<p>বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে এখন মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছেন লক্ষ্মীপুরের কলেজছাত্র খালেদ মাহমুদ সুজন। তার ঘাড়, গলা, এবং শরীরজুড়ে এখনও আটটি বুলেট রয়ে গেছে। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না তার পরিবার। দেশে সুজনের চিকিৎসা সম্ভব নয়, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়া প্রয়োজন। নতুবা অকালে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে পারেন তিনি।</p> <p>খালেদ মাহমুদ সুজন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররুহিতা এলাকার বাসিন্দা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হতদরিদ্র শাহীন কাদিরের ছেলে এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচএসসি পড়ুয়া শিক্ষার্থী। পরিবারের পাঁচ সদস্যের মধ্যে সুজনই ছিলেন একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। পড়াশোনার খরচ ও পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তিনি খণ্ডকালীন একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন।</p> <p>২০২৪ সালের ৪ আগস্ট সারাদেশের মতো লক্ষ্মীপুরেও সরকার পতনের আন্দোলন চলছিল। সেই সময় মাদাম ব্রিজ ও তমিজ মার্কেট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন সুজন। হঠাৎ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এসময় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সভাপতি একেএম সালাউদ্দিন টিপুর নেতৃত্বে ছাত্রদের ওপর ছাদ থেকে গুলি চালানো হয়। এতে খালেদ মাহমুদ সুজনসহ প্রায় ৩০০ জন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন, নিহত হয় চারজন। গুলিবিদ্ধ সুজনকে প্রথমে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং পরবর্তীতে ঢাকা সিএমএইচ-এ নিয়ে দুইটি গুলি বের করা হয়। তবে এখনও তার শরীরে আটটি বুলেট রয়ে গেছে, যেগুলো বের করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে বাড়িতে মৃত্যুযন্ত্রণা নিয়ে কাতরাচ্ছেন সুজন।</p> <p>সুজনের পরিবার এখন চরম অর্থনৈতিক সংকটে। তার বাবা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী, আর দুই ভাইয়ের মধ্যে একজনও একই সমস্যায় ভুগছে। সুজনের চিকিৎসার জন্য দেশে কোনো ব্যবস্থা না থাকায়, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়ার প্রয়োজন। টাকার অভাবে এ চিকিৎসা করাতে পারছে না পরিবার। সমাজের বিত্তবানদের সাহায্য এবং সরকারের সহায়তা ছাড়া সুজনের জীবন বাঁচানো সম্ভব নয়।</p> <p>লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজিব কুমার সরকার বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবে জেলা প্রশাসন। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের কেউই রেহাই পাবে না এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার মো. আকতার হোসেনও জানিয়েছেন, গুলিবর্ষণের ঘটনায় একাধিক মামলা হয়েছে এবং বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপরাধী যত বড়ই হোক, আইনের আওতায় আনা হবে।</p> <p>সুজনের পরিবারের পক্ষ থেকে তার চিকিৎসার জন্য সরকারের পাশাপাশি সমাজের সকল স্তরের মানুষের কাছে সাহায্যের আবেদন জানানো হয়েছে।</p> <div id="gtx-trans" style="left:-61px; position:absolute; top:42px"> <div class="gtx-trans-icon"> </div> </div>