<p>মহাবিশ্বের চরিত্র ব্যাখ্যা করার জন্য পদার্থবিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দশটি সমীকরণের একটির জন্মদাতা এরউইন শ্রোডিঙ্গার। জন্ম ও বেড়ে ওঠা ভিয়েনায়। ছেলেবেলায় ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। শৈশব থেকেই পদার্থবিজ্ঞানের প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। পড়াশোনা শেষ করতে না করতেই অস্ট্রিয়া ও জার্মানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক আসে তাঁর। যোগ দিতে হবে অধ্যাপক হিসেবে।</p> <p>অনেক ভেবেচিন্তে তিনি যোগ দেন জার্মানের ব্রেসলাউ বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু সেখানে তিনি বেশিদিন ছিলেন না। কয়েক মাসের মধ্যেই ডাক পান সুইজারল্যান্ডের জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন স্বয়ং আইনস্টাইন। জুরিখে স্থায়ীভাবে অধ্যাপনায় যোগ দেন শ্রোডিঙ্গার। সেখানেই বস্তুর তরঙ্গ ধর্মের ব্যাপারটা মনে ধরে তাঁর। রচনা করলেন এক কালজয়ী সমীকরণ।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="ব্ল্যাকহোলের আলো: পর্ব ২" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/27/1730007378-3e64956dac93f7ad2e775fe5bef9b73c.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>ব্ল্যাকহোলের আলো: পর্ব ২</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/10/27/1439651" target="_blank"> </a></div> </div> <p>শ্রোডিঙ্গারের বস্তুতরঙ্গের সমীকরণ কোয়ান্টাম বিজ্ঞানে ততটাই গুরুত্বপূর্ণ, যতটা ক্লাসিক্যাল বিজ্ঞানে নিউটনের গতিসূত্র। তাঁর সমীকরণ দেখতে এতটাই নিখুঁত ছিল, সহকর্মীদের কেউই তা নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ করেনি। তবে তিনি হতাশ হয়েছিলেন। কেননা তরঙ্গ নিয়ে তাঁর মতো এতটা উৎসাহী কেউ ছিলেন না।</p> <p>যদিও আইনস্টাইনের মতো তিনিও কোয়ান্টাম তত্ত্বের বিপক্ষে ছিলেন। তাঁর কাছে নিলস বোরের কোপেনহেগেন ব্যাখ্যা, তরঙ্গ-কণা দু-মুখো আচরণ, তরঙ্গ-ফাংশনের ভাঙন— এসব অপবিজ্ঞান ছাড়া কিছুই ছিল না। অনিশ্চয়তা তত্ত্ব নিয়ে আইনস্টাইনের ছিল হাজারও যুক্তি। সেই যুক্তিগুলোকে আরও শক্ত অবস্থানে নিতে শ্রোডিঙ্গার তাঁর বিখ্যাত বিড়াল ধাঁধাঁর জন্ম দেন।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্ব" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/26/1729924340-10102baa6b3e4c7ac114d2591183499e.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্ব</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/10/26/1439312" target="_blank"> </a></div> </div> <p>১৯৩৩ সাল। জার্মানে হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসি সরকার ক্ষমতায় আসে। ইহুদিদের ওপর প্রকাশ্য অত্যাচার শুরু হয়। শ্রোডিঙ্গার নিজে ইহুদি নন, কিন্তু তাঁর ইহুদি সহকর্মীদের ওপর নাৎসিদের অত্যাচারের মৌখিক প্রতিবাদ করেন তিনি। ফলে তাঁর অবস্থানও নড়বড়ে হয়ে যায়।</p> <p>তাঁকে কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়ে একটি খোলা চিঠি লিখতে বলা হয়। শ্রোডিঙ্গার নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে তা লেখেন। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। ১৯৩৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হয়। শ্রোডিঙ্গার সবকিছু ফেলে সামান্য কিছু জিনিসপত্র সাথে নিয়ে আয়ারল্যান্ড চলে আসেন।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="কোয়ান্টামের সরলীকরণ" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/24/1729769410-9cb65876de48647535d809013fb12ce3.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>কোয়ান্টামের সরলীকরণ</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/10/24/1438704" target="_blank"> </a></div> </div> <p>যুদ্ধে নিরপেক্ষ দেশ আয়ারল্যান্ড। শ্রোডিঙ্গারের এই দুঃসময়েও তাঁর সঙ্গী ছিলেন স্ত্রী আনামেরি। রোমে বিজ্ঞানী এনরিকো ফার্মি তাঁদের অভ্যর্থনা জানান এবং টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করেন। রোম থেকে জেনেভায় গিয়ে আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ইয়ামন দ্য ভ্যালেরির আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন শ্রোডিঙ্গার।</p> <p>দ্য ভ্যালেরি জানালেন, তিনি ডাবলিনে ইন্সটিটিউট অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন। শ্রোডিঙ্গার যদি সেই ইন্সটিটিউটে যোগ দেন তাহলে ভালো হয়। শ্রোডিঙ্গারের সম্মতি ছিল। ১৭ বছর সেখানে কাজ করেন তিনি।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="নোবেলজয়ী নিলস বোর" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/07/1728288757-27df57f20ff2190e5ed8d87d680576ae.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>নোবেলজয়ী নিলস বোর</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/10/07/1432720" target="_blank"> </a></div> </div> <p>শ্রোডিঙ্গারের জীবন-যাপন সমসাময়িক বিজ্ঞানীদের তুলনায় আলাদা ছিল। তিনি কবিতা লিখতেন। ভারতীয় দর্শনও চর্চা করতেন। জানা যায়, তাঁর চল্লিশ বছরের সংসারে একাধিক প্রেমিকা ছিল। যা তাঁর স্ত্রী মেনে নিয়েছিলেন। যদিও তা বিতর্কিত। ১৯৫৬ সালে শ্রোডিঙ্গার ভিয়েনায় ফিরে আসেন।</p> <p>ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর জন্য একটি বিশেষ পদ সৃষ্টি করা হয়। ১৯৫৭ সালে তাঁকে ‘জার্মান অর্ডার অব মেরিট’ এবং ‘অস্ট্রিয়ান মেডেল ফর আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স’ সম্মাননা দেওয়া হয়। ১৯৬১ সালের ৪ জানুয়ারি, ফুসফুসের জটিলতায় মৃত্যুবরণ করেন এই কিংবদন্তি।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="শূন্য থেকে মহাবিশ্ব কি সম্ভব? কী বলেছিলেন স্টিফেন হকিং?" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/24/1729760001-f872b4a0e2e2f55b8483f40e2e0ed8c0.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>শূন্য থেকে মহাবিশ্ব কি সম্ভব? কী বলেছিলেন স্টিফেন হকিং?</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/10/24/1438664" target="_blank"> </a></div> </div> <p><strong>১২ আগস্ট ১৮৮৭</strong><br /> ইউরোপের ঐতিহাসিক শহর ও অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় জন্মগ্রহণ করেন।</p> <p><strong>১৯১০</strong><br /> ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।</p> <p><strong>১৯১৪-১৯১৮</strong><br /> প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনীর সেনা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।</p> <p><strong>১৯২১</strong><br /> জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।</p> <p><strong>১৯২৬</strong><br /> কোয়ান্টামের মহাসড়কে 'শ্রোডিঙ্গারের সমীকরণ'-এর যাত্রা শুরু হয়।</p> <p><strong>১৯২৭</strong><br /> জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইস্তফা দিয়ে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদে যোগ দেন।</p> <p><strong>১৯৩৩</strong><br /> নাৎসি সরকারের হয়রানির শিকার হয়ে অক্সফোর্ডে চলে আসেন। সেখানে এসেই জানতে পারেন পল ডিরাকের সাথে পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।</p> <p><strong>১৯৩৫</strong><br /> ‘দ্য প্রেজেন্ট সিচুয়েশন অব কোয়ান্টাম মেকানিকস’— শিরোনামে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন, যেখানে তাঁর বিড়াল প্যারাডক্সের কথা তুলে ধরেছিলেন।</p> <p><strong>১৯৩৯</strong><br /> ডাবলিনে ইন্সটিটিউট অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজে যোগ দেন।</p> <p><strong>১৯৪৪</strong><br /> পদার্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে জীবনের অর্থ কী হতে পারে বর্ণনা দিয়ে লেখা তাঁর বই 'হোয়াট ইজ লাইফ বই' কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয়।</p> <p><strong>১৯৫৬</strong><br /> ডাবলিনে অবসর গ্রহণ করে জন্মস্থান ভিয়েনায় ফিরে আসেন।</p> <p><strong>৪ জানুয়ারি ১৯৬১</strong><br /> ভিয়েনায় মৃত্যুবরণ করেন।<br />  </p>