<p>সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে নৌকায় করে ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে পৌঁছনো প্রায় ১০০ রোহিঙ্গার মধ্যে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় জেলে সম্প্রদায়ের প্রধান মিফতাচ তজুত আদেক বৃহস্পতিবার রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।</p> <p>সুমাত্রা দ্বীপের আচেহ প্রদেশের পূর্বাঞ্চলে সমুদ্রসৈকতে এখনো সাত শিশুসহ ৯৬ জন রোহিঙ্গা রয়েছে জানিয়ে আদেক বলেন, ‘এখনো তাদের জন্য কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। তারা এখনো সৈকতেই অবস্থান করছে।’</p> <p>এ ছাড়া পূর্ব আচেহ অঞ্চলের গ্রাম কর্মকর্তা সাইফুল আনোয়ার জানান, দুজনের মৃতদেহ তীরে এবং চারজনের দেহ সাগরে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া গেছে। আটজন অসুস্থ ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তিনি এএফপিকে বলেন, ‘বাসিন্দাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, তারা স্থানীয় সময় রাত ৪টার দিকে আটকা পড়ে।’</p> <p>অন্যদিকে পূর্ব আচেহর ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রধান আমরুল্লাহ এম রিধা সাংবাদিকদের জানান, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অস্থায়ীভাবে সৈকতে তাঁবুতে রাখা হবে, যতক্ষণ না তাদের জন্য উপযুক্ত আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা যায়।</p> <p>গত সপ্তাহে আচেহ ও উত্তর সুমাত্রা প্রদেশে প্রায় ৩০০ রোহিঙ্গা তীরে পৌঁছেছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর ইন্দোনেশিয়া সরকারের কাছে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার রোহিঙ্গা নৌকায় করে আচেহতে পৌঁছেছে, যা পূর্ববর্তী আট বছরের তুলনায় অনেক বেশি।</p> <p>মুসলিমপ্রধান এই জাতিগোষ্ঠী মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার এবং কয়েক লাখ রোহিঙ্গা সামরিক দমন-পীড়নের ভয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। হাজার হাজার রোহিঙ্গা ঝুঁকিপূর্ণ নৌপথে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় পৌঁছনোর চেষ্টা করেছে, অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষাকৃত শান্ত সমুদ্রের সুযোগ নিয়ে।</p> <p>বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের দক্ষিণ এশিয়া থেকে আগত বিদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে গণ্য করে, তাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করে এবং নির্যাতনের শিকার করে আসছে। মিয়ানমার ৫০ বছর সামরিক শাসনের অধীনে ছিল। ২০১৫ সালের নির্বাচনে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অং সান সু চির দলের বিজয়ের পর গণতন্ত্রের পথে এগোতে শুরু করে দেশটি। তবে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক বাহিনী তার সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান ঘটায়, যা ব্যাপক বিক্ষোভের জন্ম দেয় এবং শেষ পর্যন্ত সশস্ত্র সংঘর্ষে রূপ নেয়।</p> <p>সর্বশেষ সংঘাতে রোহিঙ্গারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণ তাদের জোরপূর্বক সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যদিও তাদের নাগরিকত্ব স্বীকৃত নয়। দেশটিতে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী পুরুষ ও ১৮ থেকে ২৭ বছর বয়সী নারীদের দুই বছরের জন্য সামরিক বাহিনীতে নিয়োগ দেওয়া যায়, যা জরুরি অবস্থায় পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়ানোর নিয়ম রয়েছে।</p> <p>বিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশক থেকে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে একাধিকবার কঠোর দমন-পীড়ন চালিয়ে আসছে। ২০১৭ সালে একটি সামরিক অভিযানে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এ ধরনের অভিযানের সময় শরণার্থীরা প্রায়ই মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে ধর্ষণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও হত্যার শিকার হওয়ার অভিযোগ করে। ২০১৯ সাল থেকে হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ২০১৭ সালের এই নির্যাতনের ঘটনার তদন্ত করছে।</p> <p>সূত্র : আলজাজিরা</p>