<p>যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পর দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য হোয়াইট হাউসে যাওয়ার প্রস্তুতি দ্রুত গতিতেই সারছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি শুরুর অগ্রাধিকারগুলো পরিষ্কার করেছেন এবং এর অনেক কিছু ওয়াশিংটন ও বিশ্বজুড়ে অনেককে বিস্মিত করছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম সপ্তাহে যেসব বিষয় ঘটেছে, তা নিচে তুলে ধরা হলো :</p> <p><strong>বিশ্বস্ত টিম তৈরি</strong><br /> নির্বাচনে জয়ের পর দ্রুতই তিনি তার টপ টিম বা প্রধান দলটি তৈরি করেছেন। মন্ত্রিসভার কয়েকজনের নাম চূড়ান্ত করেছেন তিনি, যাদের জন্য সিনেটের অনুমোদন লাগবে। এ ছাড়া হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা ও কয়েকজন সিনিয়র সহযোগীকে নিয়োগ দিয়েছেন।</p> <p>কিন্তু এটাই সব খবর নয়। যাদের পছন্দ করে নিয়োগ বা মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তা পরিষ্কার ইঙ্গিত দিচ্ছে, ট্রাম্প সরকারে একটি বড় ধরনের ঝাঁকুনি দিতে চান।</p> <p>ট্রাম্প যাকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেছেন, তিনি এমন নীতি তৈরি করবেন বলে বলেছেন, যার মাধ্যমে অনাকাঙ্ক্ষিত সামরিক কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়া হবে।</p> <p>তেমনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়া রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হেলথ এজেন্সিগুলো থেকে দুর্নীতি দূর করবেন এবং ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কিছু বিভাগের পুরোটাই বাতিল করে দেবেন।</p> <p>এ ছাড়া উপদেষ্টা ইলন মাস্ক ও বিবেক রামাস্বামী ট্রাম্পের প্রতিশ্রুত ‘সরকারি দক্ষতা বিভাগের নেতৃত্ব’ দেবেন। ট্রাম্প বলেছেন, এটি সরকারের খরচ কমিয়ে আনার ওপর জোর দেবে।</p> <p><strong>‘বন্ধুত্বপূর্ণ কংগ্রেস’ পাচ্ছেন তিনি</strong><br /> এবার রিপাবলিকানরাই নিয়ন্ত্রণ করছে হাউস ও সিনেট। অন্তত আগামী দুই বছরের জন্য কংগ্রেসের উভয় কক্ষে দলটির সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে।</p> <p>এটা ট্রাম্পের এজেন্ডাগুলো বাস্তবায়নের জন্য সহায়ক হবে। কারণ এখন তিনি সহজেই তার পক্ষে আইন পাস করিয়ে আনতে পারবেন এবং তার নীতিগুলো আইনে পরিণত করার পথ সহজ হবে।</p> <p>তিনি তার প্রথম মেয়াদের শেষ দিকে যেভাবে কংগ্রেসের তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন বারবার, সেটি এবার এড়াতে সক্ষম হবেন তিনি।</p> <p>বিপুলসংখ্যক অবৈধ অভিবাসীদের নিজ দেশে ফিরিয়ে দেওয়া বা আমদানি শুল্ক বাড়ানোর মতো বিষয়গুলোতে তার প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের জন্য রিপাবলিক নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেস ভূমিকা রাখবে।</p> <p><strong>রিপাবলিকান সিনেট</strong><br /> সিনেটের নতুন নেতা নির্বাচনের মধ্য দিয়েই ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রভাবের একটা পরীক্ষা হয়ে যাবে চলতি সপ্তাহেই। তিনি এ বিষয়ে সরাসরি কিছু না বললেও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা এর মধ্যেই কথা বলেছেন, যাতে এ পদের জন্য ট্রাম্পের অনুগত রিক স্কটের নাম এসেছিল।</p> <p>কিন্তু প্রথম রাউন্ডের ভোটেই রিক হেরে গেছেন বরং রিপাবলিকানরা বেছে নিয়েছেন জন থুনেকে। তার সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক খুব একটা সহজ নয়। ফলে সিনেটের অনুমোদনের জন্য ট্রাম্পের যেসব মনোনয়ন আসবে সেগুলো কিছুটা পরীক্ষার মধ্যে পড়তেও পারে।</p> <p>কিছু সিনেট রিপাবলিকান ইতিমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, ট্রাম্প বিচার বিভাগের দায়িত্ব যাকে দিতে যাচ্ছেন, সেই ম্যাট গ্যায়েৎযের বিরোধিতা করবেন তারা।</p> <p><strong>ট্রাম্পের শাস্তি বাতিল হতে পারে</strong><br /> প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বিভিন্ন মনোনয়ন ও নিয়োগের ওপর পূর্ণ দৃষ্টি দিলেও মনে রাখতে হবে, নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আইনি সমস্যাগুলোও অনেকটা দূর হওয়ার পথে। নিউ ইয়র্কে ঘুষ দেওয়ার মামলায় তার যে শাস্তি হয়েছিল, সেটি হয়তো আর কয়েক দিন বহাল থাকবে। এরপর হয়তো এটি চলে যেতে পারে ইতিহাসে।</p> <p>চলতি সপ্তাহেই শাস্তি বাতিলের বিষয়ে একজন বিচারক তার সিদ্ধান্ত দেওয়া পিছিয়ে দিয়েছেন। আগামী সপ্তাহে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।</p> <p>প্রেসিডেন্টের দায়মুক্তির বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রুলিংয়ের কারণে তার সাজা বাতিল হয়ে যাবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্তটি দেওয়ার কথা ছিল।</p> <p>তার শাস্তি কবে বাতিল হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে ২৬ নভেম্বর তার সাজার যে তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেটি বিলম্বিত হয়ে যাবে।</p> <p><strong>চীনকে নিয়ে দৃঢ় অবস্থান</strong><br /> অন্যদিকে বিশ্বকে নিয়ে বাইডেনের চেয়ে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি যে ভিন্ন সেটি গোপন কিছু নয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির ব্যাপক পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা আছে।</p> <p>ট্রাম্পের টিমে অনেকেরই চিন্তা আছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও সামরিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বড় হুমকি হতে যাচ্ছে চীন।</p> <p>পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ট্রাম্পের মনোনয়ন পাওয়া মার্ক রুবিও চীনকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে আগ্রাসী প্রতিপক্ষ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।</p> <p>তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালজ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ‘ঠাণ্ডা যুদ্ধ’ চলছে। জাতিসংঘে তার প্রস্তাবিত স্থায়ী প্রতিনিধি এলিস স্টেফানিক নির্বাচনে হস্তক্ষেপের জন্য চীনকে সরাসরি অভিযুক্ত করেছেন।</p> <p>ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল উত্তেজনাকর। এবার শুল্ক, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ও কথাবার্তায় ট্রাম্পকে মনে হচ্ছে, চীনের বিষয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে আরো শক্ত অবস্থান নেবেন।</p> <p>সূত্র : বিবিসি</p>