<p>যুক্তরাজ্যের এসেক্স লিগ খেলা থেকে লম্বা বিরতি নিয়ে তিনি গিয়েছিলেন হজ করতে। মক্কার তীব্র গরমে চোখের সামনে দুজন হাজিকে মৃত্যুশয্যায় ঢলে পড়তে দেখে এমনিতেই মনটা ভীষণ ভারাক্রান্ত ছিল ইমরুল কায়েসের। সেখান থেকে কয়েক দিন আগে আবার যুক্তরাজ্যে ফিরতে না ফিরতেই যোগ হয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের সেমিফাইনাল স্বপ্ন বিসর্জনে পাঠিয়ে ঢিমেতালের ব্যাটিংয়ের বেদনাও। যুক্তরাজ্য সময় দুপুরে ইপিং ক্রিকেট ক্লাবের টিম মিটিং সেরে ফোনের ওপার থেকে বলছিলেন, ‘নানা কারণেই মনটা ভালো নেই। তার ওপর সেমিফাইনালে ওঠার চেষ্টাই যে আমরা করলাম না, সেটিও কম কষ্ট দিচ্ছে না।’ </p> <p>অথচ বাংলাদেশের জন্য সব মিলিয়ে যাওয়ার পরও সেমিফাইনাল সম্ভাবনার নতুন সূর্য উঁকি দিয়েছিল। সুপার এইটে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচেই হারার পর শেষ চারে যাওয়ার আর কোনো সুযোগ অবশিষ্ট আছে বলে মনে হচ্ছিল না এমনকি সাকিব আল হাসানেরও। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আফগান রূপকথা নতুন করে অঙ্কে ফিরিয়ে আনে তাঁদের। রোহিত শর্মার ব্যাটে অস্ট্রেলিয়া উড়ে যাওয়ার পর সেন্ট ভিনসেন্টে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বোলারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে যে সমীকরণ দাঁড়ায়, সেটি কঠিন হলেও দুঃসাধ্য ছিল না। কিন্তু সেটি মেলানোর সাধ তো থাকতে হবে! </p> <p>নাজমুল হোসেনদের পারফরম্যান্সে সেটি দেখতে না পাওয়াই বরং বেশি পীড়া দিচ্ছে বাংলাদেশের হয়ে তিন সংস্করণে ১৩১টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা ইমরুলকে, ‘কী আশ্চর্য এক কথা শুনলাম! তিনটি উইকেট না যাওয়া পর্যন্ত চেষ্টা করবে, এরপর থেমে যাবে! সত্যি সত্যিই তা-ই হলো। উইকেট চলে যাওয়ায় আমরা স্লো মোশনে ব্যাটিং শুরু করে দিলাম। এটা কোন কথা!’ যে জন্য সেমিফাইনালে যাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়েছিল বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট, সেই আরেকটি জয়ের চেষ্টা বৃথা যাওয়ার মধ্যেই আরো বড় ভুল আবিষ্কার করেছেন ইমরুল, ‘আমরা কী চেয়েছি? আরেকটি জয় দিয়ে আসর শেষ করে আসতে তো? কিন্তু শেষ পর্যন্ত হেরেই গেলাম। লাভটা কোথায় হলো? এর চেয়ে বরং ১২.১ ওভারের মধ্যে জেতার চেষ্টা করে হেরে গেলেও আজ গলা উঁচু করে কিছু একটা বলতে পারতাম।’<br />  <br /> অক্ষমতার এই গল্পে আরো নানা অনুষঙ্গও খুঁজে পাচ্ছেন ইমরুল। এই ওপেনারের অনুমান, স্বপ্ন দেখার সাহসই হারিয়ে ফেলেছিলেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা, ‘আমি তো এখন অনেক দূরে। তাই কাছ থেকে দেখে বোঝার সুযোগ নেই। তবে দূর থেকে মনে হচ্ছে, এই দলটির মধ্যে আসলে সেমিফাইনাল খেলার কোনো স্বপ্নই ছিল না। থাকলে এত আগে হাল ছেড়ে দিয়ে বসে যেত না।’ আফগানিস্তানের ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষা দেখে সে বিষয়ে আরো স্পষ্ট হয়েছেন তিনি, ‘আফগানরা ক্ষুধার্ত ছিল। সে জন্যই ওরা ফল বের করে নিতে পেরেছে। আমাদের ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষায় সেই ক্ষুধাটা দেখিনি। বরং ওদের কাউকে কাউকে দেখে মনে হয়েছে, নিজের জন্য কিছু রান করার ভাবনায় ডুব দিয়েছে।’ </p> <p>দেশের এবং দলের জন্য নয়, নিজের জন্য! ইমরুলের অভিযোগ গুরুতরই। এর পেছনে তিনি হেড কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহের দায়ই বেশি দেখছেন। নামোল্লেখ করলেন না অবশ্য, ‘সুপার এইটে ভালো কিছু করলে সেটি হবে বোনাস, ড্রেসিংরুমের বিশ্বাস নষ্ট করে দিতে এ রকম কিছু কথাই যথেষ্ট।’ ২০২৪ সালে এসে ইমরুলকে তাই ১৭ বছর পেছনে ফিরে যেতে হচ্ছে, ‘২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও কিন্তু আমরা সুপার এইটে খেলেছিলাম। তখন আমরা জানতাম যে এরপর আর যেতে পারব না। ২০২৪ সালেও সে রকমই ভেবেছি। তাহলে আমরা উন্নতিটা করলাম কোথায়?’ </p>