<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">করোনা মহামারি পরবর্তী চীনের অর্থনীতিতে যে মন্থরগতি তৈরি হয়েছে তা এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে চীন যখন একের পর এক প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৬ সালে ক্ষমতায় এসে চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করা ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট হলে চীনের সব পণ্যে ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, তাঁর প্রেসিডেন্ট হওয়া শুধু চীনের জন্য নয়, পুরো বিশ্বের জন্যই চিন্তার। কারণ ২০১৬ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম মেয়াদেই ডোনাল্ড ট্রাম্প তথাকথিত বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেন। তখন তাঁর মূল লক্ষ্যবস্তু ছিল চীন। কিন্তু এবার তিনি পরিষ্কার করে বলেছেন, নির্বাচিত হলে এই বাণিজ্যযুদ্ধের পরিসর আরো বিস্তৃত হবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অংশীদারদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছেই। ট্রাম্পের নতুন মেয়াদে শুধু চীন নয়, বিশ্বের সব দেশই তাঁর কঠোর বাণিজ্যনীতির কবলে পড়বে; বিশেষ করে যুক্তরাজ্যসহ ধনী দেশগুলোর ওপর এই প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই বাস্তবতায় ট্রাম্পের সঙ্গে মুক্ত ও অবাধ বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী র‌্যাচেল রিভস। ট্রাম্প বারবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যেসব পণ্য আমদানি করে, তার ওপর ১০ থেকে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পরিকল্পনা করছেন তিনি। আর চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক হবে ৬০ শতাংশ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি এমনকি ১০০ শতাংশও হতে পারে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তুরস্কের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন প্ল্যাটফরমের নির্বাহী বোর্ডের চেয়ারম্যান ইলতার তুরান বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">-এর অর্থ হচ্ছে শুল্ক আরোপের মাধ্যমে আমেরিকার বাজার রক্ষা করা। ফলে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনে শুধু চীন নয়, ইউরোপেরও চিন্তিত হওয়ার কারণ রয়েছে। তিনি আরো বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এটি আমেরিকার বাণিজ্যনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করে দেবে, যা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, বিশেষত ইউরোপ ও চীনের ক্ষেত্রে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জার্মান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট পেটের আদরিয়ান বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ট্রাম্পের বিজয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য করা অনেক কঠিন হয়ে উঠবে। ফলে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে সুরক্ষাবাদী বাণিজ্যনীতির ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের প্রস্তুত থাকতে হবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের যুগে জার্মানিতে ব্যবসা করা কম্পানিগুলো কিছুটা অনিশ্চয়তায় পড়েছে। ফলে নতুন বিনিয়োগ কমতে পারে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইলতার তুরান বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা এখনো জানি না ট্রাম্প কী করতে যাচ্ছেন। কিন্তু তাঁর অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, অনেক বক্তব্য তিনি বাস্তবায়ন করেছেন আবার বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মতের সংশোধনও করেছেন।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রথমবার ক্ষমতায় আসেন, তখন তিনি চীনের পণ্যে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছিলেন। চীনা বিশ্লেষক বিল বিশপ বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নতুন শুল্ক পরিকল্পনার বিষয়ে ট্রাম্প যা বলেছেন, তা আক্ষরিকভাবেই গ্রহণ করা উচিত। ট্রাম্প মনে করেন, চীন অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে এবং চীন ও কভিড-১৯-এর কারণে ২০২০ সালের নির্বাচনে তাঁকে হারতে হয়েছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০২১ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউস ত্যাগ করার পরও চীনের ওপর ওয়াশিংটনের চাপ কমেনি। বাইডেন প্রশাসন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় আরোপ করা সেই পদক্ষেপগুলো অব্যাহত রেখেছে। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে তা আরো বিস্তৃত করেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রথম দফায় ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করায় চীন ধাক্কা খেয়েছিল। তবে চীন এখন আরো দুর্বল। দুই বছর আগে করোনা সম্পর্কিত কঠোর বিধি-নিষেধ উঠে যাওয়ার পর চীন অর্থনীতিকে মহামারি-পূর্ববর্তী প্রবৃদ্ধির স্তরে ফিরিয়ে নিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। তারা আশা করেছিল, দ্রুত পুনরুদ্ধার হবে। কিন্তু তা তো হয়নি, বরং চীনের অর্থনৈতিক সংবাদ এখন হতাশাজনক।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত সেপ্টেম্বরে চীন অর্থনীতির পালে হাওয়া লাগাতে প্রণোদানসহ কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। এরই মধ্যে কয়েক দফা প্রণোদনা দেওয়াও হয়েছে। তা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) দেশটির বার্ষিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস হ্রাস করে। আইএমএফ আশা করছে, ২০২৪ সালে চীনের প্রবৃদ্ধি হবে ৪.৮ শতাংশ। পরবর্তীকালে চীনের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি আরো কমে ৪.৫ শতাংশে পৌঁছবে বলে তারা ধারণা করছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কয়েক দশক উচ্চ প্রবৃদ্ধির পর চীনের অর্থনীতির গতি যে কমে যাবে, সে জন্য দেশটির নেতারা প্রস্তুত ছিলেন। ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং বলেছিলেন, দ্রুত প্রবৃদ্ধি থেকে উচ্চমানের উন্নয়নের পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার পরিকল্পনা করছে চীন। উন্নত উৎপাদন ও পরিবেশবান্ধব শিল্পের কল্যাণে চীনের অর্থনীতির মোড় ঘুরে যাবে, এটা বোঝাতে পরবর্তীকালে প্রেসিডেন্ট চিনপিংয়ের বলা ওই কথাটি চীনের কর্মকর্তারা বারবার ব্যবহার করেছেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কিন্তু কিছু অর্থনীতিবিদ বলেন, চীন শুধু রপ্তানি করে সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। মর্গান স্ট্যানলি এশিয়ার সাবেক চেয়ারম্যান স্টিফেন রোচ বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চীন সতর্ক না হলে তার পরিণতি জাপানের মতো হতে পারে, অর্থাৎ কয়েক দশকের দীর্ঘ স্থবিরতার মুখে পড়তে পারে তারা।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৯০-এর দশকে এসে প্রথমবার জাপান দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়ে। রোচ বলেন, তেমন পরিস্থিতি এড়াতে চীনকে অনাবিষ্কৃত ভোক্তা চাহিদার ওপর নির্ভর করতে হবে এবং রপ্তানি ও বিনিয়োগনির্ভর প্রবৃদ্ধি থেকে সরে আসতে হবে। এতে শুধু টেকসই প্রবৃদ্ধি উৎসাহিত হবে না, বরং </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাণিজ্যিক উত্তেজনা ও চীনের বাইরের ঝুঁকি কমাতে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> তা সহায়ক হবে বলে মনে করেন তিনি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দীর্ঘকাল ধরে বিশ্বব্যাপী কম খরচে পণ্য তৈরির কারখানা হিসেবে পরিচিত চীন। তারা এখন সেই পরিচিতি উচ্চ প্রযুক্তিপণ্য রপ্তানির মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সৌর প্যানেল, বৈদ্যুতিক গাড়ি ও লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির ক্ষেত্রে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় দেশ চীন। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) তথ্য অনুসারে, বিশ্বে সৌর প্যানেল উৎপাদনের অন্তত ৮০ শতাংশ হিস্যা এখন চীনের। দেশটি বৈদ্যুতিক গাড়ি ও ব্যাটারির সবচেয়ে বড় উৎস।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আইইএ গত বছর বলেছিল, পরিবেশবান্ধব জ্বালানিতে চীনের বিনিয়োগ বিশ্বের মোট বিনিয়োগের এক-তৃতীয়াংশ। কারণ দেশটি </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নবায়নযোগ্য শক্তিতে সক্ষমতা বাড়াতে অব্যাহতভাবে অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করছে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। সূত্র : বিবিসি, এএ, রয়টার্স</span></span></span></span></p>