<p>‘শোন হে চৈনিক, চা খাবে দৈনিক।</p> <p>গায়ে বল হলে পরে, তবে হবে সৈনিক।’</p> <p>বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত এই পরামর্শমূলক ছন্দ কবিতাটি কমবেশি সবারই জানা। চায়ের আবেগ ছেলে-বুড়ো সবার কাছেই সমান এ দেশে। চা নিয়ে বিখ্যাত মনীষীদের আবেগ, ভালোবাসা ও অনুভূতিরও নেই শেষ। প্রতিনিয়ত চায়ের উৎপাদন বাড়ছে। গত বছর প্রথমবারের মতো দেশে চা উৎপাদন ১০ কোটি কেজি ছাড়িয়েছিল। ১৮৪০ সালে চট্টগ্রামে প্রথম পরীক্ষামূলক চা চাষ শুরুর পর ১৮৪ বছরের ইতিহাসে এটি একটি রেকর্ড বলা চলে। </p> <p>চা আবিষ্কারের সঠিক ইতিহাস লোককাহিনি অনুসারে গড়ে উঠেছে। ২৭৩৭ খ্রিস্ট-পূর্বাব্দে চীনের সম্রাট ছিলেন শেন নাং। তিনি বিশ্রাম নেওয়ার সময় পাশে একটি পাত্রে পানি গরম করা হচ্ছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে কিছু পাতা উড়ে এসে ওই ফুটন্ত পানিতে পড়তে দেখেন তিনি। তৎক্ষণাৎ সেই পানির রং বাদামি হয়ে যায়। উষ্ণ বাদামি পানির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে কিছুটা পান করে বেশ সতেজতা বোধ করেন সম্রাট। সেই থেকে শুরু হলো চা পানের রেওয়াজ, আর তা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ল পুরো বিশ্বে।</p> <p>১৬৫০ সালে চীনে বাণিজ্যিকভাবে চায়ের উৎপাদন শুরু হয়। এই চায়ের বড় ক্রেতা ছিল ব্রিটিশরা। প্রায় ২০০ বছর ব্রিটিশরা চা আমদানি করলেও বিনিময়মূল্য বেশি হওয়ার কারণে নিজেরাই চা উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়। নিজেদের চা চাষে কোনো অভিজ্ঞতা না থাকায় চীনা চায়ের স্টেটগুলোতে গুপ্তচর পাঠায় তারা, যা ইতিহাসে ‘ব্রিটিশ টি রবারি’ নামে বিখ্যাত। গুপ্তচররা চায়ের বীজ ও একদল প্রশিক্ষিত চীনা চা-শ্রমিককেও ভাগিয়ে আনে ভারতীয় উপমহাদেশে। এরপর ধীরে ধীরে সিলেট, চিটাগং, আসাম, কাছার, ডুয়ার্স ও দার্জিলিংয়ে গড়ে ওঠে বাণিজ্যিক চায়ের বাগান।</p> <p>১৯৭০ সালে বাংলাদেশে চা বাগানের সংখ্যা ছিল ১৫০টি, বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ১৬৮টি। গবেষণা বলছে প্রতিদিন ১০ কোটি কাপ চা পান করে বাংলাদেশের মানুষ। লন্ডনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল টি কমিটির ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিন বছরে গড়ে বাংলাদেশে জনপ্রতি চা-পাতা গ্রহণ করে ৪৮০ গ্রাম। ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিন বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২০ গ্রাম। একটি ব্ল্যাক টি চায়ের ব্যাগে দুই গ্রাম চা-পাতা থাকে, গ্রিন টির ব্যাগে থাকে ১.৪০ গ্রাম। সেই হিসাবে আমাদের চাখোর জাতি বললেও ভুল হবে না।</p> <p> </p> <p>♦ আল সানি</p>