<p>টানা চতুর্থবারের মতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা সবেমাত্র সম্পন্ন হলো। মোট ২৪টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে একটি গুচ্ছ এবং আটটি কৃষি ও তিনটি প্রকৌশল এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে দুটি আলাদা গুচ্ছে এই ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। নতুন এই পদ্ধতিতে শুরু থেকেই বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। মধ্যম সারির অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এই পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু তখনকার সরকারের প্রচল চাপে তা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। মোটাদাগে এই পদ্ধতিতে অনেকগুলো সমস্যা দেখা দেয়। যেমন দেরিতে ভর্তি বা ভর্তির দীর্ঘসূত্রতা, ভালো শিক্ষার্থী না পাওয়া, নিজস্ব স্বাধীনতা না থাকা, সমন্বয় না থাকা ইত্যাদিসহ আরো অনেক কিছু। তবে একটি সমস্যা আমার কাছে প্রবল মনে হয়েছে আর তা হলো পরীক্ষা গ্রহণ পদ্ধতি।</p> <p>দেখা যায়, কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তীচ্ছুদের কাছাকাছি আসনে বসিয়ে পরীক্ষা নিচ্ছে। আবার অন্যরা ব্যতিক্রম। এতে সাম্য ও সমতা বজায় থাকছে না। এ সমস্যা সমাধান একমাত্র সচেতনতা। নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রশাসন সচেতন হলে এ সমস্যা থাকার কথা নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনসংখ্যা সীমিত হলে পার্শ্ববর্তী কোনো স্কুল কিংবা কলেজে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। অন্য সমস্যাগুলো আস্তে আস্তে মোকাবেলা করা সম্ভব। আমাদের বিশ্বাস, যদি এই পদ্ধতি টিকে থাকে, তাহলে একটি সময় মানসম্মত পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হবে। এই পদ্ধতির একটি এবং একমাত্র বড় সুবিধা শিক্ষার্থীদের এক শহর থেকে অন্য শহরে পরীক্ষা দিতে যেতে হচ্ছে না। তাদের শারীরিক কষ্ট ও আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ অনেক কমে গেছে।  </p> <p>আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সংখ্যা ৫৫। এর মধ্যে কয়েকটি এখনো শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। ইউজিসি এখন পর্যন্ত গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দেয়নি। এরই মধ্যে গুচ্ছভুক্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে পরীক্ষা নেওয়ার তারিখ ঘোষণা করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করেছে, যদিও তারা গুচ্ছভুক্ত নয়। বিগত সরকার একটি একক পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তা করেছিল, কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় তা সম্ভব হবে কি না সন্দেহ। কেননা আমাদের ধারণা তখনকার সময় চাপে পড়ে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় একক পদ্ধতির প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। এমনকি গুচ্ছ পদ্ধতিতেও অনেকের প্রবল আপত্তি রয়েছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রবল আপত্তি থাকা সত্ত্বেও এই পদ্ধতিভুক্ত হয়েছিল। ফলে এই পদ্ধতি নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ক্ষোভ এখনো আছে এবং থাকবে।</p> <p>সবেমাত্র এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের মনে হয়, ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গুচ্ছ পদ্ধতি কার্যকর রাখার কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকলে বেশ কিছু মধ্যম সারির বিশ্ববিদ্যালয় এ বছর আলাদাভাবে পরীক্ষা নেবে। বিশ্বদ্যািলয়ের নিজস্বতা বজায় রাখা এবং স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ এ পদক্ষেপ নেবে। এখন প্রশ্ন হলো আমরা পুরোপুরি এই পদ্ধতির বিলোপ চাই কি না। আর চাইলে আমাদের কী কী সমস্যা হতে পারে। এ ব্যাপারে আমাদের একটু চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।</p> <p>মনে রাখতে হবে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেক বেশি। আমাদের রয়েছে অনেক পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়, যাদের অভিজ্ঞ শিক্ষক, একটি দক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো এবং বৃহৎ অবকাঠামো রয়েছে, তাদের পক্ষে এককভাবে পরীক্ষা নেওয়া কোনো বিষয়ই না এবং তারা বছরের পর বছর তা করে আসছে। মধ্যম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও দক্ষ হয়ে উঠেছে। তাদেরও অবকাঠামো, দক্ষ শিক্ষক এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। তাদের পক্ষেও এককভাবে পরীক্ষা নেওয়া অসম্ভব নয়। এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান বিভাগীয় এবং বড় বড় শহরে হওয়ায় সমস্যা নেই। কিন্তু সমস্যা অপেক্ষাকৃত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে। এর মধ্যে কয়েকটি এ বছর শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে। কয়েকটি গত বছর কিংবা তার আগের বছর থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি করে আসছে। এগুলোর অবস্থান, অবকাঠামো, শিক্ষকসংখ্যা, অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলী ইত্যাদি বিবেচনায় আনলে তাদের পক্ষে এককভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া অসম্ভব বলছি না, তবে একটু কঠিন। ভর্তি পরীক্ষা একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। এখানে প্রশ্নপত্র তৈরি করা এবং প্রশ্নের নিরাপত্তা বিধান একটি বড় বিষয়। এমনকি ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া একটি বড় কাজ। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষে এ কাজ করা একটু কঠিনই মনে হয়।</p> <p>আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেক বেশি। আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পাস হয়ে বসে আছে, অন্য কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। তখন সমস্যা আরো বেশি হবে। কাজেই আমাদের একটি সুনির্দিষ্ট পথ বের করতে হবে। আমার ব্যক্তিগত মতামত গুচ্ছ পদ্ধতি একেবারে বিলুপ্তির পক্ষে নয়। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় এই পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসতে চায়, তারা আলাদাভাবে পরীক্ষা নিতে পারে। কিন্তু অপেক্ষাকৃত নতুন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এই পদ্ধতি চালু রাখা শ্রেয়। এতে লাভবান হবে নতুন বিশ্ববিদ্যলয়গুলো।</p> <p>একটি মধ্যম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে কিংবা ইউজিসির তত্ত্বাবধানে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে। তাদের সংখ্যা ১৫ কিংবা ২০ হতে পারে। অন্ততপক্ষে শিক্ষার্থীদের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে। আমরা যেমন শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘব করতে চাই, তেমনি একটি স্বচ্ছ ও মানসম্মত ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে চাই। কাজেই নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে তাকিয়ে হলেও আমাদের এই পদ্ধতি একেবারে বিলোপ করা উচিত হবে না।  </p> <p><em>লেখক : অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়</em></p> <p><em>neazahmed_2002@yahoo.com</em></p> <p> </p>