<p>জামালপুরের বকশীগঞ্জে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার ও সাধারণ মানুষ পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করছেন। ডাক্তারের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সমাবেশ করেন স্থানীয় নারীরা। এর আগে হাসপাতালে হামলায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন ডাক্তাররা। কয়েকদিন ধরে এই কর্মসূচি পালনের কারণে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে।</p> <p>স্থানীয় সূত্র জানায়, গুরুতর অসুস্থ হয়ে ২৮ অক্টোবর বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন পৌর শহরের চরকাউরিয়া গ্রামের রিকশা চালক রজব আলী (৩২)। ওইদিন রাতে মারা যান তিনি। মারা যাওয়ার পর রজব আলীর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে ডাক্তার আসমা লাবনীর বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে হাতাতাতি হয়। </p> <p>এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ অক্টোবর কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়ে হাসপাতাল ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন ডাক্তার ও কর্মচারীরা। রজব আলীর পরিবারের সদস্য, স্থানীয় সদ্য অপসারিত কাউন্সিলর ও তিনজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মোহাম্মদ আজিজুল হক। </p> <p>মামলায় ৫ নভেম্বর পর্যন্ত মোট তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একজন আসামি জামিনে রয়েছেন। আত্মগোপনে রয়েছেন অন্য নামীয় আসামিরা। মামলার পর চরকাউরিয়া গ্রামে সাঁড়াশি অভিযান চালায় পুলিশ। ফলে পুলিশের ভয়ে পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে চরকাউরিয়া গ্রাম। অনেক বাসা বাড়ি তালাবদ্ধ।</p> <p>এ অবস্থায় হয়রানি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য চরকাউরিয়া গ্রামের মহিলারা হয়রানি বন্ধ ও মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ৫ নভেম্বর গণমিছিল ও সমাবেশ করেন। সমাবেশে নেতৃত্ব দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সরকার রাসেল। অন্যদিকে, ২৯ অক্টোবর থেকেই ঘটনার প্রতিবাদে মিছিল ও সমাবেশ করে আসছেন বকশীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মরত ডাক্তার ও কর্মচারীরা। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন আজিজুল হক।</p> <p>এ পরিস্থিতিতে বিব্রত স্থানীয় প্রশাসন। হাসপাতালে ২৮ অক্টোবরের ঘটনার ছবি ও ভিডিও ধারণ করায় স্থানীয় সাংবাদিকদেরও প্রতি চরমভাবে ক্ষুব্ধ আজিজুল। এ কারণে তিনজন সাংবাদিককেও আসামি করা হয়েছে। </p> <p>আজিজুল বলেছেন, সাংবাদিকদের গাছের সঙ্গে বেঁধে লাল থেরাপি দেওয়া হবে। তিনি সাংবাদিকদের বকশীগঞ্জ থেকে বিতাড়িত করার ঘোষণাসহ নানা অশালীন ও মানহানিকর বক্তব্য দেন। সাংবাদিকদের নিয়ে তার দেওয়া বক্তব্য নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়। </p> <p>তিনি জানান, সব আসামি গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি আন্দোলনও চলবে।</p> <p>বকশীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক চেয়ারম্যান মানিক সওদাগর জানান, ঘটনার রাতেই উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা সাপেক্ষে রজব আলীর লাশ পরিবারের লোকজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর পর ডাক্তার কর্মচারীরা নিজ দায়িত্বে আন্দোলন করে যাচ্ছে। </p> <p>তিনি বলেন, ‌'কেউ অপরাধ করে থাকলে শাস্তি হোক। কিন্তু নির্দোষ কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন সেই বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছি।'</p> <p>বকশীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদ জানান, নির্দোষ মানুষের ওপর পুলিশের কোনো অভিযান নেই। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি পুলিশের টার্গেট। গ্রামের অন্য লোকজন পালিয়ে থাকার প্রয়োজন নেই।</p>