<p>ঢাকা থেকে সিলেট যাওয়ার চার লেনের জাতীয় মহাসড়কের একটি অংশের নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে গেছে। প্রকল্পটি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) চুক্তির আওতায় বাস্তবায়নাধীন ছিল। ফলে প্রকল্পের ঠিকাদার ও গুরুত্বপূর্ণ প্রকৌশলীরা ছিলেন ভারতীয় নাগরিক। দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক অবস্থায় ভারতীয় ঠিকাদাররা কাজ বন্ধ করে নিজ দেশে ফিরে গেছেন। তাই নির্মাণকাজে অগ্রগতি নেই।</p> <p>ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত অংশটি মূলত ভারতীয় অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে। এটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের অংশ হলেও আলাদা একটি প্রকল্প। এই অংশে ভারতীয়রা দ্রুত কাজে না ফিরলে সরকারি অর্থায়নে বাকি কাজ শেষ করা হতে পারে।  কাজ বন্ধ থাকায় নির্মাণ এলাকায় লাখো সড়ক ব্যবহারকারীর দুর্ভোগ বেড়েছে।</p> <p>এমন পরিস্থিতিতে কিভাবে নির্মাণকাজ এগিয়ে নেওয়া যায় তা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়কে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। জনভোগান্তি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া চার লেন মহাসড়কের যেসব অংশে ভাঙা রয়েছে সেগুলো মেরামতের ব্যাপারে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।</p> <p>জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এক ধরনের পরিস্থিতি যেহেতু তৈরি হয়েছে তাই ঠিকাদার চলে গেছেন। তাঁদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। তাঁরা দ্রুতই চলে আসবেন। তারপর কাজ শুরু হবে।</p> <p>গত ১৯ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে দেওয়া এক চিঠিতে বলা হয়, দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সব ভারতীয় নাগরিক নিজ দেশে ফেরত চলে গেছেন। ফলে বর্তমানে এই রাস্তার কাজ বন্ধ রয়েছে। এই অংশে দ্রুত মেরামতকাজ করা না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। জনদুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনা করে ঢাকা-সিলেট ও কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহাসড়কের অংশের রাস্তা দ্রুত মেরামতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।</p> <p>সাউথ এশিয়া সাব রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশনের (সাসেক) ঢাকা-সিলেট করিডর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক এ কে মোহাম্মদ ফজলুল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রকল্পটি এলওসি চুক্তিতে বাস্তবায়ন করা হচ্ছিল। ভারতীয় ঠিকাদাররা এখন দেশে নেই। মন্ত্রণালয় থেকে শুক্রবার প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। নিশ্চয়ই দ্রুতই সমাধানের পথ বের করা হবে।’</p> <p>এদিকে আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া ধরখার পর্যন্ত অংশে বেশির ভাগ জায়গায় এক দিকের দুই লেনের কাজ শেষ হয়েছে। যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে ওই সব জায়গা খুলে দেওয়ায় অনেকটা স্বস্তি নিয়েই চলা যাচ্ছে। কিন্তু যেসব স্থানে এখনো একদিকেও কোনো কাজ হয়নি এবং একদিকে কাজ হলেও সড়ক সংযোগস্থলের কাজ বাকি রয়েছে, সেসব জায়গায় বেশ ভোগান্তির পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে সামান্য একটু বৃষ্টি হলেই পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে।</p> <p>সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর বাইপাস, ঘাটুরা বিরাসার, পৈরতলা, রাধিকা ও উজানিসার এলাকায় মহাসড়কের এক পাশে খানাখন্দ থাকায় অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। বিশেষ করে সেতুর সংযোগস্থল এবং নতুন ও পুরান সড়কের সংযোগস্থলে ঝুঁকি বেশি।</p> <p>চার লেন জাতীয় মহাসড়ক উন্নীত করার প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ দুটি অংশ ঢাকা-সিলেট ও কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক। প্রকল্পের এই অংশের রাস্তা ব্যবহার করে প্রতিদিন হাজারো যাত্রী ও পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করে। কিন্তু প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত এই দুটি সড়কের বেশ কিছু অংশে এখনো নতুন রাস্তা নির্মাণ শেষ না হওয়ায় জনভোগান্তি সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে।</p> <p>এক প্রশ্নের জবাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, সড়কের কাজে যুক্ত ভারতীয়রা চলে গেছে। পরে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা চারলেন সড়কের বাকি কাজগুলো সরকারি অর্থায়নে করার অনুমোদন দিয়েছেন। তাই এখন অতি দ্রুতই মেরামতকাজ শুরু হবে।</p> <p> </p> <p> </p>