<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা জৈন্তাপুরে কেউ প্রথমবার গেলে জনপদটিকে রহস্যঘেরা মনে হতে পারে। কারণ উপজেলাটিতে উল্লেখ করার মতো পশু পালন করা না হলেও সেখানকার হাট-বাজার গরু-মহিষে পূর্ণ। আবার এখানে চিনিকল না থাকলেও প্রতিদিন এই উপজেলা থেকে শত শত ট্রাক চিনি সারা দেশে সরবরাহ করা হয়। হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় নানা ব্র্যান্ডের মাদক। সব কিছু প্রকাশ্যে চললেও প্রশাসন নির্বিকার। এ অবস্থায় বলা চলে জৈন্তাপুর পশু ও চিনি চোরাচালানের অভয়ারণ্য। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সম্প্রতি সরেজমিনে জৈন্তাপুর উপজেলা ঘুরে সেখানে এমন চিত্র দেখা গেছে। বাস্তবে জৈন্তাপুর সীমান্তের অর্ধশতাধিক পয়েন্ট দিয়ে ভারত থেকে অবৈধপথে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে গরু, মহিষ, চিনিসহ প্রায় ৩০ ধরনের চোরাই পণ্য। গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর চার-পাঁচ দিন বন্ধ থাকলেও ফের নতুন করে শুরু হয়েছে চোরাচালান। বর্তমানে পুলিশ অনেকটা নিষ্ক্রিয় থাকায় বিজিবির সোর্স পরিচয়ে জনৈক সমাদ ও আরমান জৈন্তাপুর সীমান্তের চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করছে। </span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জৈন্তাপুর সীমান্তের যেসব পয়েন্ট দিয়ে প্রবেশ করছে চোরাই পণ্য </span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সরেজমিনে জৈন্তাপুর উপজেলা ঘুরে প্রায় অর্ধশত চোরাচালান পয়েন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে উপজেলার নলজুরী খাসিনদী, খাসি হাওর, মোকামবাড়ী, আলুবাগান, মোকামপুঞ্জি, শ্রীপুর, আদর্শগ্রাম, মিনাটিলা, কেন্দ্রী মন্দির, কাঁঠালবাড়ী, কেন্দ্রী হাওর, ডিবির হাওর, ডিবির হাওর (আসামপাড়া), মরিছমারা, ঘিলাতৈল, ফুলবাড়ী, গৌরীশংকর, টিপরাখলা, করিমটিলা, কমলাবাড়ী, ভিতরগোল, গোয়াবাড়ী, বাইরাখেল, হর্নি, ময়না, নয়াগ্রাম, জালিয়াখলা, কালিঞ্জি, লালমিয়া ও অভিনাশের টিলা, জঙ্গিবিল, আফিফানগর, তুমইর, বাঘছড়া, বলিদাঁড়া, রাবারবাগান, ইয়াংরাজা এলাকা অন্যতম।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চোরাচালান বাংলাদেশে প্রবেশ করছে ৪৮ বিজিবির ডিবির হাওর, ১৯ বিজিবির ঘিলাতৈল, ফুলবাড়ী, গৌরীশংকর, টিপরাখলা, কমরাবাড়ী, করিমটিলা, ভিতরগোল, গোয়াবাড়ী ও বাইরাখেল সীমান্ত দিয়ে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অবৈধপথে ভারত থেকে আসছে যেসব পণ্য </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গরু, মহিষ, আর চিনি চোরাচালানের বিষয়টি বেশি আলোচিত হলেও জৈন্তাপুর সীমান্তের উল্লিখিত পয়েন্টগুলো দিয়ে ভারতীয় বিভিন্ন চোরাই পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এর মধ্যে রয়েছে, চা-পাতা, কসমেট্রিকস, শাড়ি, লেহেঙ্গা, ভারতীয় মোটরসাইকেল, আমদানি নিষিদ্ধ শেখ নাছির উদ্দিন বিড়ি, সার্জিক্যালসামগ্রী (আপারেশনসামগ্রী), চেতনানাশক ওষুধসহ বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, হরলিক্স, শিশুখাদ্য, বিস্কুট, চকোলেট, ভারতীয় টাটা গাড়ির টায়ার, টিউবসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। মাদকের মধ্যে রয়েছে ভারতীয় ব্র্যান্ডের সিগনেচার, ওল্ডমং, ম্যাজিক মোমেন্ট, নাম্বার ওয়ান, ব্লেন্ডার প্রাইড অফিসার্স চয়েস, রামানভ মাদক। এ ছাড়া ফেনসিডিল, কসিড্রিল, ইয়াবা, গাজা, আফিম, হেরোইন ইত্যাদি। </span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">চোরাচালানে এগিয়ে জৈন্তাপুরের দুই ইউনিয়ন </span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">স্থানীয় বাসিন্দা ও চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকরা জানান, জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট ও জৈন্তাপুর ইউনিয়নের সীমান্তের পয়েন্টগুলোর যোগাযোগব্যবস্থা বেশ সুবিধাজনক। ফলে সীমান্ত থেকে সহজে পণ্য পরিবহন করা যায়। আবার নৌপথে পণ্য পরিবহনও সহজ। এ ছাড়া এ পাশটায় ভারত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় চোরাকারবারিদের কাছে বেশ পছন্দের। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গরু-মহিষ এই দুই ইউনিয়নের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করাতে বেগ পেতে হয় না। ফলে এই পথ ব্যবহার করে পশু দ্রুত স্থানীয় বাজারগুলোয় নিয়ে যাওয়া যায়। পরে ইজারার ফি দিয়ে গরু-মহিষ বিক্রির রশিদ নিয়ে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে পাঠিয়ে দেওয়া যায়। অবশ্য এর জন্য সোর্স ও লাইনম্যানদের মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হয়। মাঝে মধ্যে বিজিবির অভিযান বা মামলা দেখাতে </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সিজার চুক্তি</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তে কিছুসংখ্যক গরু-মহিষ আটক করা হয়। </span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সরকার পতনের পর নিয়ন্ত্রণের হাতবদল </span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">চোরাকারবারি, চোরাই পণ্য পরিবহন শ্রমিক এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত আগস্টে সরকার পতনের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা, সীমান্ত বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে মোটা অঙ্কের চাঁদার বিনিময়ে চোরাচালান হয়ে আসছিল। তবে আগস্ট অভ্যুত্থানের পর এই চিত্র পাল্টে যায়। বর্তমানে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) নাম ব্যবহার করে জৈন্তাপুর সীমান্তের চোরাকারবার নিয়ন্ত্রণ করছে বিজিবির সোর্স হিসেবে পরিচিত সামাদ ও আরমান। এদের অধীনে কাজ করছে বিজিবির সোর্স বা লাইনম্যান হিসেবে পরিচিত এলাকার আরো কিছু ব্যক্তি। এদের মধ্যে শ্রীপুর বিওপির আব্দুস ছাত্তার, টেন্ডল রুবেল ও আব্দুল জব্বার। মিনাটিলা বিওপির মির্জান আহমদ রুবেল, শামীম আহমদ, আব্দুল করিম (চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য)। ডিবির হাওর বিওপির মিজান আহমদ রুবেল, জৈন্তাপুর রাজবাড়ী বিওপির আব্দুল করিম ওরফে ব্যান্ডিজ করিম, সুজন আহমদ, আব্দুল মালিক ওরফে আব্দুল, কন্টাই মিয়া, লালাখাল বিওপির রহিম উদ্দিন, তাজ উদ্দিন ও মো. শাহজাহান। এসব সোর্সের মাধ্যমে ভারতীয় চোরাইপণ্য বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হয়। স্থানীয় একাধিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এসব বিষয়ে কথা বলতে সামাদ ও আরমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সামাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে আরমান বিজিবির সোর্স পরিচয়ে চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ অস্বীকার করে কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">দীর্ঘদিন ধরে আমি সিলেটে ব্যবসা করি। আমার পাথরের ব্যবসা রয়েছে। এসব অভিযোগ সত্য নয়।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">দুই মাস ধরে অসুস্থ আছেন জানিয়ে আরমান আরো বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> অসুস্থতার কারণে আমি বিছানা থেকেই উঠতে পারছি না। আমি আমার ব্যবসা-বাণিজ্যই যথাযথভাবে করতে পারছি না, সেখানে এসব প্রশ্ন আসে কেন? এটা সম্পূর্ণ ভুয়া তথ্য।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সীমান্তের চোরাচালান বিষয়ে জৈন্তাপুর থানার ওসি আবুল বাশার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এখানে আমি কাজে যোগ দিয়েছি সম্প্রতি। আমি চেষ্টা করছি। এর মধ্যে তিনটি চোরাচালানের মামলা হয়েছে। আমি আমার মতো করে চোরাচালান ঠেকানোর চেষ্টা করছি।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এ বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ৪৮ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্ট কর্নেল মো. হাফিজুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জৈন্তাপুর সীমান্তে অর্ধকোটি টাকার মহিষ আটক </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বিজিবি সদস্যরা জৈন্তাপুরে অভিযান চালিয়ে অর্ধকোটি টাকা মূল্যের ৩২টি মহিষ আটক করেছে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেট ব্যাটালিয়ন ৪৮ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. হাফিজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আটক মহিষগুলো কাস্টমস কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিলামের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গত বুধবার রাত আড়াইটার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৪৮ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে ব্যাটালিয়ন সদরের একটি বিশেষ টহল দল জৈন্তাপুর উপজেলার মিনাটিলা বিওপির পাশের বিরাইমারা হাওর সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের পর ৩২টি ভারতীয় মহিষ আটক করে। এসব মহিষের আনুমানিক বাজারমূল্য ৫৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা।</span></span></span></span></span></p> <p> </p>