<p>ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, পার্বত্য সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও মনস্তত্ত্বের পরিবর্তন দরকার। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সব সময় রাজনৈতিক সমাধানে সচেষ্ট ছিল। এমনকি জেনারেল এরশাদের সময়ও তারা আলোচনা অব্যাহত রেখেছিল।</p> <p>পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি প্রতিষ্ঠার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করেছে। এ উপলক্ষে রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আজ বুধবার আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।</p> <p>সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য সাধুরাম ত্রিপুরা মিল্টন। আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, লেখক-সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, আদিবাসী ফোরামের সহসাধারণ সম্পাদক ডা. গজেন্দ্রনাথ মাহাতো, জনসংহতি সমিতির তথ্য ও প্রচার বিভাগের সদস্য দীপায়ন খীসা, ঢাকা মহানগর পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জগদীশ চাকমা প্রমুখ।</p> <p>রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘পার্বত্য সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যেই পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সৃষ্টি। কাপ্তাই বাঁধের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েই পাহাড়ের তৎকালীন তরুণরা সংগঠিত হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি গঠন করে তারা। এই দলটি স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করেছে যে, বাংলাদেশে বাঙালি ভিন্ন আপরাপর আদিবাসীদের স্বীকৃতি চেয়েছেন। সেটা অনিয়মতান্ত্রিকভাবে নয়, সংবিধানের আওতার মধ্য দিয়েই এই স্বীকৃতি চেয়েছেন।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘জিয়াউর রহমান যখন পাহাড়ের সমস্যাকে সামরিক সমাধানের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই জনসংহতি সমিতি সশস্ত্র আন্দোলনে যায়। জিয়া পাহাড়ে কেবল ক্যান্টনমেন্ট বাড়াননি, বাঙালি অভিবাসীদের পাহাড়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে সামরিক প্রশাসনের আওতার মধ্যে রেখেই বসবাস করিয়েছিলেন। যা স্থায়ী সংকট তৈরি করেছে।’</p> <p>সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘দেশের প্রচলিত ধারার রাজনৈতিক দলগুলো থেকে জনসংহতি সমিতি আলাদা। তারা যে দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম করেছে এবং কী সংকটের মধ্যে এখনো লড়াই করছে, এটা আমরা কমবেশি জানি। তাদের এই সংগ্রাম একটি ভিন্ন মাত্রার সংগ্রাম। তাদের মধ্যে বিভেদ ঘটানোর জন্য একেবারেই সরাসরি রাষ্ট্রসহ বিভিন্ন পক্ষ থেকে ইন্ধন দেওয়া হচ্ছে। এটা একটা বড় সংকট। তার মধ্যেও লক্ষ্য অর্জনে তারা তাদের ভূমিকা পালন করবে, প্রত্যাশা করছি। কারণ এ লড়াই শুধু জুম্ম জনগোষ্ঠীর সাথে সম্পর্কিত নয়, দেশের অগ্রগতির সাথে জড়িত। এ লড়াই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথেও জড়িত।’</p> <p>সাংবাদিক আবু সাইদ খান বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন থেকে যে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু হয়, সে লড়াইয়ের একপর্যায়ে আদিবাসীরাও যুক্ত হয়েছিল। সংগত কারণে সে লড়াইটা বাঙালির জাতীয়তাবাদের আন্দোলন ছিল। কিন্তু স্বাধীনতা উত্তরকালে ওই আন্দোলনে শামিল হওয়া আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়নি।’</p> <p>অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশনের কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। বিভিন্নভাবে পদে পদে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। গণতন্ত্রের সুফল পাচ্ছে না পার্বত্য জনগোষ্ঠী। এ ক্ষেত্রে দেশকে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যে সমস্ত বিষয় জাতীয় জীবনে প্রয়োজন তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে জনসংহতি সমিতি।’</p> <p>সভাপতির বক্তব্যে সাধুরাম ত্রিপুরা বলেন, ‘নোংরা রাজনীতিকে সুষ্ঠু রাজনীতি দিয়ে ঠেকিয়ে রাখবার জন্যই আমরা রাজনীতি করেছি। আমরা যুদ্ধ চাইনি। রাষ্ট্র আমাদের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল। সেই যুদ্ধকে ঠেকিয়ে দেওয়ার জন্যই যুদ্ধ করেছি। সামরিক কর্তৃত্ব যখন রণক্লান্ত এবং বুঝলেন যে, পাহাড়ের সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান করতে হবে, তখনই আমরা চুক্তিতে উপনীত হই। বাংলাদেশের সংবিধানকে সমুন্নত রেখেই আমরা পার্বত্য চুক্তি করেছি। সেই চুক্তি অবিলম্বে বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাই।’</p>