<p><br /> পিঁপড়া চলাফেরার সময় একটু দাড়িয়ে একে মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ায়। দেখলে মনে হয় গুরুত্বপূর্ণ আলাপ করছে। আলাপ শেষে যে যার পথে চলে যায়। </p> <p>আসলেই কি পিঁপড়েরা নিজেদের মধ্যে এভাবে কথা বলে? বিজ্ঞান কি বলে?</p> <p>পিঁপড়েরা যখন চলা এবং মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে একে অপরের সাথে কিছুক্ষণের জন্য যোগাযোগ করে—এটা সত্যি। কিন্তু সেই যোগাযোগ আসলে আলোচনা বা কথোপকথনের মতো কিছু নয়। তবে, তাদের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিনিময় হয় ওই সময়। ফলে ওই যোগাযোগ তাদের পুরো দলকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে সাহায্য করে। আসুন, সহজ ভাষায় দেখে নেই কীভাবে পিঁপড়েরা যোগাযোগ করে এবং কেন তারা একে অপরের সাথে থেমে থেমে যোগাযোগ করে।</p> <p>পিঁপড়েরা মুখ দিয়ে কথা বলতে পারে না। তরে পারস্পারিক যোগাযোগের জন্য তারা এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে। সেটা ফেরোমোন নামে পরিচিত। পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগের সময় পিঁপড়ারা শরীর থেকে এই ফেরোমোন নিঃসরণ করে। এটি মূলত সংকেতের মতো কাজ করে, যা তাদের দলকে বিভিন্ন তথ্য জানায়। যেমন কোন দিকে গেলে খাবার পাওয়া যাবে বা কোনদিকে বিপদ লুকিয়ে আছে—ইত্যদি তথ্য সরবরাহ করে ফেরোমোনের মাধ্যমে।</p> <p>একটি পিঁপড়া যদি খাবারের পায় সন্ধান পায়, সেটা সে অন্য পিঁপড়াদের জানানোর দরকার মনে করে।, খাবারের উৎস থেকে তার বাসার দিকে ফেরার পথে ফেরোমোনের ছড়িয়ে দেয়। অন্যপড়ারা সেই ফেরোমোনের গন্ধ পেয়ে খাবারের উৎসের খুঁজে পায় সহজেই। তাই যখন দুইটি পিঁপড়া পরস্পরের সামনে দাঁড়ায়, তখন তারা মূলত একে অপরকে গন্ধ শুঁকে দেখে কোন পিঁপড়া খাবারের উৎসের দিকে যাচ্ছে এবং কোন পিঁপড়া ফিরে আসছে।</p> <p>শুধু খাবার নয়। বিপদে পড়লেও পিঁপড়ারা ফেরোমোন ব্যবহার করে। বিপদের আঁচ পেলে পিঁপড়ারা সম্পূর্ণ আলাদা আরেক ধরনের, বিশেষ ফেরোমোন ছিড়য়ে দিয়ে অন্যদের সতর্ক করে। এই সংকেত পেয়ে অন্য পিঁপড়ারা সাবধানে হয়ে যায়। পিঁপড়াদের দাঁড়িয়ে একে অপরের সাথে সংক্ষিপ্ত যোগাযোগের মাধ্যমে এই বিপদের সতর্ক বার্তা আদান-প্রদান করে।</p> <p>পিঁপড়ারা খুবই সামাজিক প্রাণী এবং তারা সব কাজ একসাথে দলবদ্ধভাবে করে। একে অপরের সাথে ফেরোমোন বিনিময় করে তারা জানতে পারে কার কাজ কী এবং কিভাবে সবার কাজ সহজতর করা যায়। কিছু পিঁপড়া হয়ত খাবার খুঁজতে যায়, আবার কিছু পিঁপড়া বাসা পাহারায় থাবে। এই ধরনের যোগাযোগ তাদের দলে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সাহায্য করে। </p> <p>ফেরোমোন ছাড়াও পিঁপড়ারা একে অপরকে শুঁড় দিয়ে স্পর্শ করে তথ্য আদান-প্রদান করে। এই স্পর্শের মাধ্যমে তারা চিনতে পারে কোন পিঁপড়া কোন দলের সদস্য এবং কী ধরনের কাজ করছে। এটি তাদের যোগাযোগের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি।</p> <p>পিঁপড়ারা একসাথে চলার সময় ঠিক কোন দিকে যাবে এবং কত দ্রুত যাবে, তা জানার জন্যও তারা যোগাযোগ করে। তাদের ফেরোমোনের রাস্তা ধরে চলতে গিয়ে, তারা মাঝে মাঝে থেমে দেখে নিচ্ছে যে তাদের পথে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা। যদি কোনো পরিবর্তন হয়, তবে তারা তা দ্রুত দলের বাকি সদস্যদের জানিয়ে দেয়।</p> <p>অর্থাৎ পিঁপড়াদের মধ্যে যে থেমে থেমে যোগাযোগ হয়, তা মূলত ফেরোমোন এবং স্পর্শের মাধ্যমে তথ্য বিনিময়। তারা খাবারের পথ নির্দেশনা, বিপদ সংকেত, দলে কাজের ভাগাভাগি এবং দিক নির্দেশনার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে। এই অসাধারণ পদ্ধতি তাদের সমাজকে সফলভাবে পরিচালিত করতে সহায়ক।</p> <p>সূত্র: হাউ ইট ওয়ার্কস</p>