<p>বন্যায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার টমেটো চাষিরা নিঃস্ব হয়ে গেছেন। কিভাবে ঘুরে দাঁড়াবেন, সংসার চালাবেন, তা জানেন না অনেকে।</p> <p>জানা যায়, উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের আট গ্রামের শতাধিক চাষি গ্রাফটিং পদ্ধতিতে লাগানো টমেটোর চারা বিক্রি করে সংসার চালান। আবার চাষও করেন। উৎপন্ন টমেটো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি হয়। কিন্তু সম্প্রতি বন্যায় উপজেলার ১০ গ্রামের ৩৫৪ জন চাষির প্রায় ৩২ লাখ টমেটোর চারা মাঠে নষ্ট হয়েছে। সব মিলিয়ে দুই ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক চাষির ক্ষতির পরিমাণ ছয় কোটি টাকা বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।</p> <p>উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের চার শতাধিক চাষি ২০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। বন্যায় নষ্ট হয়েছে ১২ হেক্টর জমির ফসল। ক্ষতির হার ৫৭ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রাফটিং পদ্ধতিতে লাগানো টমেটোর চারা।</p> <p>সরেজমিন আদমপুর ও ইসলামপুর ইউনিয়নের মকাবিল, কোনাগাঁও, বনগাঁও গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, টমেটোর মাঠ ফাঁকা। চারদিকে পানি জমে আছে। পানিতে চারাগুলোর পলিথিনের ভেতরের মাটি সরে গেছে। অনেক জমি পলি মাটিতে সারিবদ্ধ গ্রাফটিং টমেটোর জন্য তৈরি করা ঘর ভরাট হয়ে পড়ে আছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের চোখেমুখে দুচিন্তা।</p> <p>চাষিরা জানান, অন্তত ৪০ লাখ টমেটোর চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি মাঠের পাঁচ হেক্টর জমির চারা নষ্ট হয়ে গেছে। গ্রাফটিং পদ্ধতির প্রতিটি চারা বিক্রি হয় আট টাকায়। এই হিসাবে চার কোটি টাকার চারা এবং মাঠে রোপণকৃত যে টমেটোক্ষেত নষ্ট হয়েছে, তার বাজারমূল্য তিন কোটি টাকা। প্রতি কেজি টমেটো পাইকারি দামে ৭০ থেকে ৮০ টাকা এবং খুচরা ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়। একটি গাছে গড়ে ছয়-সাত কেজি ফলন হয়।</p> <p>বনগাঁও গ্রামের কৃষক রাশিদ মিয়া ও খালিক মিয়া জানান, ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ জমিতে ধারদেনা করে টমেটো চাষ করেছেন তাঁরা। বন্যায় সব শেষ করে দিয়েছে। এখন নিঃস্ব অবস্থায় আছেন তাঁরা। </p> <p>একই গ্রামের জাবের মিয়া ও সাদ উদ্দিন জানান, ১২০ শতাংশ জমির টমেটোর চারা পচে গেছে তাঁদের। এই টমেটো চাষ করে সারা বছরের জীবিকা নির্বাহ করতেন তাঁরা। এখন কিভাবে ঋণ পরিশোধ ও সংসার চালাবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।</p> <p>ওমর মিয়া বলেন, ‘আড়াই লাখ টাকা খরচ করে টমেটোর নার্সারি করেছি। যাদের কাছে চারা বিক্রি করি, তাদের থেকে অগ্রিম টাকা নিয়েছিলাম। বন্যায় সব ডুবে গেছে। আশা ছিল ১৫ লাখ টাকার চারা বিক্রি করতে পারব। কিন্তু এখন মাঠ ফাঁকা। কিভাবে দেনা পরিশোধ করব আর সংসার চালাব, তা নিয়ে চিন্তায় আছি।’</p> <p>স্থানীয় কৃষি গবেষক আহমদ সিরাজ বলেন, ‘বনগাঁও গ্রামের ঘরে ঘরে তৈরি হয় গ্রাফটিং টমেটোর চারা। নার্সারি করে চারা উৎপাদন ও টমেটো চাষ গ্রামের মানুষের আয়ের বড় উৎস। বনগাঁওয়ের মতো উপজেলার অনেক গ্রামে বেগুনের চারার সঙ্গে টমেটোর গ্রাফটিং চাষ হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। টমেটো চাষে অনেকের ভাগ্য বদলে গেছে। এ বছর ব্যাপক হারে চারা উৎপন্ন ও ফলন হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বন্যায় তাদের সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। শত শত চাষি নিঃস্ব হয়েছেন। ক্ষতি পুষিয়ে মাঠে ফেরার আর্থিক অবস্থা নেই কারো। ’</p> <p>উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের তথ্য মতে কমলগঞ্জ উপজেলায় ২০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। শুধু চাষি নন, টমেটো খামারে খণ্ডকালীন কর্মসংস্থান হয়েছিল কয়েক শ মানুষের। বন্যায় ফসল হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন সবাই। পর্যায়ক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে প্রণোদনা ও কৃষি উপকরণ দিয়ে সহায়তা করার চেষ্টা চালিয়ে যাব আমরা।’</p> <p> </p>