<p>ডান পায়ে কমপক্ষে ২০০ ছরার গুলির চিহ্ন। গুলিগুলো চামড়ার নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এসব গুলির যন্ত্রণায় ছটফট করে দিনাতিপাত করছে আবুল হাসেম (১৬)। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় মনিহারি দোকানে বসা থাকায় অবস্থায় পুলিশ গুলি ছোড়ে। এতে মালিক নিহত হলেও বেঁচে যান তিনি। ২০ জুলাই বিকেলে এমন ঘটনা ঘটেছিল গাজীপুরের সাইনবোর্ড এলাকায়। তার শরীর থেকে ১০টি গুলি বের করা হলেও বাকিগুলো রয়ে গেছে।</p> <p>চিকিৎসকরা জানান, ছররাগুলিতে ধীরে ধীরে হাসেম পঙ্গুত্ব বরণ করতে পারে। আর এ অবস্থায় পা থেকে ছররা গুলি বের করা হলে রক্তশূন্যতায় মৃত্যুর ঝুঁকি থাকতে পারে। এখন জরুরি ভিক্তিতে তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। তবে উন্নত চিকিৎসার জন্য সামর্থ্য হাসেমের পরিবারের নেই। হাসেম মনিহারি দোকান থেকে যা পেতেন তা দিয়ে কোনো মতে সংসার চলত।</p> <p>হাসেমের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার আচারগাও ইউনিয়নের সিংদই গ্রামে। তার বাবা আব্দুল হেলিম গ্রাম পুলিশ। ছেলের ও নিজের সামান্য আয় দিয়ে কোনো মতে চলছিল সংসার। </p> <p>হাসেম জানান, প্রাইমারি পর্যন্ত পড়ে সংসারের হাল ধরতে গাজীপুরে এক আত্মীয়ের কাছে চলে আসেন হাসেম। মো. হুমায়ুন নামের এই আত্মীয়ের একটি মনিহারি দোকান আছে গাজীপুরের সাইনবোর্ড এলাকায়। বছর চার আগে দোকানের কর্মচারী হয়ে কাজ শুরু করে হাসেম। </p> <p>২০ জুলাই দোকানে কাজে ব্যস্ত ছিল হাসেম। ওই সময় মালিক হুমায়ুনও দোকানে ছিলেন। ওই সময় পাশেই একটি সড়কে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মিছিল চলছিল। পুলিশ ওই মছিলে ধাওয়া করলে অনেকে ছোটাছুটি করে। তখন একদল পুলিশ গুলি ছুরতে ছুরতে দোকানের কাছে এসে পড়ে। তখন কাউকে না পেয়ে দোকানে প্রবেশ করে গুলি ছোড়ে তারা। এতে মালিক গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন, সঙ্গে হাসেমও আহন হয়। পরে দুজনকেই হাসপাতালে নিলে  চিকিসাধীন অবস্থায় মালিক মারা যান এবং বেঁচে যায় হাসেম। </p> <p>হাসপাতালে থাকলেও পাঁচ দিন পর থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা চালালেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। </p> <p>হাসেম জানায়, তার বাড়িতে কিছুই নেই। ধার-দেনা করে বাবা প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ করেছেন। এখন আর পারছেন না। ফলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার কারণে ডান পা মাঝেমধ্যে অবশ হয়ে যায়। ব্যাপক যন্ত্রণা করে।</p> <p>আহত হাসেমের বাবা আব্দুল হেকিম বলেন, ‘এই হাসেমই আমার একমাত্র উপার্জনের পথ ছিল। ভিটা ছাড়া নিজের কিছুই নেই। এ পর্যন্ত কেউ খবরও নেয়নি।’ নিহত-আহত অনেকেই আর্থিক সহযোগিতা পেলেও তার ছেলে কিছুই পায়নি। তিনি সরকারের কাছে সাহায্য নয়, ছেলের চিকিৎসার সহযোগিতা চান।</p>