<p>সাতক্ষীরা থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাছ পরিবহণকালে ট্রাক থামিয়ে বছরে ২০ কোটি টাকার মাছ ছিনিয়ে নেন কোস্ট গার্ডের দুই সদস্য জিনায়েত হোসেন ও মো. ইমরান হোসেন। এ অভিযোগে শনিবার (৯ নভেম্বর) মানববন্ধন করেছে সাতক্ষীরা জেলার মৎস্য ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র মৎস্য ব্যবসায়ীরা।</p> <p>ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, এই কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করছেন ওই এলাকার কথিত সোর্স রাজিব। বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে ছিনিয়ে নেওয়া বাগদা গলদা, ভেটকি, ভাঙানসহ বিভিন্ন প্রজাতির এসব মাছ পুনরায় বিক্রি করা হচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে।</p> <p>মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘আমাদের সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর, আশাশুনি, কালিগঞ্জ, দেবহাটা ও সাতক্ষীরা সদরসহ পার্শ্ববর্তী জেলা খুলনার পাইকগাছা, কয়রা এবং যশোর জেলার মনিরামপুর, কেশবপুর থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি ট্রান্সপোর্ট দৈনিক ১০০ থেকে ১৫০টি ট্রাকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাছ সরবরাহ করে। কিন্তু বিগত প্রায় দুই বৎসর যাবৎ এসব এলাকায় মাছ পরিবহণকালে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ঢাকা জোনের বিসিজি মাওয়া স্টেশনের সদস্য জিনায়েত হোসেন এবং বিসিজি পাগলা স্টেশনের সদস্য মো. ইমরান হোসেনের নেতৃত্বে কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা/কর্মচারী ও মাওয়া-পাগলা বিসিজি স্টেশনের প্রধান সোর্স রাজিবসহ একাধিক সোর্সের যোগসাজশে মাছ বোঝাই ট্রাকগুলো পদ্মসেতু পার হওয়ার পর সিভিল পোশাকে সিগন্যাল দিয়ে ট্রাকগুলো থামান। তারপর ড্রাইভার ও হেলপারের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তাদেরকে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে শারীরিক নির্যাতন করেন এবং ট্রাক থেকে মাছ নামিয়ে নিয়ে মাছে পুশ করা আছে মর্মে তাদের থেকে স্বীকারোক্তি নেন। পরে চিংড়িসহ বড় সাইজের ভেটকি, ভাঙান ও বিভিন্ন প্রজাতির বড় মাছ ছিনিয়ে নেন তারা।’ </p> <p>বক্তারা আরো বলেন, ‘উক্ত ট্রাকগুলো সারারাত আটকে রেখে ভোরে ছেড়ে দেন। ফলে ট্রাকগুলো সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে না পেরে কম দামে মাছগুলো বিক্রি করতে হয়। অপরদিকে কোনো প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই অপদ্রব্য পুশ করা বলে ছিনিয়ে নেওয়া মাছগুলো সকালে ঢাকাসহ বিভিন্ন বাজারে সোর্সের মাধ্যমে বিক্রয় করে উক্ত টাকা তারা পকেটে পুরান। যার কয়েকটি মাছ বিক্রির রশিদ সাতক্ষীরার ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন মাধ্যমে সংগ্রহ করেছেন।’</p> <p>অভিযোগ জানিয়ে বক্তারা বলেন, একটি ট্রান্সপোর্টের ট্রাক থেকে ১১টি ঘটনায় ৪০৩ কর্কসিট মাছ ছিনিয়ে নিয়েছেন তারা। যার বাজার মূল্য প্রায় ১ কোটি টাকা। এভাবে প্রতিনিয়ত তারা সকল ট্রান্সপোর্টের ট্রাক থেকে বছরে প্রায় ২০ কোটি টাকার বৈধ চিংড়ি ও বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ছিনিয়ে নিচ্ছেন। এতে সাতক্ষীরা জেলার মৎস্য ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ীসহ ক্ষুদ্র মৎস্য ব্যবসায়ীরা ব্যবসায়িকভাবে ও আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির মুখে পড়ছেন। সেই সঙ্গে দক্ষিণ বঙ্গের চিংড়িসহ মৎস্য খাত দিন দিন হুমকির মুখে ফেলছেন এসব অসাধু কর্মকর্তারা। </p> <p>মানববন্ধনে তারা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ মহাসড়কে গাড়ি থামানো বন্ধ করে প্রয়োজনে মাছের লোড পয়েন্ট ও আনলোড পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে ট্রাকগুলো চেক করুক। গভীর রাতে নির্জন মহাসড়কে এ ধরনের চেকের নামে মাছ লুট বন্ধ করার জোর দাবি জানান ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা। এছাড়া ইতোমধ্যে কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা।</p> <p>সাতক্ষীরা সুলতানপুর বড় বাজারের মৎস্য ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মৎস্য ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী মো. শফিকুল ইসলাম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. জয়নাল আবেদীন, আবু জাফর, রোকনুজ্জামান, রহমত উল্লাহ, উত্তম বাবু, রনো বাবু, ট্রাক চালক রবিউল ইসলাম, শাহজাহান আলী প্রমুখ। এছাড়া ‍উপস্থিত ছিলেন শতাধিক ভুক্তভোগী।</p>