<p>নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার দয়ারামপুর ইউনিয়নের হাটগোবিন্দপুর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল বাকী মিঠু (৩২)। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়ে চোখে, মুখে ও কপালসহ সারা শরীরের বিভিন্ন অংশে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। বেশ কিছুদিন চিকিৎসা করলেও সেই মিঠু এখন আর বাম চোখে দেখতে পাচ্ছেন না। এদিকে চাকরি হারিয়ে অভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার চিকিৎসা।</p> <p>মিঠু এলাকার কৃষক আব্দুল খালেক ও গৃহিণী জুলেখা খাতুন দম্পতির ছেলে। আজ সোমবার (১৪ অক্টোবর) সকালে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে মিঠু বলেন, ‘টাকার অভাবে হয়ত আর চিকিৎসা করানোই সম্ভব হবে না চোখের। শরীরের বিভিন্ন অংশের গুলিগুলো বের করা গেলেও ৮টি বুলেট এখনো চোখে, মুখে ও কপালে রয়েই গেছে। ডান চোখের পাতার ওপরে লাগা গুলিটি অপারেশন করার পরও বের করা সম্ভব হয়নি। আর বাম চোখের গুলিটি চোখের ভেতরে চলে যাওয়ায় আর বের করা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন জাতীয় চক্ষু হাসপাতালের ডাক্তাররা।’</p> <p>তিনি জানান, বাড়িতে অসুস্থ বাবা-মা। চার ভাই-বোনের মধ্যে একমাত্র ভাই তিনি। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। পরিবারের দেখাশোনার দায়িত্ব তার ওপর। অসুস্থ বাবা-মায়ের সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিই তিনি। অসুস্থতার কারণে চাকরি হারিয়ে টাকার অভাবে একদিকে সংসার ও অপরদিকে চিকিৎসা খরচ যোগাতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। প্রতিটি দিন পার করছেন এক মানসিক যন্ত্রণায়। রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন মহল থেকে সাহায্য ও সহযোগিতার হাত বাড়ানোর আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তা পরিলক্ষিত হয়নি। আর যেটুকু সাহায্য প্রদান করা হয়েছে তা দিয়ে কোনোভাবেই চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই আগামী দিনগুলোতে সংসার ও চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করার কথা বলতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="বেরোবির রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/14/1728891050-ddbac6792a98673cf32000e4509a6361.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>বেরোবির রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/campus-online/2024/10/14/1435013" target="_blank"> </a></div> </div> <p>মিঠু বরিশাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি থেকে ২০১৫ সালে মেডিক্যাল রেডিওলজি বিভাগ থেকে পাস করেন। এরপর বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করেন। এক বছর যাবৎ সিরাজগঞ্জের বেতিন বাসস্ট্যান্ড এলাকার ড্যাফোডিল ইন স্পেশালিস্ট হাসপাতালে সিটিস্ক্যান করার দায়িত্বে ছিলেন।</p> <p>তিনি জানান, গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানার কেজির মোড় এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। এরপর স্থানীয়রা তাকে খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। মৃত ভেবে লাশের সঙ্গে তাকে ফেলে রাখা হয়। জ্ঞান ফিরলে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকলে কর্তব্যরত নার্স ও চিকিৎসকরা তাকে উদ্ধার করে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। চিকিৎসকরা তার পেটের ভেতরের গুলিগুলো বের করার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যেতে বলেন। হাসপাতালে ওইদিন তিনি ছাত্রছাত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গুলিবিদ্ধ অনেক লোক দেখতে পান। পরের দিন ৫ আগস্ট ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে তার এক চেখে একটি অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু তাতেও তার চোখের কোনো উন্নতি হয়নি। এরপর অনেক বার ঢাকায় গিয়ে ডাক্তার দেখাচ্ছেন কিন্তু গুলি কোনোভাবেই বের করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন তিনি তার বাম চোখে আর একটুও দেখতে পাচ্ছেন না।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="প্রতিমা বিসর্জন দিতে গিয়ে নিখোঁজ, মরদেহ ভেসে উঠল সাগরে" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/14/1728890707-1c7e89c3694f352a9c98241cec343367.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>প্রতিমা বিসর্জন দিতে গিয়ে নিখোঁজ, মরদেহ ভেসে উঠল সাগরে</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/10/14/1435012" target="_blank"> </a></div> </div> <p>একদিকে চিকিৎসা ব্যয়, সংসারের দেখভাল অন্যদিকে চাকরি নেই, চোখে না দেখতে পাওয়ায় সব কাজকর্মে স্থবিরতা নেমে এসেছে তার জীবনে। বাম চোখে না দেখতে পাওয়া ও মানসিক দুশ্চিন্তায় কোনোভাবেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছেন না বলেও জানান তিনি।</p> <p>মিঠুর বাবা আব্দুল খালেক জানান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তার ছেলের চোখে-মুখে, কপালে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। তার ছেলের শরীরে এখনো গুলির চিহ্ন রয়েছে। বাম চোখে এখন দেখতেই পারছেন না।। ২ মাস হচ্ছে তাদের সংসারে কোনো আয় রোজগার নেই। ছেলে যে বেসরকারি হাসপাতালে ছিল চোখের কারণে সেই চাকরিটা আর নেই। তিনি ডায়াবেটিকস ও হার্টের রোগী, তার হার্টে রিং পরানো আছে। তিনি কাজকর্ম করতে পারেন না। তাদের সংসার চালানোই কঠিন। তার ওপর ছেলের চিকিৎসার খরচ। সব মিলিয়ে কী করবেন দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না।</p> <p>তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত অনেক শিক্ষার্থীর চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করলেও আমার ছেলেটার বেলায় তা জোটেনি।’</p> <p>মিঠুর মা জুলেখা খাতুন বলেন, ‘মিঠুর পাঠানো রোজগারেই তাদের সংসার চলত। তার বাবার ওষুধ কেনা হতো। সে টাকা পাঠালেই আমাদের চুলা জ্বলত। সেই ছেলে বাম চোখে একটুও দেখতে পাচ্ছে না।’ ছেলের চিকিৎসা এবং সংসার চালানোর চিন্তায় তিনি দিশেহারা। তিনি ছেলের সাহায্যের জন্য আবেদন জানান।</p> <p>তিনি কান্নাভরা কণ্ঠে বলেন, ‘তবে কি টাকার অভাবে আমার ছেলের চিকিৎসা হবে না? আমরা কি এভাবে ধুকে ধুকে মারা যাব?’</p>