<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">প্রায় দুই যুগ আগে দেশে নিষিদ্ধ হয় পলিথিনের ব্যবহার। অথচ এই দীর্ঘ সময় ধরে নিষিদ্ধ পণ্যটির শক্ত অবস্থান হয়েছে ঘরে ঘরে, সর্বত্র। পলিথিন বৈধ না অবৈধ</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তা চট করে জানতে হলে যে কাউকেই দ্বিধায় পড়তে হয়। বহুল ব্যবহারের চাহিদায় ভর করে পণ্যটি এত সহজলভ্য হয়েছে যে, বিশাল বাজার ধরতে বছরের পর বছর ধরে ব্যবসায়ী আর উৎপাদক চক্রও সমান তালে বেপরোয়া হয়েছে। এটি ঘিরে সারা দেশে অন্তত হাজারখানেক কারখানা গড়ে উঠেছে। এ সব কিছুই হচ্ছে পুলিশ, প্রশাসনসহ সব নজরদারি সংস্থার চোখের সামনে। সরকার যায়, সরকার আসে; নির্দেশনা, অভিযান আর কড়াকড়ির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে সব কিছু। তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা, পুরান ঢাকায় পলিথিনের কারখানা সরেজমিনে পরিদর্শনসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে। এদিকে নিষিদ্ধ থাকার পরও সরকার আগামী ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপে পলিথিন ব্যবহার অবৈধ ঘোষণা করেছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"><img alt="নজরদারি নেই, বেড়েছে পলিথিনের ব্যবহার" height="199" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/09.September/11-09-2024/121/678.jpg" style="float:left" width="325" />গতকাল মঙ্গলবার দুপুরবেলা। গন্তব্য পুরান ঢাকার পোস্তা এলাকা। যেতে যেতে চোখে পড়ে বেশ কয়েকটি পলিথিনের কারখানা। আগে যেখানে চামড়ার কারখানা ছিল, সেটি হয়ে উঠেছে পলিথিন কারখানা। পোস্তা ৬৯ গলির বাগ-এ-জান্নাত জামে মসজিদের সামনে এক পলিথিনের কারাখানায় ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলার জন্য গেলে তাদের অফিসকক্ষে ঢুকতে বাধা দেন ভেতরে থাকা লোকজন। পরে বাইরে থেকে একজন কারখানায় প্রবেশ করে পরিচয় জানতে চান। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর তিনি লাপাত্তা। দেখা যায়, কারখানার ভেতরে মেশিনে পলিথিন উৎপাদন চলছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একটি-দুটি নয়, এ রকম অনেক কারখানা গড়ে উঠেছে পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থানে। দেবীদাস ঘাট, চকবাজার ইসলামী উচ্চ বিদ্যালয়ের আশপাশ, চকবাজার বড় কাটরা, আরমানীটোলা, ইসলামবাগ, কামরাঙ্গীর চরসহ বিভিন্ন স্পটে দিনরাত চলে পলিথিন তৈরির কাজ। এসব এলাকায় পলিথিন তৈরির সরঞ্জাম বিক্রির জন্যও রয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ প্লাস্টিক প্যাকেজিং, রোল ম্যানুফ্যাকচারার্স ওনার্স অ্যান্ড ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের আওতায় দেড় শতাধিক দোকান থাকলেও চকবাজারের পেয়ারা মার্কেট, লুতফর নাহার ম্যানশন, আবুল হোসেন মার্কেট, মৌলভীবাজার মাংসপট্টি মসজিদ গলি, সালাম মার্কেট, মাওলানা মার্কেট, শামসুদ্দিন প্লাজা ও এসরার ম্যানশনে তিন শতাধিক পাইকারি দোকানে প্রকাশ্যে বেচাকেনা চলছে নিষিদ্ধ পলিথিনের।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মৌলভীবাজারে দোকানগুলোতে কোথাও প্রকাশ্যে আর কোথাও সামনে প্লাস্টিকের ওয়ানটাইম গ্লাস, প্লেট ইত্যাদি পণ্য রাখা। পলিথিন আছে কি না জানতে চাইলে কৌশলে ডেকে জানতে চাওয়া হয়, কোন সাইজের লাগবে। মার্কেটের টিএস অ্যাকসেসরিজের দোকানি মান্নান বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বলছে যে পলিথিনই চলবে না। ঘোষণা করছে পলিথিন বেচা নিষেধ, কেউ দোকানে রাখছে না। কাস্টমার এলে অন্য জায়গা থেকে আইনা দিতে হচ্ছে। সমাধান না হলে, দেয়ালে পিঠ ঠেইক্যা গেলে ব্যবসায়ীরা মাঠে নাইম্যা পড়ব।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">লুকিয়ে বিক্রির বিষয়ে মজুমদার প্লাস্টিকের মালিক আবুল বাশার বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ব্যবসা তো চালাতে হবে। সরকারের যে নিয়ম সে নিয়ম তো মানতেই হবে। আমরা অপেক্ষায় আছি, সমিতির পক্ষে কী সিদ্ধান্ত হয়। আমরা তো বিস্তারিত জানি না। এখনো বুঝতে পারছি না কী হবে। আগে ছিল</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এই বন্ধ করে, এই অভিযান, আবার সব ঠিক। এখন তো কিছুই বুঝতে পারছি না। সমিতি থেকে বলছে সাবধানে থাকতে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বাংলাদেশ প্লাস্টিক প্যাকেজিং, রোল ম্যানুফ্যাকচারার্স ওনার্স অ্যান্ড ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু মোতালেব কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">পলিথিন নিষিদ্ধ করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এটি কখনো সম্ভব নয়। পর পর দুই সরকার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এটি করতে চেয়েছে। কোনো সরকার এটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি। টাস্কফোর্স নামিয়েও এটি সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া গত ২০ থেকে ২২ বছরে তারা কোনো বিকল্প ব্যবস্থাও করতে পারেনি।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি পরিবারে চারটি করে ধরলেও ঢাকায় প্রতিদিন এক কোটি ৪০ লাখের বেশি পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হয়। সরকারি নজরদারি সংস্থাগুলো নির্বিকার থাকায় বিক্রেতারা দেদার বিক্রি করছেন, ক্রেতারা কিনছে। এভাবে পণ্যটির ওপর নির্ভরতা বেড়েছে সবার।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সরকার যখন ২০০২ সালে তা নিষিদ্ধ করে, তখন অমান্যকারীর জন্য ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধানও রাখা হয়। বাজারজাত করলে শাস্তি ছয় মাসের জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা। নিষিদ্ধের ঘোষণা এবং আইনের বিধান রাখা হলেও ২২ বছরেও বাজার থেকে পলিথিন বন্ধ করা সম্ভব হয়নি।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এমন এক প্রেক্ষাপটে গত সোমবার এক সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আগামী ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপে কোনো ধরনের পলিথিন বা পলিপ্রপাইলিনের ব্যাগ রাখা যাবে না এবং ক্রেতাদের দেওয়া যাবে না। বিকল্প হিসেবে সব সুপারশপে বা শপের সামনে পাট ও কাপড়ের ব্যাগ ক্রেতাদের জন্য রাখা হবে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এমন ঘোষণার পর ব্যবসায়ীদের মধ্যে পলিথিন বাজারে বিক্রি করতে পারবেন কি না এই সংশয় তৈরি হয়েছে। তবে তাঁরা মনে করছেন না এটা সরকার পুরো বন্ধ করতে পারবে।</span></span></span></span></span></p> <p> </p>