<p>জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক বিভাজক (রোড ডিভাইডার) এখনো ঠিক করা হয়নি। কোনো কোনো স্থানে সড়ক বিভাজক নেই। এতে যত্রতত্র রাস্তা পার হচ্ছে পথচারীরা। রাস্তা পারাপারে কোনো বাধা না থাকায় কমেছে ফুট ওভারব্রিজের ব্যবহার। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে যানজট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক বিভাজক দ্রুত ঠিক করা বা নতুন করে বসানো না হলে সড়কের পরিবেশ খারাপ হওয়ার সঙ্গে ফুট ওভারব্রিজগুলোর ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।</p> <p>নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আদিল মোহাম্মদ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশে একটা বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছে। তবে আমরা এখনো নিজেদের পরিবর্তন করতে পারিনি। রোড ডিভাইডার না থাকায় মানুষ যেখান দিয়ে পারছে রাস্তা পার হচ্ছে; হঠাৎ করে বাস, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের সামনে চলে আসছে। এতে করে দুর্ঘটনা বাড়ছে। হয়তো বড় ধরনের কোনো কিছু না ঘটায় এখনো আমরা উপলব্ধি করতে পারছি না। পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটা সময়ের ব্যাপার।’</p> <p>গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ৯টার দিকে নতুনবাজার ফুট ওভারব্রিজের নিচে প্রচণ্ড যানজট। ফুট ওভারব্রিজের নিচের দুই পাশের অন্তত ২০০ ফিটের মধ্যে পথচারীরা নিজেদের ইচ্ছামতো বা হাত উঁচু করে রাস্তা পার হচ্ছে। অনেকে হাত উঁচু করারও প্রয়োজনবোধ করছেন না। এতে করে কোকা-কোলার দিক থেকে আসা যানবাহনগুলো এসে আটকে যাচ্ছে। এই সড়কের প্রায় পুরোটার একই অবস্থা। ফুটপাতের ব্যাগ বিক্রেতা আলী আহসান বলেন, ‘আগে ফুট ওভারব্রিজের ওপরে ব্যাগ বিক্রি করতাম। এখন নিচে নাইমা আইতে হইল। মানুষ এহন ওপরের চাইতে নিচে দিয়াই বেশি যায়।’</p> <p>রাস্তা পার হচ্ছিলেন ইলিয়াস নামের এক ব্যক্তি। কেন এভাবে ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সব সময়তো ওপর দিয়াই যাই। আজকে একটু তাড়া আছে, তাই নিচ দিয়া আসলাম।’</p> <p>উত্তর বাড্ডায় সুবাস্তু নজর ভ্যালী মার্কেটের সামনের সড়কেও পথচারীদের কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে রাস্তা পার হতে দেখা যায়। এই অংশে শিক্ষার্থীরা কিছুদিন আগে সুতলি দিয়ে বাধা (সড়ক বিভাজক) তৈরি করলেও সেটি এখন নেই। সড়ক বিভাজকের কিছু জায়গায় গাছ লাগিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গাছগুলোর বেশির ভাগই উপড়ে ফেলা হয়েছে। রামপুরা ব্রিজ অংশের সড়কেরও একই অবস্থা।</p> <p>রামপুরা বাজার এলাকায় দেখা যায়, কাঁচাবাজারের পাশের সড়কে সড়ক বিভাজক একেবারেই নেই। একটি অংশে সড়ক বিভাজকের উঁচু জায়গা পরিণত হয়েছে সমান জায়গায়। এই স্থান দিয়ে পার হচ্ছে মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ ছোট যানবাহন। দুই দিক থেকেই উল্টোপথে হঠাৎ হঠাৎ যানবাহন পার হওয়ায় চলমান গাড়িকে এসে থেমে যেতে হচ্ছে। কেন এভাবে পার হচ্ছেন, জানতে চাইলে এক রিকশাচালক বলেন, ‘এখান দিয়া পার না হইলে আবুল হোটেল ঘুইরা আসতে হইব। অনেক জ্যাম থাহে। এ জন্য এ জায়গা দিয়াই পার হয়ে গেলাম।’</p> <p>রাজধানীর শুধু এই সড়কের (কুড়িল বিশ্বরোড থেকে) গুলিস্তান পর্যন্ত নয়, একই অবস্থা মোহাম্মদপুর, ধানমণ্ডি, আজিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কের।</p> <p>সড়ক বিভাজক দ্রুত স্থাপনের বিষয়ে কোনো উদ্যোগ আছে কি না জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে আগেই এসেছে। ক্ষতিগ্রস্ত রোড ডিভাইডার সংস্কারে আমাদের কার্যক্রম দ্রুত শুরু হবে। এরই মধ্যে অফিশিয়াল কাজ চলছে। দরপত্র আহ্বানসহ বেশ কিছু বিষয় এগিয়েছে। যেহেতু নাগরিকদের নিরাপত্তার একটি বিষয়, তাই আমরা দ্রুত করার চেষ্টা করছি। তবে যেহেতু মানুষ সচেতন হলে ঝুঁকি কম, তাই আগে তাদেরই সচেতন হতে হবে।’</p> <p> </p>