<p>গুগলের বিরুদ্ধে ওয়েবসার্চের বাজারে মনোপলি করার অভিযোগ এনেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। এ মাসের শুরুতেই সার্চ মনোপলির মামলায় গুগলকে দোষী সাব্যস্ত করে রায়ও দিয়েছেন আদালত। তাহলে কি সমাপ্তি হতে যাচ্ছে গুগলের সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা? বিস্তারিত জানাচ্ছেন এস এম তাহমিদ।</p> <p>ইন্টারনেট মানেই গুগল, বলাটা ভুল নয়। সার্চ, মেইল, ভিডিও স্ট্রিমিং এবং মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম—সবখানেই গুগলের অবস্থান শীর্ষে। একটি কম্পানির হাতে এত বিশাল ক্ষমতা শুধু অশোভনই নয়, ব্যবহারকারী ও সেবাদাতাদের জন্য সেটা বিশাল সমস্যার, কেননা প্রতিযোগিতাহীন বাজারে গুগল স্বৈরাচারিতা চাইলেই দেখাতে পারে। আর তাই গুগলের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরকার অভিযোগ এনেছে, প্রতিষ্ঠানটি অবৈধভাবে বিজ্ঞাপন প্রযুক্তিতে মনোপলি সৃষ্টি করেছে।</p> <p>তারা অনলাইন বিজ্ঞাপন বাজারে আধিপত্য ধরে রাখতে বেশ কিছু নিয়মও ভঙ্গ করেছে। এর আগেও গুগলের বিরুদ্ধে ওয়েবসার্চের বাজারে মনোপলি সৃষ্টি এবং অবৈধ চুক্তির মাধ্যমে মনোপলি ধরে রাখার বিষয়ে মামলা করেছে দেশটির সরকার। এ মাসের শুরুতেই সার্চ মনোপলির মামলায় গুগলকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিয়েছেন আদালত। আগামী মাসে বিজ্ঞাপন প্রযুক্তির মনোপলি নিয়ে করা মামলাটির শুনানিও শুরু হবে।</p> <p><strong>অন্যরাও বা কিছু বলছে না কেন?</strong><br /> গুগলের বাইরেও বেশ কিছু সার্চ ইঞ্জিন বাজারে রয়েছে। কিন্তু গুগলের ধারেকাছেও তাদের অবস্থান নেই। অ্যাপল সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে, মাইক্রোসফট যত অর্থই ঢালুক না কেন, ম্যাক ও আইফোনে গুগলের বদলে তারা বিং ব্যবহার করবে না।</p> <p>গুগল সার্চের যাত্রা শুরু হয় ইন্টারনেটের একেবারে শুরুতে। ওই সময়ও ‘আস্ক জিভস’ বা ‘অল্টাভিস্টার’ মতো বেশ কিছু সার্চ ইঞ্জিন বাজারে ছিল। কিন্তু দ্রুতই নির্ভুল সার্চ রেজাল্ট হাজির করার মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের মন জয় করে নেয় গুগলের অ্যালগরিদম। এরপর জিমেইলের মাধ্যমে ই-মেইলের বাজার, ইউটিউবের মাধ্যমে ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফরম, ক্রোমের মাধ্যমে ব্রাউজার এবং অ্যানড্রয়েডের মাধ্যমে স্মার্টফোন বাজারে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে। ইন্টারনেটে ব্যবহারকারীরা যে কয়টি সেবা প্রতিনিয়ত ব্যবহার করে, তার বেশির ভাগেই গুগলের অবস্থান সবার ওপরে। ক্রোম ব্রাউজারের কারণে গুগল সার্চ ধরে রাখে তার অবস্থান।</p> <p>আবার ইউটিউবের দর্শকদের ক্রোম ব্রাউজারের দিকে ঠেলে দিয়ে তারা ব্রাউজার বাজারে আধিপত্য ধরে রাখে। অ্যানড্রয়েড, ক্রোম ও গুগল সার্চের মাধ্যমে তারা ব্যবহারকারীদের ডাটা প্রতিনিয়ত জোগাড় করে বাকি সব সার্চ ইঞ্জিনকে দাবিয়ে রাখে বলা যায়। প্রতিটি ওয়েবসাইট ও ওয়েবসেবা নির্মাতারা নিজেদের মনোপলির ফলে বাধ্য গুগলের সিস্টেম অনুযায়ী সাইট ও সেবা ডিজাইন করতে, ফলে গুগল সার্চের মনোপলি হয় আরো জোরদার। এ ধরনের আরো অগণিত প্রমাণের কারণেই আদালত রায় দিয়েছেন, গুগল সার্চ অবৈধভাবে মনোপলি তৈরি করে সেটা জোরদার করেছে।</p> <p><strong>গুগলের অ্যাডসেন্সেরই জয়জয়কার</strong><br /> মুদ্রার ওপিঠে, একই কারণে অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেওয়ার প্ল্যাটফরম হিসেবে গুগলের অ্যাডসেন্সও পরিণত হয়েছে মনোপলিতে। ইন্টারনেটের ট্রাফিক সবচেয়ে বেশি গুগলের দখলে থাকায় সবাইকে তারা একপ্রকার বাধ্য করেছে তাদের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য। অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন না দিলে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানো একপ্রকার অসম্ভব। ছোট কয়েক শ পাঠকের ব্লগ থেকে বড়সড় কয়েক কোটি ভিজিটর ট্রাফিকের ওয়েবসাইট—সব কটিতেই বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য অ্যাডসেন্স সেবা সবচেয়ে কার্যকর। অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে ইউটিউবেও বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়, অ্যানড্রয়েড ও আইওএস অ্যাপেও অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়া যায়। ইউটিউব এবং অ্যানড্রয়েড অ্যাপে বলা যায় অ্যাডসেন্স ছাড়া বিজ্ঞাপন দেওয়ার উপায়ও নেই। বিশাল পরিমাণ ট্রাফিক বাদ দিয়ে ব্যবসায় প্রসারও সম্ভব নয়। ফলে প্রতিনিয়ত গুগল স্বৈরাচারের মতো বিজ্ঞাপনের মূল্য এবং অ্যাডসেন্স পার্টনারদের সঙ্গে বিজ্ঞাপনের টাকা ভাগ করা নিয়ে ছিনিমিনি খেলে আসছে। কেননা অ্যাডসেন্স ব্যবহার না করার কোনো বিকল্প নেই। অ্যাডসেন্স ও গুগল সার্চের অ্যালগরিদমে অল্পবিস্তর তফাতই বড়সড় ব্যবসাও ডুবিয়ে দেয়। এমন নানাবিধ কারণেই সেপ্টেম্বরে শুনানি হতে যাচ্ছে আরেকটি মামলার।</p> <p>সবচেয়ে বড় সমস্যা, গুগলকে মনোপলি হিসেবে চিহ্নিত করলেও সেটা বন্ধ করা খুবই কঠিন। মার্কিন আদালত এরই মধ্যে স্বীকার করেছেন, গুগলের মনোপলি ভাঙার জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। গুগল দ্রুতই তার অবস্থান হারাচ্ছে না।</p>