p> <p>বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন হারিছ চৌধুরী। ২০২২ সালে হারিছ চৌধুরীকে নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করে দৈনিক পত্রিকা মানবজমিন। সে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি (ওয়ান-ইলেভেন) জরুরি অবস্থা জারির পর আত্মগোপনে চলে যান হারিছ চৌধুরী। দীর্ঘ ১৪ বছর তিনি আত্মগোপনে কাটান। এই ১৪ বছরের ১১ বছরই তিনি ছিলেন ঢাকার পান্থপথে। এ সময় বেশভূষার পাশাপাশি নামও বদলে ফেলেন তিনি। মাহমুদুর রহমান নামে একটি পাসপোর্টও নেন হারিছ চৌধুরী। ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে এই পাসপোর্ট ইস্যু হয়।</p> <p>হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিনের বরাত দিয়ে মানবজমিনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালের ২৬ আগস্ট করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। মারা যান ৩ সেপ্টেম্বর। মৃত্যু সনদে বলা হয়েছে তিনি কোভিড ইউথ সেপটিক শকে এ মারা গেছেন। তার মৃতদেহ গ্রহণ করেন মেয়ে সামিরা চৌধুরী। এরপর আত্মীয়স্বজনের পরামর্শে সাভারের লালাবাদ কমলাপুরে জামিয়া খাতামুন নাবিয়্যিন মাদরাসার কবরস্থানে হারিছ চৌধুরীকে দাফন করা হয়।</p> <p>আদালতের আদেশের পর হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্বৈরাচারী সরকার গোয়েন্দা বিভাগ নাটক রচনা করে বাবার মৃত্যুকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না বলে গণমাধ্যমে খবর হয়েছে। এখনো মানুষ জিজ্ঞেস করে সত্যিই কি তিনি মারা গেছেন! বাবার মৃত্যু নিয়ে যাতে কোনো প্রশ্ন না থাকে সে জন্যই রিট আবেদনটি করা হয়েছে। আদালত রুলসহ আদেশ দিয়েছেন।’</p> <p>সাভারের জামিয়া খাতামুন নাবিয়্যিন মাদরাসার কবরস্থানে দাফন করা মাহমুদুর রহমান আবুল হারিছ চৌধুরী কি না, তা নিশ্চিত হতে কবর থেকে দেহাবশেষ সংগ্রহ করে ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না এবং ডিএনএ পরীক্ষায় তা প্রমাণিত হলে হারিছ চৌধুরীর নামে মৃত্যু সনদ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। এ ছাড়া অপরাধী হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশনে (ইন্টারপোল) হারিছ চৌধুরীর নামে রেড নোটিশ কেন প্রত্যাহার করা হবে না এবং শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় নিজ জেলা সিলেটে কেন তাকে কবরস্থ করা হবে না, সে প্রশ্নেও রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।</p> <p>স্বরাষ্ট্রসচিব, স্থানীয় সরকার সচিব, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের রেজিস্ট্রার জেনারেল, সিআইডির পরিচালক, ঢাকা পুলিশ সুপার ও সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। </p> <p>২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় হারিছ চৌধুরীর যাবজ্জীবন সাজা হয়। এ মামলায় অভিযুক্ত হলে ২০১৫ সালে তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি হয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা ও বিস্ফোরক মামলারও আসামি ছিলেন হারিছ চৌধুরী।</p>