<p>কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে র‌্যাব পরিচয়ে বিকাশের ২৭ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় ডাকাতদলের নেতাসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১১। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন র‌্যাব-১১ কুমিল্লা অঞ্চলের উপপরিচালক মাহমুদুল হাসান। </p> <p>এ সময় ডাকাতদলের কাছ থেকে র‌্যাবের পোশাক, স্টিকার এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ওয়াকিটকিসহ বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। </p> <p>মাহমুদুল হাসান জানান, ২৭ অক্টোবর বিকেলে ঢাকা-চট্টগ্রামস চৌদ্দগ্রাম এলাকায় র‌্যাব পরিচয়ে বিকাশের কর্মচারীর গাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় তার কাছ থেকে ২৬ লাখ ৯২ হাজার টাকা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয় ডাকাতদল। এ ঘটনায় বিকাশ ডিস্ট্রিবিউশন ম্যানেজার কুতুবউদ্দিন শাওন বাদী হয়ে চৌদ্দগ্রাম থানায় অজ্ঞাতনামা পাঁচজনকে আসামি করে একটি মামলা করেন।</p> <p>মাহমুদুল হাসান আরো জানান, ডাকাতির ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে র‌্যাব। পরবর্তীতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, ডাকাতদলের সদস্যরা জেলার চান্দিনা থানা এলাকায় ফের ডাকাতির পরিকল্পনা করছে। এ প্রেক্ষিতে ডাকাতদলকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে র‌্যাব-১১ কর্তৃক গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়। </p> <p>সোমবার রাতে চান্দিনা থানাধীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর দুজন ডাকাতির শিকার হয়েছেন এবং ডাকাতদল ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করেছে বলে জানায় সূত্র। ডাকাতচক্রকে হাতেনাতে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে দাউদকান্দি টোল প্লাজা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব-১১-এর একটি আভিযানিক দল।</p> <p>চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানার বজ্রাকুঞ্চিবাড়ী এলাকার কাছু শেখের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩২), একই থানার উত্তর শ্রীপুর গ্রামের নাসির আলীর ছেলে সাজু মিয়া (৩৩), কালিরখামার গ্রামের গয়সাল ব্যাপারীর ছেলে মো. সাজু (৪৪), মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থানার ইমামপুর গ্রামের রবিউল আওয়ালের ছেলে মো. রিয়াদ (১৯), একই গ্রামের আজিজুর রহমানের ছেলে মো. সজিব (৩৫), ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার থানারকান্দি গ্রামের তপদর হোসেনের ছেলে মো. রবিউল (২৬), মাদারীপুর জেলার শিবচর গ্রামের টিংরামারী গ্রামের আলী আকবরের ছেলে মো. মানিক (৪০), নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার দক্ষিণ কুলচরিত্র গ্রামের আবুল কালামের ছেলে রিপন সর্দার (২৯) ও পটুয়াখালীর গলাচিপার চরবিশ্বাস গ্রামের আবদুল হক হাওলাদারের ছেলে রিপন হাওলাদার (৪৫)।</p> <p>র‌্যাবের এই উপপরিচালক জানান, এ সময় ডাকাতদল থেকে নগদ ৩৫ হাজার ৩৫৮ টাকা, ৩টি র‌্যাব জ্যাকেট, ১টি নকল পিস্তল, ১টি পিস্তল কভার, ১টি স্বর্ণের চেইন, ২টি আংটি, ১টি ইলেকট্রিক শকার, ২টি ওয়াকিটকি, ৭টি মোবাইল, ২টি র‌্যাব মনোগ্রামযুক্ত স্টিকার, ১টি লাঠি, ৩টি টর্চলাইট, ১টি ওয়্যারলেস টকিং টুল, ১টি হ্যান্ডকাফ, ৮টি মানিব্যাগ, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ১টি নোহা প্রাইভেট কার ও ১টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা ডাকাতির সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার তথ্য প্রদান করেছে। </p> <p>জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা সংঘবদ্ধ একটি আন্ত জেলা ডাকাতচক্র এবং চক্রের মূল হোতা সাইফুল ইসলাম। এই চক্রে ১০-১২ জন সদস্য রয়েছে। সাইফুলের নেতৃত্বে তারা প্রায় ১-২ বছর ধরে কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় র‌্যাব পরিচয়ে ডাকাতি করে আসছিল। </p> <p>তারা আরো জানায়, ২৭ অক্টোবর ডাকাতির উদ্দেশ্যে চৌদ্দগ্রাম থানাধীন কালী কৃষ্ণনগর এলাকায় চট্টগ্রাম-ঢাকাগামী রাস্তার ওপর মাইক্রোবাস নিয়ে অবস্থান করছিল ডাকাতরা। এ সময় বিকাশের দুই কর্মচারী তাদের সঙ্গে থাকা টাকা নিয়ে প্রাইভেট কার দিয়ে কুমিল্লা শহরের দিকে আসছিলেন। এদিকে একটি মোটরসাইকেল দিয়ে ডাকাতদের দুই সদস্য আগে থেকেই ভুক্তভোগীদের অবস্থানের তথ্য সরবরাহ করছিলেন। </p> <p>এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ডাকাত নেতা সাইফুলের নির্দেশে আসামিরা তাদের গাড়িকে অনুসরণ করতে থাকে। সুযোগ বুঝে বিকাশ কর্মচারীদের পথরোধ করে তারা। এ সময় ডাকাত দলের ৩-৪ জন সদস্য তাদের গাড়ি থেকে নেমে বিকাশ কর্মচারীদের নিকট হতে টাকা ভর্তি ব্যাগটি জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয় এবং বিকাশ কর্মচারীদের জিম্মি করে তাদের গাড়িতে তুলে নেয়। পরবর্তীতে বিকাশের কর্মচারীদের গাড়ির ভেতরে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে হাত-পা বেঁধে কুমিল্লা জেলার চান্দিনা থানা এলাকায় ফেলে চলে যায় ডাকাতদল।</p> <p>উপপরিচালক আরো বলেন, গ্রেপ্তারদের চৌদ্দগ্রাম থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।</p>