<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত না করে খুলনায় গ্যাসনির্ভর ৮০০ মেগাওয়াট রূপসা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়েছেন খুলনা নাগরিক কমিটির নেতারা। আট হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণে গৃহীত প্রকল্পটি আদৌ কাজে আসবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তাঁরা। এমনকি বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিদর্শনে এসে এ প্রকল্পের অনুমোদন, অনিয়ম ও দুর্নীতিতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন বর্তমান জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নর্থ-ওয়েস্ট জোন পাওয়ার জেনারেশন কম্পানি লিমিটেডের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, খুলনার শিল্পাঞ্চল খালিশপুরের রূপসায় ৫০ একর জমির ওপর বিগত আওয়ামী লীগ সরকার রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট (সিসিপিপি) প্রকল্পটি গ্রহণ করে। ২০১৮ সালে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শুরু হয়। চলতি বছরের জুন মাসে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। গত জুলাই পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৮১.৯২ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি ৪৬.৮৭ শতাংশ। বাণিজ্যিক উৎপাদনের তারিখ ২০২৭ সালের জানুয়ারি। ৮৮০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হবে প্রাকৃতিক গ্যাস অথবা এলএনজি। অন্যদিকে এই প্রকল্পে এডিবি, আইইডিবি ও জেএফপিআরের ঋণ রয়েছে পাঁচ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা। আর সরকার রাজস্ব তহবিল থেকে বিনিয়োগ করেছে দুই হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। প্রকল্পটিতে গ্যাস সরবরাহের জন্য সুন্দরবন গ্যাস কম্পানি লিমিটেডের (এসজিসিএল) সঙ্গে চলতি বছরের ২৮ মার্চ একটি চুক্তি হয়। ওই চুক্তিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শীতকালে টেস্টিং-কমিশনিংয়ের জন্য এসজিসিএল গ্যাস সরবরাহ করার কথা সুন্দরবন গ্যাস কম্পানির। নির্ধারিত সময়ে গ্যাস পাওয়া গেলে আগামী ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কমিশনিং করা যাবে। তবে ২০২৭ সালের জানুয়ারি থেকে বেইস লোডে বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার জন্য নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করা হবে বলে চুক্তিতে বলা হয়েছে। এ কারণেই বাণিজ্যিক উৎপাদনের সময় রাখা হয়েছে ২০২৭ সালে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অবশ্য সুন্দরবন গ্যাস কম্পানির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, রূপসা বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্যাসের ভরসা মূলত ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র। খুলনায় গ্যাস পাইপলাইন থাকলেও ভোলা থেকে পটুয়াখালীতে নদীর নিচ দিয়ে গ্যাসলাইন স্থাপনের বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত। ফলে গ্যাসপ্রাপ্তি ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনে অনিশ্চয়তা রয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">খুলনা নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জ্বালানির নিশ্চয়তা না নিয়ে এমন একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন অপরিকল্পিত ও রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। বৈদেশিক ঋণনির্ভর প্রকল্প হওয়ায় দেশের দায় বাড়বে। তাই বিষয়টি তদন্ত করা উচিত।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) খুলনার সভাপতি কুদরত-ই খুদা সাংবাদিকদের বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাষ্ট্রীয় প্রকল্পটিগুলোতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত জরুরি। এ ক্ষতির টাকা জনগণের পকেট থেকে যাবে। তাই জ্বলানি খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। বাতিল করতে হবে অব্যবহৃত বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ ও ভাড়ার চুক্তি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিদর্শনকালে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">খুলনায় প্রায় আট হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পাওয়ার প্লান্ট করা হয়েছে, যা জাতীয় জিডিপিতে যুক্ত হয়েছে। জিডিপি বাড়লেও গ্যাসভিত্তিক এ পাওয়ার প্লান্ট শিগগির বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। আমরা তো অনেক আগে থেকেই জানতাম বাংলাদেশে গ্যাসের রিজার্ভ কমে যাবে, এখান থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ সম্ভব হবে না। বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে আট হাজার কোটি টাকা খরচ হলো, কিন্তু মানুষ এটা থেকে কোনো উপকার পাচ্ছে না। এটাই হলো উন্নয়নের ভ্রান্তি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উপদেষ্টা আরো বলেন, এই পাওয়ার প্লান্টের কাছে শুধু ভোলায় গ্যাস আছে, যা অপর্যাপ্ত। এখানে প্রয়োজন ১৪০ এমএমসিএফ গ্যাস, কিন্তু ভোলায় অতিরিক্ত আছে ১০০ এমএমসিএফ গ্যাস। তিন বছর সময় নিয়ে নতুন পাইপলাইন করে এ গ্যাস খুলনায় আনলেও সেটা পর্যাপ্ত হবে না। তবু এই পাওয়ার প্লান্টকে কিভাবে আংশিকভাবে সচল করা যায়, সে বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।</span></span></span></span></p> <p> </p>