<p>পটুয়াখালীর দুমকিতে পায়রার অনবরত ভাঙনে প্রতিবছরই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, আবাদি জমিসহ ধর্মীয় স্থাপনা। ফলে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে নদীতীরের বাসিন্দারা। </p> <p>চলতি বছরে প্রায় অর্ধশত ঘরবাড়িসহ প্রায় দুই শতাধিক ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া নদীভাঙনে ক্রমাগত ছোট হয়ে যাচ্ছে উপজেলার মানচিত্র। নদী ভাঙনরোধে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে বিলীন হয়ে যাবে পুরো গ্রাম। </p> <p>সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের প্রায় অর্ধশত পরিবার সর্বনাশা পায়রার কড়াল গ্রাসে ঘরবাড়ি ও ভিটামাটি হারিয়ে আশ্রয়হীনভাবে বসবাস করছে। এ ছাড়া প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বেশ কয়েকটি পরিবার কয়েকবার বসতঘর স্থানান্তর করেও শেষ রক্ষা হয়নি। তাদের বসতভিটা, গাছপালা, পুকুর, মসজিদ, মন্দির, রাস্তাঘাট, টিউবওয়েলসহ সবকিছু নদীগর্ভে বিলীন হয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। </p> <p>ইতিমধ্যে কিছু পরিবারকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হলেও নতুন ভাঙনের কারণে প্রতিনিয়ত আশ্রয়হীন হয়ে পড়ছে ভাঙনকবলিত নতুন পরিবার। এদিকে উপজেলার পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের আলগী ও মুরাদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ মুরাদিয়ায় ক্রমাগত ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে অনেক পরিবার। </p> <p>আংগারিয়া ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের স্থানীয় ভুক্তভোগী সুধান চন্দ্র মিস্ত্রী (৫০), সুকুরঞ্জন চন্দ্র মিস্ত্রী (৮০) বলেন, ‘আমাদের বাড়ি এখান থেকে ২-৩ কিলোমিটার উত্তরে ছিল। পায়রা নদীর অব্যাহত ভাঙনে বাবার আমলে দুইবার এবং আমাদের আমলে তিনবার বসত বাড়ি স্থানান্তর করেও বর্তমানে ঝুঁকিতে আছি।’</p> <p>আঙ্গারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহীন গাজী বলেন, গতকাল এক ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছে। সকালে খেয়াঘাট এলাকার বেশ কিছু এলাকাজুড়ে বিশাল ফাটল ধরে হঠাৎ নদীগর্ভে দেবে যায়। এতে তিনজনকে উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে এক নারীকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। </p> <p>তিনি আরো বলেন, এযাবৎ এই এলাকার প্রায় ২০০ একর জমিসহ, তিন শতাধিক ঘরবাড়ি, তিনটি মসজিদ, চারটি মন্দির, একটি সরকারি অফিসসহ রাস্তাঘাট পায়রা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন এলাকার লোকজন অপরের বাড়ি ও সরকারি রাস্তার পাশে মানবেতর জীবন যাপন করছে। কিছু কিছু লোক অন্যা এলাকায় চলে গেছে।</p> <p>ভাঙনকবলিত অসহায়দের পুনর্বাসন এবং স্থায়ীভাবে পাইলিং ও ব্লক ফেলে নদী ভাঙন রোধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান সোহরাব বলেন, বাহেরচর মৌজায় দীর্ঘদিন ধরে পায়রা নদীর অব্যাহত ভাঙনে আতঙ্কিত এলাকাবাসী। </p> <p>দুমকি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহীন মাহমুদ বলেন, এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। দ্রুত নদী ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। </p> <p>পানি উন্নয়ন বোর্ড পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘বাহেরচরের নদীভাঙন রোধে এর আগেও আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। চলতি বছরের নভেম্বর মাসে আবার জিওব্যাগ স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণে একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট চিঠি পাঠানো হয়েছে।’</p>