<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বয়স হলে মানুষ ভুলে যায়</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এটাই স্বাভাবিক। সাধারণত ৪০-৫০ বছরের পরে মানুষ ভুলে যেতে থাকে। তবে এ ভুলে যাওয়া কিন্তু মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয় না। এটাকে সাধারণ ভুলে যাওয়া বলেই ধরা হয়। কিন্তু মানুষের ভুলে যাওয়া যদি তার স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত করে, তবে সেটিকে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ডিমেনশিয়া</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বলে। ডিমেনশিয়ার অনেক কারণ আছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো আলঝেইমারস ডিজিজ। ডিমেনশিয়ার প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ কারণ দখল করে আছে এটি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্বব্যাপী ডিমেনশিয়ার প্রকোপ কিন্তু অনেক। প্রায় পাঁচ কোটি লোক ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত। এর বেশির ভাগ প্রায় ৬০ শতাংশ কিন্তু নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের মানুষ। এক গবেষণায়য় দেখা গেছে, ৬৫ বছরের পর প্রতি আটজনে একজন স্মৃতিভ্রমে আক্রান্ত হয়। প্রতিবছর প্রায় এক কোটি মানুষ নতুন করে ডিমেনশিয়ায় নাম লেখায়। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৫ সালের মধ্যে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে আট কোটি এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ১৫ কোটি হতে পারে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ডিমেনশিয়া নিয়ে বাংলাদেশে ২০১৯ সালের আগে জাতীয় পর্যায়ে কোনো সমীক্ষা হয়নি। তবে সম্প্রতি জাতীয় নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট (নিনস) এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। এতে দেখা যায়, বর্তমানে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের মধ্যে ডিমেনশিয়ার প্রাদুর্ভাব বা ব্যাপকতা ৮.১ শতাংশ। সংখ্যার বিচারে যা ১১ লাখ। সমীক্ষায় বলা হয়, আগামী ২০৪১ সালে দেশে এসব রোগীর সংখ্যা হবে প্রায় ২৪ লাখ। অর্থাৎ বর্তমান সংখ্যার চেয়েও প্রায় তিন গুণ বেশি। কাজেই আমাদের দেশেও কিন্তু ডিমেনশিয়ার অনেক রোগী আছে। পরিসংখ্যান বলছে, সারা বিশ্বে প্রতি ৬৮ সেকেন্ডে একজন আক্রান্ত হয় আলঝেইমারস রোগে।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শুরুটা ভুলে যাওয়া দিয়ে</span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আলঝেইমারস রোগের শুরু হয় ভুলে যাওয়া নিয়ে। স্মৃতিকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করতে পারি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শর্ট টার্ম মেমোরি এবং লং টার্ম মেমোরি। সকালে কী দিয়ে নাশতা করেছে, এটা মনে রাখতে পারা শর্ট টার্ম মেমোরি; আর কোনো স্কুলে পড়েছিল, কবে এসএসসি পাস করেছিল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এটা লং টার্ম মেমোরি। বেশির ভাগ আলঝেইমারস রোগ শুরু হয় শর্ট টার্ম মেমোরি সমস্যা দিয়ে। যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মোবাইল কোথায় রেখেছে তা খুঁজে না পাওয়া, সকালের নাশতা কি খেয়েছে, তা মনে করতে না পারা, হিসাব ভুল করা। মাঝে মাঝে রাস্তা ভুলে যাওয়ার সমস্যাও হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির এ সমস্যা অনেকেই মেনে নিতে পারে না। পরিবারের অন্যদের চোখে অস্বাভাবিক লাগলেও আক্রান্ত ব্যক্তির চোখে এটা স্বাভাবিক মনে হয়। অনেকে আবার মনে করে, তার সমস্যা হচ্ছে। শতকরা ২০ ভাগ রোগীর স্মৃতির কোনো সমস্যা থাকে না। কথা বলতে গেলে তারা শব্দ খুঁজে পায় না। এ কারণে তারা কথা দ্রুত বলতে গেলে গুছিয়ে বলতে পারে না। একই কথা পুনরাবৃত্তি করতে পারে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়। দেখা দেয় নানাবিধ উপসর্গ। এর সঙ্গে যুক্ত হয় কথা বলার সমস্যা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার অক্ষমতা। তবে লোকজনের সঙ্গে সাধারণ কথাবার্তা চালিয়ে নিতে পারে শুরুতে। প্রথম দিকে এদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা যায় না তাদের সমস্যা আছে। সঙ্গে থাকে আচরণগত সমস্যা। শুরুতে খুব পরিচিত জায়গা ভুলে যায়। স্টাইলিশ কেউ হঠাৎ করে ছেঁড়া কাপড়চোপড় পরা শুরু করে। যে ব্যক্তি সব সময় চুল পরিপাটি করে সাজিয়ে রাখত, তার চুল থাকে উষ্কখুষ্ক। মুড খুব দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে। নিজের ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন থাকে। কথা বলার সমস্যা এসে যুক্ত হতে থাকে। কথা বুঝতে পারে কম। সেই সঙ্গে কথা বলে কম। আক্রান্ত ব্যক্তি তার সমস্যা বুঝতে পারে, তাই সে দুশ্চিন্তা করে। পরিচিত কাউকে চিনতে না পারার কারণে লজ্জিত হয়। ডিপ্রেশন তাকে ঘিরে ধরে। কিন্তু পরে সে বেশ অ্যাগ্রেসিভ হয়ে যায়। যে কাউকে মারধর করতে চায়। তার মধ্যে নানা মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। সে পরিচিতদের অপছন্দ করে, মনে করে তারা তাকে মেরে ফেলবে। যে জীবনসঙ্গীকে ভালোবেসেছে নিজের থেকেও বেশি, শেষ বয়সে এসে তাকেই সন্দেহ করা শুরু করে। রোগ বাড়তে থাকলে যেখানে-সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করে। খাবার গিলতেও ভুলে যায়। এক লোকমা খাবার নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকে। এভাবেই একসময় মৃত্যুর মুখে পতিত হয়।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পরিবারে কেউ আক্রান্ত হলে কি ঝুঁকি বাড়ে?</span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাধারণত বয়স বেশি হলে আলঝেইমারস রোগের ঝুঁকি বাড়ে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, আলঝেইমারস বংশগতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। কম বয়স, বিশেষ করে ৫০ বছরের কমে এ রোগে আক্রান্ত হলে সন্দেহ করা হয় জেনেটিক মিউটেশনের কারণে এ রোগ দেখা দিয়েছে। এমনটি হলে রোগীর অবস্থা দ্রুত খারাপ হয়ে যায়। পরিবারের কেউ আলঝেইমারস রোগে আক্রান্ত হলে ঝুঁকি বেড়ে যায়। নারীদের এই রোগের ঝুঁকি বেশি। ডায়াবেটিস থাকলে ঝুঁকি বাড়ে তিন গুণ। উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে কোলেস্টেরলের আধিক্য, রক্তে হোমসিস্টিন বেশি, মদ্যপান করলে এবং ফলমূল, শাক-সবজি কম খেলে ঝুঁকি বাড়ে।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কম বয়সে ভুলে যাই, আমি কি আলঝেইমারসে আক্রান্ত?</span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা ভুলে গেলেই মনে করি রোগ হয়েছে। কিছু জিনিস ভুলে যেতেই পারি, এটা স্বাভাবিক। আবার বয়স বেশি হলে ভুলে যাওয়া বাড়ে, এটাও স্বাভাবিক। ডিমেনশিয়া তখনই বলে যখন ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক জীবনযাপনে প্রভাব ফেলে। ভুলে যাওয়ার জন্য দৈনন্দিন কাজে বিঘ্ন ঘটে। কম বয়সে ভুলে যাওয়ার রোগ হচ্ছে মানসিক চাপ বা অবসাদ অন্যতম। এ ছাড়া চিকিৎসা করা যায় এমন কিছু রোগেও হতে পারে। তাই দেরি না করে দ্রুত নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নিন।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আছে চিকিৎসা</span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আলঝেইমারস রোগ নির্মূলের কোনো ওষুধ নেই। তার মানে কি এ রোগের চিকিৎসা নেই? আচ্ছা বলুন তো ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ কি নির্মুল হয়? হয় না। ওষুধ খেয়ে রোগগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। আলঝেইমারস রোগটিও এমন। ওষুধ সেবনের মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। এ রোগের চিকিৎসা করা হয় চার ধরনের ওষুধের মাধ্যমে। আমাদের দেশে এ রোগের চিকিৎসার সব ওষুধ পাওয়া যায়। রোগটি কতটা মারাত্মক তা নির্ণয় করে সঠিক ওষুধ শুরু করবেন নিউরোলজিস্ট। শুরুতে কম ডোজের ওষুধ দিতে হয়। এরপর রোগের উন্নতি দেখে ওষুধের ডোজ বাড়াতে হয়। এ রোগের উন্নতি হয় খুব ধীরে। তাই অনেকেই আছে রোগীর উন্নতি না হলে অস্থির হয়ে যায়। একের পর এক চিকিৎসক পরিবর্তন করে। এতে কিন্তু চিকিৎসা ব্যাহত হয়। ওষুধগুলোর দাম একটু বেশি, তবে তা নাগালের মধ্যেই।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পরিবারে আলঝেইমারসের রোগী থাকলে কী করবেন?</span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">♦ </span><span style="font-family:SolaimanLipi">আলঝেইমারসে আক্রান্ত ব্যক্তিটি শিশুর মতো হয়ে যায়, তাই তাদের শিশুর মতো করেই যত্ন নিতে হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">♦ </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পরিবারে খুব হাসিখুশি পরিবেশ রাখার চেষ্টা করতে হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">♦ </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আলঝেইমারস আক্রান্তদের শারীরিকভাবে কর্মক্ষম রাখলে রোগ </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ধীরে চলো নীতি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> মেনে চলে। তাই তাদের নিয়ে বাইরে হাঁটতে যান। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">♦ </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রোগ খুব খারাপ হওয়ার আগেই তার জমিজমা, সম্পদের ব্যবস্থা করতে হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">♦ </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যাদের পরিবারে এ রোগী আছে বা যারা তাদের সেবাযত্ন করে, তাদের মধ্যে মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনটি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিজেকে সময় দিন।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : সহকারী অধ্যাপক</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি বিভাগ</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স (নিনস)</span></span></span></span></p>