<p>চারদিকে সবুজ সারি সারি চা-গাছের গালিচা। নীল আকাশে হেমন্তের সাদা মেঘের ভেলা, মাঝখানে লাল শাপলার বিল। বিলের কালচে পানির ওপর সবুজের ফাঁকে থরে থরে ফুটে আছে লাল শাপলা। সব কিছু মিলিয়ে প্রকৃতিকে ভিন্ন এক রূপে সাজিয়ে তোলা হয়েছে যেন রংতুলির আঁচড়ে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় পানির ওপরে লাল গালিচা বিছানো রয়েছে। এক পলক দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়।</p> <p>মুগ্ধতা ছড়ানো হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি চা-বাগানের এ শাপলার বিলে গত কয়েক বছর ধরেই প্রকৃতিপ্রেমীদের আনাগোনা। তবে এবার এ বিলে যেন মানুষের মেলা। রাতে শাপলা ফোটে, তাই ফুটন্ত ফুল দেখতে সকালে মানুষের ভিড় জমে বিলে। শুধু কি সকালে, গত এক সপ্তাহ ধরে বিকেলেও মানুষের ভিড় জমে ওঠে এ বিলের পাড়ে।</p> <p>শুক্রবার ও শনিবার বন্ধের দিনে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়ে সবার চোখে-মুখে ছিল তৃপ্তির হাসি। কিন্তু কিছু পর্যটকের কর্মকাণ্ডে হাসিমাখা মুখগুলো হয়ে যায় বিষাদে পরিপূর্ণ। ব্যাপক হারে ফুল ছিঁড়ে নিয়ে যাওয়ায় হুমকিতে পড়েছে এই সৌন্দর্য। একইভাবে হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের কিছু পর্যটকের থাবায় হারিয়ে যায় পদ্মবিল। শাপলা বিল যেন ফুল ছেঁড়াদের দৌরাত্ম্যে হারিয়ে না যায় এই আকুতি পর্যটকদের।</p> <figure class="image" style="float:left"><img alt="শাপলা" height="393" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/Nahid/Untitled-3a.jpg" width="654" /> <figcaption>পর্যটকরা ব্যাপক হারে ফুল ছিঁড়ে নিয়ে যাওয়ায় হুমকিতে<br /> পড়েছে বিলের সৌন্দর্য। ছবি : কালের কণ্ঠ</figcaption> </figure> <p>প্রকৃতির এক সুন্দর লীলাভূমি চা-বাগান। আর চা-বাগানের ভেতরে যখন লাল শাপলা বিলের সন্ধান মেলে তাহলে আর কে আটকায় প্রকৃতিপ্রেমীদের। সরেজমিনে দেখা যায়, বাগান কর্তৃপক্ষ বিলের চারপাশে বড় গাছ ও বাঁশ দিয়ে রাস্তায় বেড়া দিয়ে, চৌকিদার বসিয়ে আটকাতে পারছে না মানুষ ও যানবাহনের ভিড়।</p> <p> </p> <p>বিলের সৌন্দর্যের আকর্ষণে কাকডাকা ভোর থেকেই ছুটে চলেছেন তরুণ-তরুণীরা।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালালেও তার দোসররা এখনো আছে : এয়াকুব আলী" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/17/1731816492-e06d061a77a7bde916b8a91163029d41.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালালেও তার দোসররা এখনো আছে : এয়াকুব আলী</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/11/17/1447549" target="_blank"> </a></div> </div> <p>জেলার একমাত্র  ‘লাল শাপলা বিল’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে এ বিল। চা-বাগানের ভেতরে গ্রামীণ প্রকৃতির মধ্যে শাপলার এই অবারিত রঙিন রূপ যে কাউকে মুগ্ধ করে। চা-বাগানের অভ্যন্তরে চা-গাছের শুষ্ক মৌসুমে পানি ধরে রাখার জন্য চা-বাগানের জন্ম থেকেই তৈরি এসব বিলে সারা বছর পানি থাকে। সব চা-বাগানেই এমন বিল রয়েছে। প্রায় এক থেকে ২০ একর জায়গাজুড়ে থাকা এ বিলটিতেই একমাত্র লাল শাপলা দেখা যায়। গত সপ্তাহে বিলে ফুল ফুটেছে এমন প্রচার সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই প্রকৃতিপ্রেমীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন বিলে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকেও আসছেন পর্যটকরা। কাকডাকা ভোরে এবং বিকেলে আনন্দ ভাগাভাগি করছেন ভ্রমণপিপাসুরা। তবে এর মধ্যেই ভালো না লাগার বিষয় হলো এ বিলে যারাই আসছেন, তাদের অধিকাংশই ফুল ছিঁড়ে ছবি তুলছেন। মূলত ছবি তোলার জন্যই ফুল ছিঁড়ে নিচ্ছেন। এমনটি চা-বাগানের শ্রমিকের ছেলে-মেয়েরাও এ ফুল ছিঁড়ে এখন ভ্রমণপিপাসুদের কাছে বিক্রি করছেন।</p> <p>সাধারণত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে এই বিলে লাল শাপলা ফুল ফোটে। এই সময়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অনেক পর্যটক ফুটন্ত লাল শাপলা ফুল দেখতে আসেন। গত বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সরেজমিনে বিলে গিয়ে স্থানীয় কয়েক যুবকের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, হবিগঞ্জ থেকে এসেছেন লাল শাপলা বিল দেখতে। দূরে হওয়ার কারণে সকালে না আসতে পেরে বিকেলে এসেছেন, কিন্তু ফুটন্ত ফুল দেখতে না পেলেও তারা খুশি, বিলটি দেখতে পেরেছেন।</p> <p>চুনারুঘাট শহর থেকে সকালে বিলে যাওয়া দুই যুবক আক্ষেপ করে জানান, এত সুন্দর শাপলা বিল, কিন্তু লোকজন ফুল ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে শুধু ছবি তোলার জন্য। বাগানের চৌকিদার বাধা দিয়েও কাউকে আটকাতে পারছেন না সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইপি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মিজবা উদ্দিন এই ফুলের সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে বলেন, ‘খুব সুন্দর লাল শাপলা বিল, কিন্তু যে যেভাবে পারছে ফুল ছিঁড়ে নিয়ে ছবি তুলছে, এতে সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি প্রকৃতির অনিন্দ্য সুন্দর শাপলা ফুল বংশবিস্তারের ক্ষতি হচ্ছে। ফুল ছেঁড়ার কারণে বীজ হবে না। এতে বিলে আগামীতে কমে যাবে গাছ ও ফুল।’ তিনি সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="কেশবপুরে ২ প্রতিষ্ঠানে লুটপাট-অগ্নিসংযোগের অভিযোগ" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/17/1731817467-d99119ca42e35bfa7fbc7fba9ab1d88a.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>কেশবপুরে ২ প্রতিষ্ঠানে লুটপাট-অগ্নিসংযোগের অভিযোগ</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/11/17/1447555" target="_blank"> </a></div> </div> <p>চা শ্রমিক নেতা রনি গোয়ালা সবাইকে অনুরোধ করেছেন ফুল না ছেঁড়ার জন্য। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য তিনি কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনকে দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানান।</p> <p>দেউন্দি চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক দেবাশীষ দাস টিটো বলেন, ‘অনেক দূর থেকে এখানে লোকজন আসছেন সৌন্দর্য উপভোগ করতে। সবাই ছবি তুলছেন এবং আনন্দ করছেন। কেউ যাতে ফুল না ছিঁড়ে এবং বাগানের ক্ষতি না করে সেই অনুরোধ জানাই।’</p>