<p><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt">কিছুদিন পরেই ঘরে উঠত কৃষকের শ্রম</span>-ঘাম আর অর্থ ব্যয়ে ফলানো আমন ধান। সেই ধানক্ষেত এখন বন্যার পানিতে ডুবে আছে। কিছু জমি ঢেকে গেছে বানের পানিতে আসা বালু বা পলিমাটিতে। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলে তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোয় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। বন্যা ও জলাবদ্ধতাকবলিত এলাকায় শুধু ধানক্ষেতই নয়, নষ্ট হয়েছে শীতকালীন নানা সবজি। কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, এ পর্যন্ত চার জেলায় প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ঘের প্লাবিত হয়ে ভেসে গেছে মাছ। কালের কণ্ঠের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :</p> <p><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt">লালমনিরহাট</span> : ধানক্ষেত<span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"> নষ্ট হয়েছে। নষ্ট হয়েছে আলু</span>, মরিচ, টমেটো ও লাউয়ের ক্ষেত। বেশি দামে কেনা সার ও বীজ দিয়ে কৃষকরা আবাদ করেছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক বন্যায় জেলার তিস্তাপারের অনেক চাষির এখন দিন কাটছে দুশ্চিন্তায়।</p> <p><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt">জেলা কৃষি বিভাগ বলছে</span>, ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাত এবং উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যায় প্রায় ৮৮১ হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে। এর মধ্যে রোপা আমন রয়েছে ৮৩৩ হেক্টর, বাকিটা শাক-সবজি, মাষকলাইসহ অন্যান্য ফসল।</p> <p><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt">গতকাল কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের রুদ্রেশ্বর</span>, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের চণ্ডিমারী, বাহাদুরপাড়া, গরিবুল্লাহপাড়াসহ তিস্তাপারের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ জমির ফসলের ক্ষেত নষ্ট। চরাঞ্চলের কৃষকের বাড়ির পাশে লাগানো নানা ধরনের সবজিক্ষেতও কাদাপানিতে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে।</p> <p><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt">৮৮১ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে জানিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক</span> (শস্য) সৈয়দা সিফাত জাহান বলেন, ‘<span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt">পানি পুরোপুরি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হবে।</span>’</p> <p><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt">নীলফামারী</span> : নীলফামারীতে তিস্তার বন্যায় ডিমলা, জলঢাকা ও কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০ হেক্টর জমির আমন ক্ষেত। এর মধ্যে ১১ হেক্টর আংশিক এবং ৯ হেক্টর জমির আবাদ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার জেলা কৃষি বিভাগ এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কৃষকদের মতে ক্ষতির পরিমাণ আরো বেশি।</p> <p><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt">ডিমলার খালিশাচাপনী ইউনিয়নের বাইশপুকুর গ্রামের কৃষক আতিয়ার রহমান</span> (৬০) বলেন, ‘<span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt">ঢলের পানির সঙ্গে বালু ও পলিতে ধানের ক্ষেত চাপা পড়েছে। আমার এলাকায় প্রায় ৪৫ বিঘা জমির ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে।</span>’</p> <p><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt">খালিশাচাপানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সহিদুজ্জামান বলেন</span>, ‘<span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt">ইউনিয়নের ছোট খাতা ও বাইশপুকুর গ্রামে বেশ কিছু আমন ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। বাইশপুকুর গ্রামে প্রায় ২০০ ফুট এলাকার আবাদি জমি নদীভাঙনে বিলীন হয়েছে।</span>’</p> <p><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt">ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান বলেন</span>, ‘<span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt">পূর্ব ছাতনাই ও ঝাড়সিংহেরস্বর মৌজার প্রায় ৪০০ বিঘা জমির উঠতি আমন ফসল নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে নদীভাঙন এবং পলিমাটি ও বালুর নিচে চাপা পড়ে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০ বিঘা জমি।</span>’</p> <p><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt">অভয়নগর</span> (যশোর) : টানা বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীর পানি ঢুকে পড়ায় যশোরের অভয়নগরে ভবদহ এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। সৃষ্ট এ জলাবদ্ধতায় কৃষি ও মেস্য প্রায় ১২৯ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এক হাজার ৮২৬ হেক্টর জমির ধান এবং ১৪৭ হেক্টর জমির সবজি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। ভেসে গেছে ছোট-বড় চার হাজার ৯০০ মাছের ঘের। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।</p> <p><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt">গুয়াখোলা গ্রামের কৃষক মহর আলী জানান</span>, বাড়ির পাশে ছয় বিঘা জমিতে আমন ধান রোপণ করেছিলেন। জলাবদ্ধতায় ধানগাছ মরতে শুরু করেছে।</p> <p><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt">উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন কালের কণ্ঠকে বলেন</span>, ‘<span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt">অভয়নগরে গত মৌসুমে আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলেও এবার তা সম্ভব হবে না।</span>’</p> <p><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt">চলিশিয়া ইউনিয়নের কোটা গ্রামের মৎস্যঘের মালিক কামরুজ্জামান তরফদার জানান</span>, তাঁর পাঁচটি মাছের ঘের থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। এ ছাড়া ঘেরপারের সবজিক্ষেতও নষ্ট হয়েছে।</p> <p><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt">উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল হক বলেন</span>, ‘<span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt">পায়রা</span>, চলিশিয়া, সুন্দলী, প্রেমবাগ ইউনিয়নসহ নওয়াপাড়া পৌর এলাকার এক হাজার ২৫০টি পুকুর, দিঘি ও খামারের মাছ ভেসে গেছে। এ ছাড়া তিন হাজার ৬৫০টি ছোট-বড় মাছের ঘেরের একই অবস্থা হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ৯০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।’</p> <p><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt">বগুড়া</span> : সারিয়াকান্দিতে বাঙালি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ১২ হেক্টর জমির ধান ও মাষকলাইক্ষেত তলিয়ে গেছে। বেশি ফসলহানির খবর পাওয়া গেছে সদর ইউনিয়নের নিজতিতপরল, অন্তারপাড়া চর ও হাটশেরপুর ইউনিয়নের দিঘাপাড়া চরে।                                                                                                                                                                                 </p> <p> </p>