<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একজন তুলে ধরেন তাওহিদের গুরুত্ব, আরেকজন সুরে সুরে আহ্বান করেন প্রেমসাগরে ডুব দিতে। শরিয়ত ও মারফতের পক্ষে-বিপক্ষে জমে ওঠে যুক্তিতর্ক। আসতে থাকে প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন। এরই মধ্য দিয়ে দুই পালাকারের কথোপকথনে সমৃদ্ধ হয় দর্শক। ঘণ্টাব্যাপী বাহাসের পর চিন্তায়, দৃষ্টিভঙ্গিতে ভিন্নতা রেখেও একসঙ্গে মিলেমিশে জীবনযাপনের তাগিদ দেয় উভয় পক্ষ। কারণ বৈচিত্র্যই সৃষ্টির জীবনের সৌন্দর্য।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমিতে বসেছিল পালাগানের এ আসর। জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দুই পর্বে শরিয়ত-মারফত এবং নবুয়ত-বেলায়াত নামের দুটি পালা পরিবেশিত হয়। পালা উপস্থাপন করেন বাউল লতিফ সরকার, রুমা সরকার, আকলিমা বেগম ও আবুল সরকার।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পালা শুরুর আগে শিল্পীদের নিয়ে মঞ্চে আসেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। তিনি বলেন, পালাকাররা একেকজন দার্শনিক। তাঁরা দর্শনের কথা বলেন। মানুষের মনের ভেতর যে দ্বন্দ্ব কাজ করে তা লোক ঐতিহ্যের অনেক পালাগানের বিষয়। মহাপরিচালক এ সময় জানান, আগামী দিনে দেশের সব পালাকারকে নিয়ে জাতীয় উৎসব করবে শিল্পকলা একাডেমি। পালাগান নিয়ে গবেষণা ও প্রকাশনার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। অন্যদিকে গ্রামে-গঞ্জে বহু মানুষের উপস্থিতিতে খোলা জায়গায় পালা করে আসা শিল্পীরা শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগকে স্বাগত জানান। তাঁরা জানান, দেশের বহু জায়গায় পালা করলেও বহুতল ভবনের আধুনিক মিলনায়তনে তাঁদের পালা করার অভিজ্ঞতা নতুন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গতকালের লোকগাথা অনুষ্ঠানের প্রথম পালাটি ছিল শরিয়ত ও মারফতের। এতে শরিয়তের পক্ষে আখ্যান নির্মাণ ও যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন বাউল লতিফ সরকার। তাঁর বিপক্ষে ছিলেন বাউল রুমা সরকার। ওলি-আউলিয়া, গাউস-কুতুব আর গুরু ইদ্রিস বয়াতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শুরু করেন রুমা সরকার। অনন্ত অসীম প্রেমময় স্রষ্টার বন্দনা করেন শুরুতে। ভূমিকা শেষ হলে ধীরে ধীরে মূল পর্বে প্রবেশ করেন এই মারফতের ফকির। শরিয়তের আলেমের কাছে তিনি প্রশ্ন রাখেন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নামাজ পড়লে নামাজি, রোজা রাখলে রোজাদার, হজ করলে হাজি এবং জাকাত দিলে মানুষের পরিচয় হয় দাতা। কী করলে মানুষ তবে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মুসলমান</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> হয়?</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পালাকার বাউল লতিফ সরকার নিজের পর্বের শুরুতেই উত্তরটা দিয়ে দেন। তিনি বলেন, তাওহিদের পথে থেকে যে আত্মশুদ্ধি করে সে-ই মুসলমান। স্কুল-কলেজ থেকে নিয়ে চারপাশের সব কিছুতেই রয়েছে শরিয়তের উপস্থিতি। শরিয়তের বাইরের যা তা ইসলাম নয়। লতিফ সরকার বলেন, মারফতের সব তরিকার প্রধানরাও ছিলেন শরিয়ত মান্য করা হক্কানি আলেম। কাজেই মারফতের সব ভেদ রয়েছে শরিয়তের মাঝেই। এমনতর দার্শনিক জিজ্ঞাসা, উত্তর, প্রত্যুত্তরের ফাঁকে ফাঁকে দুই পালাকারই মূলত ইসলাম ধর্মের গুণগান গাইতে থাকেন। এর মাঝে আকর্ষণীয়ভাবে তাঁরা উপস্থাপন করেন মহানবী (সা.)-এর জন্ম, বেড়ে ওঠা ও তাঁর আদর্শ জীবনের গল্প। দুই পালাকারের সঙ্গে হারমোনিয়াম, দোতারা, বাঁশিসহ অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র দিয়ে সংগত দেয় দুটি পৃথক দল। তত্ত্ব ব্যাখ্যা, শ্লোক ও দীর্ঘ গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এই পালা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পালাকাররা বলেন, শরিয়তের আলেম ও মারফতের ফকিরের বিতর্ক সুদূর অতীত কাল থেকেই চলছে। তবে পালা ও বিতর্কের সৌন্দর্য হলো ভিন্নমত নিয়েও সহাবস্থান করতে শেখা। সুফি-সাধকদের পালাগান-কবিগান আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী এই ধারাকে পুনরুদ্ধারের আশাবাদ জানান তাঁরা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দ্বিতীয় পর্বে নবুয়ত ও বেলায়াতের পক্ষে পালায় অংশ নেন যথাক্রমে আকলিমা বেগম ও মহারাজ আবুল সরকার। আজ বুধবার একই সময়ে একই মিলনায়তনে বসবে পালাগানের আরেকটি আসর।</span></span></span></span></p> <p> </p>