<p>একটি হত্যাকাণ্ডের জেরে মামলার আসামি হয় এলাকার নিরীহ মানুষ। তাদের কেউ কৃষিকাজ করে, কেউ-বা দিনমজুর। আসামি হয়ে হাজত খেটে জামিনে বের হয়ে এলেও ঘরে ফেরার ভাগ্য হয়নি ভুক্তভোগী সেসব মানুষের। এ ছাড়া হামলার ভয়ে বাড়িঘর ফেলে পথে পথে ঘুরছে একই গ্রামের প্রায় ২০০ পরিবারের সদস্যরা।</p> <p>ঘটনাটি নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পিরোলী গ্রামের। ২০২৩ সালের ২০ জুলাই ওই গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে খুন হন যুবলীগকর্মী আজাদ শেখ (৩০)। ওই হত্যাকাণ্ডের পর থেকে মানুষগুলো গ্রামের ভিটামাটিছাড়া। গত ১৫ এপ্রিল পুলিশ সুপারের কাছে বাড়িঘরে ফেরার আকুতি নিয়ে তাঁর কার্যালয়ে যায় ভুক্তভোগীরা। তারা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করে। পরে পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত আবেদন করে।</p> <p>পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, পিরোলী গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বাবু শেখ ও শহীদুল মোল্যা গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব। ওই দ্বন্দ্বের জেরে খুন হন যুবলীগকর্মী আজাদ শেখ (৩০)। তিনি বাবু শেখ গ্রুপের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ওই ঘটনায় ২০ জনকে আসামি করে মামলা করেন আজাদের বড় ভাই সাজ্জাদ শেখ। জেলা যুবলীগ ও কেন্দ্রীয় যুবলীগ নড়াইলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে দ্রুত ঘটনার বিচার দারি করে। এদিকে আজাদ হত্যা মামলার ছয় আসামি ছাড়া বাকি সবাই আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। তবে জামিনের পরও তাঁরা ঘরে ফিরতে পারছেন না।</p> <p>সূত্র জানায়, এ হত্যাকাণ্ডের জেরে নিহতের দলীয় প্রতিপক্ষ ২০ জন আসামি হলেও গ্রামের প্রায় ২০০ পরিবারের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে পরিবারগুলোর সদস্যদের গ্রামছাড়া করা হয়। সেই থেকে বাড়ি ঘরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে না পেরে দীর্ঘ ৯ মাস ধরে পরিবার-পরিজনসহ পথে পথে মানবেতর দিন পার করছে।</p> <p>পিরোলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জারজীদ মোল্যা বলেন, ‘২০০ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে। জমিজমাও চাষ করতে পারছে না। আমরা চেষ্টা করছি তাদের বাড়িতে তুলে দেওয়া যায় কিনা। পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।’</p> <p>এ ব্যাপারে নড়াইলের পুলিশ সুপার মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘এটি ৯ মাস আগের একটি খুনের ঘটনা। নড়াইলের দীর্ঘদিনের রীতি হলো, আসামিপক্ষের বাড়িঘর ভাঙচুর করা। আদালতে মামলা চলমান। আদালত যে রায় দেবেন, সেটাই চূড়ান্ত হবে। কিন্তু পুলিশ থাকতে জামিনে থাকা আসামিরা বাড়িতে ঢুকতে পারবে না—এটা আমরা মেনে নেব না। অচিরেই তাদের বাড়িতে তুলে দেওয়ার  ব্যবস্থা করব।’</p>