<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সংবিধান সংস্কারের মাধ্যমে একটি বিষয় নিশ্চিত করা হোক যে পাঁচ বছর পর পর জনগণ তাদের স্বাধীন-সার্বভৌম ক্ষমতা যেন প্রয়োগ করতে পারে। সংবিধান হতে হবে গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিতের। একই সঙ্গে সংবিধানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মৌলিক মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে ক্ষমতা, শাসনব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নিতে পারে কি না সে বিষয়টিও ভেবে দেখা দরকার। তবে বিপ্লব যখন সফল হয়েছে তখন সংবিধান অকেজো হয়ে গেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক সেমিনারে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকরা এসব কথা বলেন। আইন, আদালত ও মানবাধিকার বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ল রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) এই সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে সংবিধান সংশোধনের খসড়া প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাবেক সভাপতি সালেহ উদ্দিন। এতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা এবং প্রচলিত পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচন, আনুপাতিক হারে জাতীয় পরিষদ নির্বাচন এবং জাতীয় পরিষদে ২০০ ও সংসদে ৩০০ আসনের ব্যবস্থা রাখা, রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীদের কেউ দুই মেয়াদের বেশি নির্বাচিত না হওয়া, জাতীয় পরিষদের নির্দলীয় সদস্যদের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন এবং সাংবিধানিক আদালত ও নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠনসহ বেশ কিছু প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সেমিনারে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা এখন পর্যন্ত বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে রয়েছি। এই সরকারের জায়গা থেকে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নিতে পারবে কি না সেটা ভেবে দেখা দরকার।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার আহবান জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আপনারা সংস্কারের মাধ্যমে একটা জায়গা নিশ্চিত করুন। পাঁচ বছর পর পর জনগণ যাতে স্বাধীন-সার্বভৌম ক্ষমতা (ভোটাধিকার) প্রয়োগ করতে পারে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য যা করণীয়, তা করলেই আমার মনে হয় সেই সংবিধান সার্বভৌম হবে। সেই সংবিধানে দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হবে। সেই সংবিধান আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার, মৌলিক মানবাধিকার, মৌলিক অধিকারসহ যা যা প্রত্যাশার জায়গা আছে, সব নিশ্চিত হবে। এখানে (নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে) যদি গরমিল থাকে, ভোটের অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া না হয়, আপনি যতভাবেই প্রতিষ্ঠানকে ঢেলে সাজান না কেন, কোনো প্রতিষ্ঠান ঠিকভাবে কাজ করবে না। যেমনটা করেনি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো, এমনকি সুপ্রিম কোর্টও; যা রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হতে দেখেছি। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য একমাত্র পথ হলো জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। তাহলেই গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিচারপতি এম এ মতিন বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী পুরোপুরি বাতিল করতে হবে। পুনর্বহাল করতে হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। তবে এই সরকারব্যবস্থায় বিচার বিভাগের কাউকে যেন না রাখা হয়। তা করলে বিচার বিভাগের সামনে মুলা ঝোলানো হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি বলেন, আদি সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ হুবহু প্রতিস্থাপন, উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে কমিশনের বিধান করতে হবে। এটি করা সম্ভব হলে বিচার বিভাগে রাজনৈতিকীকরণ বন্ধ হবে। বিচারপতি মতিন বলেন, সংবিধানের ৭(ক)(খ) অনুচ্ছেদের তোয়াক্কা করেনি বলেই দেশের সূর্যসন্তানরা আত্মাহুতি দিয়েছে। সংবিধান লঙ্ঘন করেই তো বিপ্লব হয়েছে। যখন বিপ্লব সফল হয়েছে তখন শাসনতন্ত্র অকেজো হয়ে গেছে। কারণ বিপ্লব তো সংবিধানের আওতায় হয়নি। এই বিপ্লব ব্যর্থ হলে বিপ্লবীদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হতো। যারা জীবন দিল, তাদের যে চিন্তা-ভাবনা, তাদের যে চাওয়া-পাওয়া, এগুলো ধারণ করে সংলাপের ভিত্তিতে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা করা এবং একটি নির্বাচন করাই হোক লক্ষ্য। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ও নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সংবিধান শুধু আইনজ্ঞদের বিষয় নয়, এটি জনণের বিষয়। এখানে নাগরিকদের মতামতও থাকতে হবে। সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। ওই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানকে কলুষিত করা হয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এখন সংবিধানের কিছু জায়গায় নতুন চিন্তা-ভাবনা হতেই পারে। তাই মৌলিক মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে কী কী ধরনের প্রতিকার আমরা পেতে পারি, ভবিষ্যতে কী করতে পারি, সেটা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৫৩ বছরে আমরা একটা ভালো নির্বাচনী ব্যবস্থা তৈরি করতে পারিনি। গত ১৫ বছরে আইন করে লুটপাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মৌলিক অধিকার চর্চার মতো পরিস্থিতি তৈরি না করলে কোনো চেষ্টাই ফলপ্রসূ হবে না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অনুষ্ঠানে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাজনীতিবিদরা নাগরিকদের প্রজা মনে করেন। আমরা আসলেই প্রজা হয়ে গেছি। সংবিধান বারবার ব্যর্থ হয়েছে। নাগরিকের ক্ষমতা নেই। সংসদ সদস্যরা যতক্ষণ পর্যন্ত জবাবদিহির আওতায় না আসবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের প্রজা হয়েই থাকতে হবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীরের সভাপতিত্বে সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন এলআরএফের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মিশন। আরো বক্তব্য দেন মাসদার হোসেন মামলার বাদী অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মাসদার হোসেন, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির, ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান, ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায় প্রমুখ।</span></span></span></span></p>