<p style="text-align:justify">‘আয় বলতে দৈনিক শাক-সবজি বিক্রি করে যে কয়টাকা লাভ হইতো সেই টাকা দিয়ে সংসার চলতো। সে মারা যাওয়ার পর খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে। মেয়েকে নিয়ে কী করবো কিছুই বলতে পারি না। নিজের জন্য আর চিন্তা হয় না। দিন-রাত শুধু মেয়েকে নিয়ে চিন্তায় বাঁচি না। অনেকে আসছিল, কথা দিছে সহযোগিতা করবে কিন্তু তারা করে নাই। দুইজন কিছু টাকা দিছে, সেই টাকা এতদিন খাইলাম। এখন আর সংসার চলে না। ছোট বাবুকে রেখে কী কাজ করি, কার ভরসায় রাখি তাকে।’</p> <p style="text-align:justify">সোমবার (১৫ অক্টোবর) সকালে কথাগুলো বলছিলেন, গত ১৯ জুলাই ছাত্র-জনতার সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সংঘর্ষে গুলিতে নিহত সবজি বিক্রেতা সাজ্জাদ হোসেনের স্ত্রী জিতু বেগম।</p> <p style="text-align:justify">সোমবার সকালে নিহত সাজ্জাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের দরজায় গালে হাত দিয়ে বসে আছেন তার মা ময়না বেগম। পাশে বসে দাঁড়িয়ে স্ত্রী জিতু বেগম। কালের কণ্ঠের এ প্রতিবেদককে দেখে হকচকিয়ে ওঠেন তারা। তাদের ধারণা, কেউ হয়তো সহযোগিতা করার জন্য এসেছেন।</p> <p style="text-align:justify">সাজ্জাদের স্ত্রী জিতু বেগম বলেন, ‘দুই শতক জায়গার ওপর একটা ঘর। সেখানে পার্টিশন দিয়ে দুই ভাই দুই রুমে থাকতো। আমার শাশুড়ি ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করতো। এখন আমরা এক সঙ্গে থাকি। কি করবো, কী খাবো জানি না। সরকার নাকি সহযোগিতা করবে, শুনতেছি আমাদের নাম নাই’।</p> <p style="text-align:justify">নিহত সাজ্জাদ হোসেন রংপুরের আরসিসিআই (পূর্ব শালবন) এলাকার মৃত ইউসুফ আলী বাবুর ছেলে। পেশায় ফুটপাতে মরিচ, পেঁয়াজ আর হলুদসহ কাঁচা তরকারি বিক্রি করতেন। আগে বাসা-বাড়িতে দিন হাজিরা হিসেবে রাজমিস্ত্রির কাজ করলেও মৃত্যুর ৮/১০ দিন আগে আরসিসিআই মোড়ে ফুটপাতে এ ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসা করার জন্য স্থানীয় রুহিন নামে এক ব্যক্তি তার ছেলে রিফাতসহ তাদের ব্যবসা করার জন্য ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন।</p> <p style="text-align:justify">জিতু বেগম আরো বলেন, ‘সেই দিন জুম্মার নামাজ পড়ে মেয়েকে নিতে আমাদের বাড়িতে (শ্বশুর বাড়িতে) যাওয়ার কথা ছিল। আমি বাবার বাড়িতেই ছিলাম কিন্তু সন্ধ্যায় শুনি তার লাশ রংপুর মেডিক্যালে আছে। আমি বিশ্বাসই করি নাই, সে মারা গেছে’।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘কতদিন গেলাম এখনও ডেথ সার্টিফিকেট পাই নাই। পুলিশ স্যার কইছে আরো সময় লাগবে।’</p> <p style="text-align:justify">সাজ্জাদের মা ময়না বেগম বলেন, ‘আমার তিন মেয়ে, দুই ছেলে। আমার স্বামী অনেক আগেই মারা গেছেন। সংসার চালাতে আমি ঢাকায় থাকা মেয়ের কাছে যাই, সেখানে গার্মেন্টসে চাকরি নিই। সেই দিন সন্ধ্যার আগে শুনি সাজ্জাদ মারা গেছে। আমি আমার ছেলের মরা মুখটাও দেখতে পাইনি। সংবাদ শোনার পর বাসে উঠেছি; কিন্তু কিছুদূর পর গাড়ি আর যায়নি। আমি ওর মুখটা দেখতে পাই নাই। ছয় দিন পর বাড়িতে আসছি’।</p> <p style="text-align:justify">সাজ্জাদের মা জানান, ‘আমাদের কিছু নেই। ওর ছোট একটা মেয়ে, আর স্ত্রী। পুরো সংসার সে চালাত। ছেলে মারা যাওয়ার পর সংসার চলছে না। কিছু দিছে, সে টাকা দিয়ে এ কয়দিন চলছে। আমি সরকারের কাছে সহযোগিতা চাই’।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘আমার তিন বছর বয়সী নাতনী আছে নাম জান্নাতি আক্তার ছিনহা। সে ঘুমায় না। সে কাঁদে শুধু কাঁদে’।</p> <p style="text-align:justify">প্রতিবেশীরা জানান, ‘ঘটনার দিন শুক্রবার সাজ্জাদ স্থানীয় বিসমিল্লাহ মসজিদে নামাজ শেষে দুপুরে বাড়িতে খাবার খেয়ে দোকানের হলুদ আর পেয়ারা কিনতে পৌর বাজারে যান। তখন রংপুর প্রেসক্লাব থেকে কাছারি বাজার পর্যন্ত সংঘর্ষ চলছিল। এ সময় পৌরবাজারে সংঘর্ষ শুরু হলে তিনি মারা যান। বিকেল ৪টার দিকে খবর আসে সাজ্জাদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তার লাশ রংপুর মেডিক্যালে পড়ে আছে। এই খবর পাওয়ার পর তার ন্যাশনাল আইডি কার্ড, স্ত্রী ও ছোট ভাইকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে লাশ বাড়িতে আনা হয়’।</p> <p style="text-align:justify">প্রতিবেশী লুৎফর রহমান জানান, ‘সাজ্জাদরা তিন বোন, দুই ভাই। তিন বোনের বিয়ে হয়েছে। তারা খুবই গরিব মানুষ। দিন আনে দিন খায়। সাজ্জাদই তাদের একমাত্র আয়ের উৎস ছিল। সে-ও মারা গেছে। তাদের সংসারের খরচ চলার মতো অবস্থা নেই’।</p> <p style="text-align:justify">সাজ্জাদ নিহতের ঘটনায় পৃথক দুটি হত্যা মামলা হয়েছে। এই মামলায় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকেও আসামি করা হয়েছে।</p>