<p style="text-align:justify">ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের তুলাতুলি এলাকার জেলে সাধু মাঝি। ২২ দিনের মা ইলিশ অভিযান শেষে রবিবার (৩ নভেম্বর) দিবাগত রাতে মাছ ধরার জাল-ট্রলারসহ ৭ জেলে মিলে ভোলার মেঘনা নদীতে মাছ শিকারে যান। ভোররাত থেকে সকাল পর্যন্ত নদীতে কয়েক দফা জাল ফেলে সকালে শূন্য হাতে ঘাটে ফেরেন।</p> <p style="text-align:justify">সাধু মাঝির আশা ছিল নদীতে মাছ ধরে সংসারের খরচের পাশাপাশি ঋণের টাকা পরিশোধ করবেন। কিন্তু মাছ না পাওয়ায় সেটি আর হয়ে ওঠেনি। উল্টো তিন হাজার টাকা খরচ করে খালি হাতে বাড়ি ফিরে গেছেন।</p> <p style="text-align:justify">শুধু সাধু মাঝি নন, ভোলার অধিকাংশ জেলেই অভিযান শেষে নদীতে মাছ শিকারে গিয়ে শূন্য হাতে ফিরছেন। সোমবার (৪ নভেম্বর) ভোলা সদর উপজেলার তুলাতুলি, ভোলার খাল, ভাংতির খাল, ইলিশা চডারমাথাসহ বিভিন্ন মাছঘাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।</p> <p style="text-align:justify">তুলাতুলি এলাকার জেলে মো. মনসুর মাঝি জানান, তিনি ছোট ট্রলার নিয়ে ১৩০০ টাকা খরচ করে নদীতে মাছ শিকারে যান। নদীতে জাল ফেলে ৭টি জাটকা ইলিশ পেয়েছেন। ঘাটে এনে সেগুলো ৮০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। এতে তার ৫০০ টাকা লোকসান হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">সদর উপজেলার শেখ ফরিদ ও সাদ্দাম মাঝিসহ ৭-৮ জন জানান, অভিযান শেষে জেলেরা অনেক আশা নিয়ে নদীতে মাছ শিকারে নেমেছেন। আশা ছিল জালে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ ধরা পড়বে। আর সেই মাছ বিক্রি করে সংসারের খরচ মিটিয়ে ধার-দেনা পরিশোধ করবেন, কিন্তু সেটি আর হয়ে ওঠেনি। যে মাছ পেয়েছেন তা বিক্রি করে তেলের খরচও তুলতে পারেননি।</p> <p style="text-align:justify">জেলেরা জানান, অভিযানের আগে নদীতে যে পরিমাণ মাছ পাওয়া যেত, এখন সেটিও পাওয়া যায় না।</p> <p style="text-align:justify">তুলাতুলি মাছ ঘাটের আড়তদার মো. ইউনুছ বেপারি ও জসিম বেপারি জানান, অভিযানের আগে সেখানে এক দিনে একেকটি আড়তে লক্ষাধিক টাকার মাছ বেচাকেনা হতো, সেখানে অভিযান শেষে মাছ ধরার প্রথম দিনে বিক্রি হয়েছে মাত্র ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার মাছ। বেশির ভাগ জেলে নদীতে গিয়ে মাছ বিক্রি করে ট্রলারের তেলের খরচও তুলতে পারেননি। আবার অনেকে ফিরেছেন খালি হাতে।</p> <p style="text-align:justify">ভোলা জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভোলায় মোট নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা এক লাখ ৬৮ হাজার। নিবন্ধনের বাইরেও অনেক জেলে রয়েছেন। সব মিলিয়ে ভোলায় দুই লক্ষাধিক জেলে রয়েছেন। এর মধ্যে ২২ দিনের অভিযানে এক লাখ ৪০ হাজার ৯০০ জেলের জন্য ২৫ কেজি করে মোট তিন হাজার ৫২২ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">মৎস্য অফিস সূত্রে আরো জানা গেছে, মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে গত ২২ দিনে ভোলার মেঘান ও তেঁতুলিয়া নদীতে ৬৭৭টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানে ৪৩৪ জেলেকে আটক করা হয়েছে। ১৪৩টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আটক জেলেদের মধ্যে ২৩৪ জেলেকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জেল দেওয়া হয়েছে ৯২ জেলেকে এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১০৮ জেলেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ২২ দিনের অভিযানে ২১ লাখ ৯৯৩ মিটার জাল, ২.৯৯১ মেট্রিক টন ইলিশ মাছ, ৮৪টি মাছ ধরার ট্রলার ও ৪৩টি নৌকা জব্দ করা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব কালের কণ্ঠকে জানান, এবারের মা ইলিশ রক্ষা অভিযান অন্যবারের তুলনায় অনেকটা সফল হয়েছে। এতে করে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘সাধারণত অমাবস্যা ও পূর্ণিমার ওপর ভিত্তি করে নদীতে মাছ কমবেশি হয়ে থাকে। গত চার দিন আগে অমাবস্যা চলে গেছে। অমাবস্যার চার-পাঁচ দিন পর থেকে এক সপ্তাহ পর্যন্ত নদীতে মাছ তেমন একটা থাকে না। আবার পূর্ণিমার আগ থেকে আবার মাছ পাওয়া যায়।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি এও বলেন, ‘মা ইলিশ ডিম ছেড়ে সাগড়ে চলে গেছে। পূর্ণিমার আগে আবার নতুন করে সাগর থেকে মাছ নদীতে উঠে আসবে। তখন জেলের জালে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশা করছি।’</p>