<p>অস্কারজয়ী সংগীতপরিচালক এ আর রহমান। এই ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিল্পীর জনপ্রিয়তা গোটা বিশ্বজুড়ে। মিউজিকে ভিন্নতা সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে তার জুড়ি মেলা ভার। ঠিক এ আর রহমানের মতোই বাংলাদেশে একজন শিল্পীর আগমন ঘটেছিল একবিংশ শতাব্দীর শূন্য দশকে। মিউজিকের ওপর অসামান্য দখল নিয়ে যাত্রা করা এই শিল্পী পেয়েছেন আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তাও। বলছি এই প্রজন্মের অন্যতম সফল ও জনপ্রিয় গায়ক ও সংগীতপরিচালক হাবিব ওয়াহিদের কথা। আজ এই জনপ্রিয় গায়ক ও সুরকারের জন্মদিন। বিশেষ দিনে কথা বলেছেন কালের কণ্ঠের সঙ্গে। জানিয়েছেন নিজের হালচাল। তাঁর সঙ্গে আলাপ জমিয়েছেন কামরুল ইসলাম।</p> <p><strong>জন্মদিনের শুভেচ্ছা। কিভাবে কাটাবেন আজকের দিন?</strong></p> <p>ধন্যবাদ। জন্মদিন নিয়ে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা থাকে না কখনো। পরিবারের সঙ্গেই কাটাব।<br />  <br /> <strong>‘তুফান’ ছবির ‘ফেঁসে যাই’-এর পর নতুন কী করছেন? </strong></p> <p>একটি গান করেছি মুজার সঙ্গে। শিগগিরই আসবে। দিনক্ষণ আমি এখনই বলতে পারছি না। মুজার সঙ্গে এর আগে একটি গান করেছিলাম—‘বেনি খুলে’। ওটার চেয়ে এটা অনেক ভিন্ন। এখানে একটি সামাজিক বার্তাও রয়েছে। এখন দিনশেষে মানুষের ভালো লাগে কি না, সেটা প্রকাশের পর বোঝা যাবে।<br />  <br /> <strong>ক্যারিয়ারের দুই দশক পেরিয়েছে। এখনো আপনার নতুন গানের জন্য শ্রোতাদের বিপুল আগ্রহ দেখা যায়। এই অবিরাম ভালোবাসার বিপরীতে কিছু বলতে চান?</strong></p> <p>এটুকুই বলি, অন্তর থেকে সবাইকে ধন্যবাদ। নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি আমি। এত দিনের ক্যারিয়ার, এখনো মানুষের এত ভালোবাসা দেখলে নিজেকে অতিভাগ্যবান মনে হয়।</p> <p><strong>জনপ্রিয়তা, পুরস্কার অনেক কিছুই অর্জন করেছেন। আর কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আছে? </strong></p> <p>হ্যাঁ অবশ্যই। যে প্রাপ্তির কথা বললেন, সেগুলো দেশের ভেতরে। এখন আমি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো প্রাপ্তির মাধ্যমে দেশের সুনাম বয়ে আনতে চাই। যদি পারি, সেটা হবে আরো বড় প্রাপ্তি।</p> <p><strong>সংগীতের বৈশ্বিক বাজারে আমাদের অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে...</strong></p> <p>আমি আর তাহসান গ্র্যামিতে ইনভাইটেড গেস্ট হয়েছিলাম, ওটা অংশগ্রহণ না। অনেকেই আমন্ত্রিত হন। আমরাও একভাবে আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। এ রকম আন্তর্জাতিক ইভেন্টে অংশগ্রহণ করতে চাইলে, কাজের সঙ্গেও আন্তর্জাতিক যোগসূত্র লাগবে। ইউটিউব ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যাটফরম হলেও সেখানে তো আমরা বাংলা গানই প্রকাশ করি। আর সে গানগুলো বিদেশেও যারা শোনে, তারাও মূলত বাঙালি। সুতরাং গানগুলো আন্তর্জাতিক অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছাচ্ছে না।</p> <p><strong>কনসার্টে আপনাকে কম পাওয়া যায়। কেন?</strong></p> <p>ইচ্ছাকৃত কম করি, তা না। এখানে টেকনিক্যাল কিছু বিষয় আছে। আমার জন্য সাউন্ডচেক খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাউন্ডচেক ঠিকঠাক না হলে পারফরম্যান্সে সমস্যা হয়। যে কনসার্টে অনেক শিল্পী বা ব্যান্ড থাকে, দেখা যায় তাদের গানের ধরন কাছাকাছি। সে কারণে তাদের অত সমস্যা হয় না। কিন্তু আমার সেটআপ, সাউন্ড একটু আলাদা। সেটা নড়চড় হয়ে গেলে মনমতো পারফরম করা যায় না। এসব কারণে কিছু বাজে অভিজ্ঞতাও হয়েছে। তাই কম কনসার্ট করি।</p> <p><strong>আপনার উত্থানের পেছনে ফোক গানের ভূমিকা আছে। ফোক নিয়ে নতুন কিছু ভাবছেন?</strong></p> <p>নতুন ফোক গান করতে চাই। কিন্তু এখন গান প্রকাশিত হয় ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে। এখানে গানের স্বত্বাধিকারের তথ্য নির্ভুল থাকা জরুরি। নাহলে পরে সেটা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। অনেক পুরনো গানের লেখক বা সুরকার জীবিত নেই। তাঁদের অবর্তমানে গানের স্বত্ব কার? ব্যক্তি পর্যায়ে এসব গবেষণা কঠিন। আমি যখন ফোক গান করেছি, সেগুলো মিউজিক কম্পানি থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। তো গানের স্বত্বের বিষয়গুলো তারাই ডিল করত। আমি শুধু মন দিয়ে মিউজিক করেছি।</p> <p><strong>বলা হয়, সংগীতাঙ্গনে কেউ কারো না। কিন্তু আপনার সান্নিধ্যে অনেকেই আলোয় এসেছেন...</strong></p> <p>যদি দেখি কারো মধ্যে প্রতিভা আছে, তাকে একটু উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টা করি। যেন সে আরো ভালো কিছু করতে পারে। যার ট্যালেন্ট আছে, সেটা তার নিজের গুণ। প্রতিভা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত জিনিস। দেখুন, চারাগাছ বড় হয়ে ফুল ফোটাবেই। সে গাছে যদি কেউ একটু পানি দেয়, তাহলে ফুলটা আরেকটু হৃষ্টপুষ্ট হবে, এটুকুই। কিন্তু ফুল ফোটানোর ক্ষমতা তো অন্য কারো নেই। একজন সফল মানুষ এসে যদি বলে, ‘আরে, তোমার মধ্যে তো ট্যালেন্ট আছে, তুমি পারবে’—তখন ভেতরের সুপ্ত আত্মবিশ্বাস জেগে ওঠে। ব্যাসিকলি এটা মাছের তেল নিয়ে মাছ ভাজার মতো। এর জন্য আলাদা তেল আনতে হয় না। ওই উৎসাহটুকুই দিই আমি। আমি তাদের অনেক কিছু শিখিয়েছি, তাদের প্রতিভায় কিছু যোগ করেছি, বিষয়টা এমন না।</p> <p><strong>আপনার বাবার (ফেরদৌস ওয়াহিদ) পর আপনি, এখন আপনার ছেলেও (আলিম ওয়াহিদ) মিউজিকে সম্পৃক্ত হচ্ছে। ওয়াহিদ পরিবারে সংগীতের ভবিষ্যৎ কেমন দেখতে চান? </strong></p> <p>আমার বাবা জানতেন না, আমি মিউজিকে আসব। এটা ন্যাচরালি হয়েছে। একইভাবে আমিও জানতাম না, আলিম মিউজিক করবে। এ কারণে ভবিষ্যৎ ধারণা করা কঠিন। আলিম যদি নিজের ইচ্ছায় মিউজিক করে, তাহলে সংগীতে ওয়াহিদ পরিবারের আরো বিকাশ ঘটবে। বাবা যেমন আমাকে কখনো জোর করেননি, বাধাও দেননি। আমারও একই ভাবনা। আলিমই বেছে নেবে, সে আসলে কোন দিকে এগোবে।</p>