<p>রাতভর ভারি বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। প্লাবিত হয়েছে জেলার অন্তত ৩২ গ্রাম। নালিতাবাডীতে পৃথক স্থানে পাহাড়ি ঢলের স্রোতে ভেসে এক নারীসহ দুজনের মৃত্যু ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় এ দুটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।  </p> <p>নিহতরা হলেন নালিতাবাড়ীর বাঘবেড় ইউনিয়নের বালুচর এলাকার মানিক মিয়ার স্ত্রী রহিজা বেগম (৪০) এবং নয়াবিল ইউনিয়নের আন্ধারুপাড়া এলাকার কৃষক ইদ্রিস আলী (৭৫)।</p> <p>বাঘবেড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সবুর গৃহবধূ রহিজার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বালুচর গ্রামের ওই গৃহবধূ পাহাড়ি ঢলের পানি বাড়িতে ওঠায় এক হাতে শিশুপুত্র এবং আরেক হাতে গৃহপালিত ছাগলসহ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে যাচ্ছিলেন। এ সময় পা পিছলে স্রোতের টানে ভেসে মারা যান। তবে তাঁর শিশুপুত্রকে উদ্ধার করা হয়।</p> <p>নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ রানা জানান, সন্ধ্যা ৬টার দিকে খলিসাকুড়া গারোবাজার থেকে পাশের আন্ধারুপাড়া এলাকার নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথে পাহাড়ি ঢলের স্রোতে ভেসে কৃষক ইদ্রিস আলী মারা গেছেন। </p> <p>অনেক স্থানে নদীভাঙনে ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষকের আমন বীজতলা, সবজিক্ষেত, মাছের ঘের ও গ্রামীণ রাস্তাঘাট। </p> <p>গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মহারশি নদী উপচে ঝিনাইগাতী উপজেলার রাংটিয়া সড়ক এবং সদর বাজার ও উপজেলা কমপ্লেক্সের বিভিন্ন স্থানে অন্তত দুই ফুট উচ্চতায় ঢলের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। নালিতাবাড়ীতে ভোগাই নদীর ভাঙনের ফলে ঢলের পানি প্রবেশ করে গড়কান্দা ও শিমুলতলি এলাকায় নয়াবিল সড়কের ওপর দিয়ে প্রবল বেগে প্রবাহিত হচ্ছে। চেল্লাখালি নদীর পানিতে কলসপার এলাকায় তলিয়ে গেছে গাজীর খামার-নালিতাবাড়ী সড়ক। শিমুলতলি, ঘাকপাড়া, মণ্ডলিয়াপাড়া, ভজপাড়া ও সন্ন্যাসীভিটায় ভোগাই এবং চেল্লাখালি নদীর বাঁধ ভেঙেছে। এসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি। </p> <p>নালিতাবাড়ী ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আটকে পড়া পানিবন্দি লোকদের উদ্ধারে কাজ করছেন। বাতকুচি এলাকার কয়েকজন জানিয়েছেন, গত ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে তাঁরা এমন পাহাড়ি ঢল কিংবা বন্যার পানি দেখেননি। </p> <p>ঝিনাইগাতী ইউএনও আশরাফুল আলম বলেন, ‘আমরা দুর্গত এলাকার খোঁজখবর রাখছি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা ও ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’</p> <p>রংপুরে তিস্তার ভাঙন বাড়ছে <br /> রংপুরে তিস্তা নদীর পানি কমতে শুরু করায় ভাঙনে বিলীন হচ্ছে শত শত বিঘা ফসলি জমি, বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকায় দেখা দিচ্ছে নদীভাঙন। </p> <p>গঙ্গাচড়া উপজেলার গোডাউনের হাট এলাকায় জমির ধান হাতে নিয়ে কান্না করছিলেন হোদা মিয়া (৭২)। তিনি জানান, ১২ বিঘা জমি ছিল তাঁর, প্রতিবছর তিস্তায় ভেঙে যেতে যেতে এখন এক বিঘা জমিই সম্বল। সেই জমিটুকুও এখন চলে যাচ্ছে নদীতে। </p> <p>গত দুই বছরে তিস্তার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলে অন্তত ৩০টি পয়েন্টে তীব্র ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ। এবারও কয়েক দিন ধরে গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছায় অনেক এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ৩০টি পরিবারের ঘরবাড়ি এবং কয়েক শ একর ফসলি জমি।</p> <p>গঙ্গাচড়া মহিপুর শেখ হাসিনা সেতুর পশ্চিম পাশের সেতু রক্ষা বাঁধ থেকে লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের পূর্ব ইচলিগ্রাম ও শংকরদহ গ্রাম পর্যন্ত তিস্তার তীরবর্তী দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন স্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় লোকজন। </p> <p>রংপুর পাউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবীব জানান, ভাঙনকবলিত স্থানগুলো জিও ব্যাগ দিয়ে মেরামত করা হচ্ছে। এ ছাড়া ভাঙন রোধ ও সংস্কার করার জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।</p>