<p>ভারতীয়দের কাছে গৃহস্থালী সম্পদের মধ্যে অন্যতম হলো সোনা। উৎসবের মৌসুমে বেড়েই চলেছে এ ধাতুর দাম, যা বিভিন্ন সময়ে আকর্ষণীয় মুনাফা দিয়েছে। তাই দেশটির মানুষের মধ্যে এটি কেনার প্রবণতা রয়েছে। তবে সেখানে এ ধাতুর দাম ইতিমধ্যে ৮০ হাজার রুপি ছাড়িয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে সোনার দাম দুই লাখ রুপিতে পৌঁছবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।</p> <p>ইন্ডিয়া বুলিয়ান অ্যান্ড জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (আইবিজেএ) দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের ২১ অক্টোবর সর্বকালীন উচ্চতায় পৌঁছয় সোনার দাম। ওই দিন ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারেট সোনা বিক্রি হয়েছে ৮০ হাজার ৩৩০ রুপিতে। এ বছরের ১৮ এপ্রিল প্রতি ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারেটের সোনা ৭৩ হাজার ৪৭৭ রুপি দরে বিক্রি হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, গত ৯ বছরে তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়ে এই দামে পৌঁছেছে সোনা। ২০১৫ সালে এর দাম ছিল ২৪ হাজার ৭৪০ রুপি। আন্তর্জাতিক হিসাবে এক ভরিতে প্রায় ১১.৬৬৪ গ্রাম সোনা হয়।</p> <p>২০০৬ সালের ৩ মার্চ ২৪ ক্যারেট সোনার বাজার মূল্য প্রতি ১০ গ্রামে মাত্র আট হাজার ২৫০ রুপি ধার্য করা হয়েছিল। এই দর তিন গুণ বাড়তে ৯ বছরের বেশি সময় লেগেছিল। ১৯৮৭ সালের ৩১ মার্চ দুই হাজার ৫৭০ রুপি/১০ গ্রাম দরে বিক্রি হয়েছে ২৪ ক্যারেটের সোনা। ১৯৮৭ সাল থেকে সোনার দাম তিন গুণ বৃদ্ধি পেতে প্রায় ১৯ বছর সময় নিয়েছিল। তার আগে দর তিন গুণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সময় লেগেছিল ছয় থেকে আট বছর।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="নদীতে ভেসে উঠল ৫ কেজি ২০০ গ্রাম সোনা বাঁধা মরদেহ" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/03/13/1710334393-9722c8cccf2573e13d4b0465417833f0.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>নদীতে ভেসে উঠল ৫ কেজি ২০০ গ্রাম সোনা বাঁধা মরদেহ</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/03/13/1371239" target="_blank"> </a></div> </div> <p>বর্তমানে সোনার দাম যেখানে দাঁড়িয়েছে, দাম তার থেকে তিন গুণ বাড়লে এটি দুই লাখ ৪০ হাজার রুপির কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছবে। আগামী ছয় থেকে ৯ বছরের মধ্যে ওই দামে সোনা বিক্রি হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকে।</p> <p><strong>এভাবে দাম বাড়ার কারণ</strong><br /> সোনার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যে একাধিক কারণের উল্লেখ করা হয়েছে। সমীক্ষক সংস্থা এলকেপি রিসার্চের ভাইস প্রেসিডেন্ট যতীন ত্রিবেদীর কথায়, ‘বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে সংঘর্ষ বা ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দেখা দিলে সোনার দাম বাড়তে থাকে। এখন তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।’</p> <p>২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করলে পূর্ব ইউরোপের তৈরি হয় অস্থিরতা। অন্যদিকে গত বছর থেকে হামাস, হিজবুল্লাহ, হুতি ও ইরানের সঙ্গে ইজরায়েলের তীব্র সংঘাত চলছে, যা পশ্চিম এশিয়ার মাটিকে রক্তে ভিজিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের অনেকের দাবি, এই ঘটনাগুলো সোনার দামের ওপর মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলেছে। কারণ ইতিহাসগতভাবে দেখা গেছে, বিশ্বের ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন বা আর্থিক সংকটে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দামি হয়েছে হলুদ ধাতু।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="নুডলসের প্যাকেট কাটতেই বেরিয়ে এলো সোনা-হীরা!" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/04/23/1713879538-d3c856330b4e5ced605f12cf1c2ddaac.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>নুডলসের প্যাকেট কাটতেই বেরিয়ে এলো সোনা-হীরা!</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/world/2024/04/23/1381679" target="_blank"> </a></div> </div> <p>সমীক্ষক সংস্থার কর্নধার যতীন ত্রিবেদী বলেন, ‘শেষ পাঁচ বছরের দিকে তাকালে দেখা যাবে, ভারতীয় রুপির মূল্য হ্রাসের পরিমাণ বেড়েছে। এ ছাড়া ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, অতিমারী ও যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত। যা ৪০ হাজার থেকে সোনাকে ৭০ হাজার রুপির বেশিতে নিয়ে গিয়েছে। মাত্র ৩.৩ বছরে এতে প্রায় ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে।’</p> <p>২০১৪ সালে সোনার দাম ছিল গড়ে ২৮ হাজার রুপি। ২০১৮ সালে সেটাই বেড়ে ৩১ হাজার ২৫০ রুপিতে গিয়ে পৌঁছয়। অর্থাৎ এই সময়সীমার মধ্যে হলুদ ধাতুর দরে ১২ শতাংশ ঊর্ধ্বগতি দেখা গিয়েছিল।</p> <p>ত্রিবেদী বলেন, ‘এখনকার ধারা বজায় থাকলে সাত থেকে ১২ বছরের মধ্যে তিন গুণ হবে সোনার দাম। অর্থাৎ দুই থেকে আড়াই লাখ রুপিতে বিক্রি হবে ১০ গ্রাম হলুদ ধাতু।’</p> <p>কিছু বিশেষজ্ঞ আবার আরো দ্রুত সোনার দাম দুই থেকে আড়াই লাখ রুপিতে পৌঁছবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তাদের দাবি, আগামী ছয় বছরের মধ্যেই এটা হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।</p> <p>আইবিজেএর জাতীয় সম্পাদক সুরেন্দ্র মেহতা এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন ও পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধের জেরে পরিস্থিতি এমনিতেই জটিল হয়ে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চীন-তাইওয়ান সংঘাত শুরু হলে, তার প্রভাবও সোনার দরের ওপর এসে পড়বে।’</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="ভারত কেন ব্রিটেনে টন টন সোনা রেখেছিল, ফেরতই বা আনছে কেন" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/06/02/1717340006-9722c8cccf2573e13d4b0465417833f0.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>ভারত কেন ব্রিটেনে টন টন সোনা রেখেছিল, ফেরতই বা আনছে কেন</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/world/2024/06/02/1393773" target="_blank"> </a></div> </div> <p>এদিকে বিশেষজ্ঞদের অনুমান, এই অনিশ্চয়তাগুলো বিশ্ব অর্থনীতিকে ডলার মুক্ত করার দিকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাবে। এ বছরের অক্টোবরে রাশিয়ার কাজান শহরে হওয়া ব্রিকস সম্মেলনে তার সূচনা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এই রাষ্ট্রগোষ্ঠীর অন্যতম সদস্য হলো ভারত। এ ছাড়া মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে রয়েছে হলুদ ধাতুর দাম। যা বর্তমানে বেশ উচ্চ স্তরেই রয়েছে। যতক্ষণ মুদ্রাস্ফীতিতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা থাকবে, ততক্ষণ সোনার দর বাড়বে বলেই মনে করেন আর্থিক বিশ্লেষকরা।</p> <p>আইবিজেএর জাতীয় সম্পাদক সুরেন্দ্র মেহতা বলেন, ‘মুদ্রাস্ফীতির হার বাড়লে মুদ্রার অবমূল্যায়ণ হয়। ফলে সাধারণ টাকায় জিনিসপত্র কেনার সুযোগ কমতে থাকে। আর তখনই সোনার দিকে ঝুঁকে পড়েন বিনিয়োগকারীরা। এতে চাহিদা যেমন বাড়ে, তেমনই পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পায় দর।’</p> <p>এগুলো বাদ দিলে সোনার দর বৃদ্ধির নেপথ্যে য়ারো কিছু কারণ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যেমন বেশ কিছু দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাগাতার হলুদ ধাতু ক্রয়। সেই তালিকায় রয়েছে রাশিয়া, চীন ও ভারত। মেহতা বলেন, ‘একটা সময় সোনাকে ভোগবাদী পণ্য বলে মনে করা হতো। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছে ভারতের মানুষ। একে এখন বিনিয়োগের অন্যতম সেরা মাধ্যম বলে মনে করা হচ্ছে।’</p> <p>বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বর্তমান সময়ে সোনায় বিনিয়োগ করার সঠিক সময়। সেটির মাধ্যম অলঙ্কার ক্রয় বা গোল্ড বন্ডে লগ্নি হতে পারে। গয়না কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই হলমার্ক দেখে নিতে হবে।</p> <p>সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা</p>