<p>  <span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt">ঢাকার প্রধান সমস্যা জনসংখ্যার আধিক্য। বিশ্বখ্যাত অর্থনৈতিক সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট প্রতিবছর প্রধান প্রধান শহরের বাসযোগ্যতা মূল্যায়ন করে থাকে। মূল্যায়নের পাঁচটি মাপকাঠি আছে। সেগুলো হলো নাগরিকের</span>—<span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"> ১. নিত্যনৈমিত্তিক স্থিতিশীলতা ২. স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ ৩. সংস্কৃতিচর্চা ও পরিবেশ ৪. শিক্ষার সুযোগ এবং ৫. অবকাঠামো। ১০ বছর আগে ২০১৪ সালে দ্য ইকোনমিস্ট</span>-এর বাসযোগ্যতার মাপকাঠিতে ঢাকার অবস্থান ছিল সর্বনিম্ন। এটা অনায়াসে ধরে নেওয়া যায় ঢাকা অচল শহর। কোনো কিছু সহজে নড়ে না। বাসযোগ্য করে তুলতে হলে নিদেনপক্ষে গড় অবস্থানে আনতে হবে।</p> <p><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt">ঢাকার আয়তন ৩০০ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২৩ হাজার ২৩১ জন। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে এক হাজার ১৪৪ জন। বাংলাদেশ এবং ঢাকা শহরের ঘনত্বের মাঝে বিস্তর ফারাক। যদি ঢাকার জনসংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব হতো</span>, তাহলে ঢাকার বাসযোগ্যতায় কিছুটা উন্নতি হতো। অনুমান যদি সঠিকও হয়ে থাকে, অর্ধেক মানুষ তো বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেওয়া যায় না! বাংলাদেশটিকে কী বিকেন্দ্রীকরণ করা যায় না? বিভাগগুলোর আদলে আটটি প্রদেশ? তাহলে বাংলাদেশের ছোট-বড়, গরিব-ধনী মানুষ নিজ নিজ প্রদেশে অবস্থিত আদি বাসস্থানে নতুন করে সংসার পাতা বিবেচনায় নিতে পারত। তাহলে তারা বেশ কতগুলো সুবিধা পেতে পারত। সংসার খরচ হ্রাস পেতে পরত। ছেলে-মেয়েদের পড়ার খরচও। ক্ষেত্র বিশেষে নিজের ক্ষেতের দেখাশোনা ও সেই ক্ষেতের ফসল ভোগ করারও সুযোগ পেতে পারত। আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে আগের মতো আনন্দঘন পরিবেশে বসবাস করার সুযোগ থাকত। কোনো প্রশাসনিক, আইনি বা অন্য কিছুর জন্য জনগণকে কালে-ভদ্রে ঢাকামুখী হতে হবে হয়তো। তাহলে তারাও এক বড় ঝামেলা থেকে রেহাই পেত।</p> <p><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><img alt="ঢাকা শহরে যানজট নিরসনের উপায়" height="300" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/10.October/02-10-2024/4--2-10-2024.jpg" style="float:left" width="500" /></span>তবে এমন একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে ঢাকার ৯১টি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডওয়ারি ২ শতাংশ নাগরিক থেকে তাদের মতামত গ্রহণ করে বিকেন্দ্রীকরণ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে। এ দায়িত্ব বাংলাদেশ সেনসাস ব্যুরোর ওপর অর্পণ করা যেতে পারে। কাজের মেয়াদকাল তিন মাস। এদের মতামতের ওপর নির্ভর করছে প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ।</span></p> <p><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt">বিকেন্দ্রীকরণ বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে যে এ খাতে এত অর্থ বিনিয়োগ করা কি সম্ভব</span>? তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেওয়া হয়, প্রতিটি প্রদেশের ৭০ জন আইন পরিষদ সদস্যের জন্য সুযোগ-সুবিধা, বাড়ি, গাড়ি, আইন পরিষদ ভবন, প্রাদেশিক সচিবালয় ভবন প্রয়োজন পড়বে। প্রতিটি প্রদেশে ১০ থেকে ১৫ জন মন্ত্রী হবেন। আরো তো আছে, জাতীয় আইন পরিষদ সদস্য ৩৫০ জন। তাঁদের বাড়ি-গাড়ি এসব মিলিয়ে যে ব্যয়ভার দাঁড়াতে পারে তা বহন করার সক্ষমতা অন্তর্বর্তী সরকারের আছে বলে মনে হয় না।</p> <p><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt">এমন হতাশাজনক কথার বিপরীতে একটি গল্প বলি। বয়স আমার ১০। সাল হয়তো ১৯৬০ হবে। পকেটে পয়সা নেই। কিন্তু কী ভেবে হেঁটে হেঁটে সচিবালয়ের প্রধান সড়ক আব্দুল গণি রোডে চলে এসেছি। সচিবালয় ফটকের একটি পাল্লা খোলা ছিল। দেখলাম বড় একটি দোচালা ঘর। কর্মচারীদের মাথার ওপর ফ্যান নেই। ঝুলছে ব্রিটিশ আমলের হাতে</span>-টানা পাখা। বুঝলাম, বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। চালাঘরটির পূর্ব পাশে কয়েকটি চার-পাঁচতলা ভবন সড়কটির ওপর। এসব চালাঘর ভবনাদির সমন্বয়ে তৎকালীন সচিবালয় চলত। তারপর  ২০ তলা ভবন নির্মিত হয়েছে। এভাবে সামর্থ্য অনুযায়ী সচিবালয় গড়ে উঠেছিল। তাতে কি কোনো কাজ আটকে ছিল। তাই এসব  ওজর-আপত্তি  ধোপে টিকবে না। আমাদের কি স্মরণ আছে রাষ্ট্রপতি এরশাদ অর্ধনির্মিত জাতীয় আইন পরিষদ সচিবালয় নির্মাণকাজ পূর্ণ করার আগে কোথায় এই পরিষদ অধিবেশন বসত?</p> <p><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt">একদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করে যাবে। অন্যদিকে বিকেন্দ্রীকরণ কাজও পাশাপাশি চলবে। প্রথমে কাঠামোর নকশা প্রণয়ন</span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, পরে বাস্তবায়ন। এ কাজ সময়সাপেক্ষ কাজ। ইদানীং বিভাগীয় শহরগুলোর বেশ উন্নয়ন লক্ষ করা যাচ্ছে</span></span><span dir="ltr" lang="HI" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ।</span></span><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> তাই বিকেন্দ্রীকরণের জন্য অবকাঠামো বাস্তবায়নসংক্রান্ত কাজ আপাতত স্থগিত রেখে প্রাদেশিক আইন পরিষদ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, প্রাদেশিক সচিবালয়ের সমপরিমাণ ফ্লোর স্পেস ভাড়া এবং জনবলের জন্য আসবাব সংগ্রহ সাপেক্ষে প্রাদেশিক সরকার পত্তনের কথা ভাবা যেতে পারে। বিকেন্দ্রীকরণ প্রকল্প সফল হলে বলা যেতে পারে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাপও মরেছে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, লাঠিও ভাঙেনি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। অর্থাৎ তেমন একটা বিনিয়োগও করতে হলো না</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, বিকেন্দ্রীকরণও হয়ে গেল, ঢাকা শহরও যানজটমুক্ত হলো। </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এক ঢিলে তিন পাখি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">।</span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> : প্রধান প্রকৌশলী (অব.) ও পরিচালক প্রকৌশল বিভাগ, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন আগারগাঁও, ঢাকা</span></span></span></span></span></p> <p> </p>