<p>বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে দুইজন প্রাণ হারিয়েছেন। এদের মধ্যে বারইভাগ গ্রামের জামাল শেখের ছেলে মো. নজরুল ইসলাম (৩৬) গাজীপুর চৌরাস্তায় ২০ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত হোন। তিনি পেশায় ছিলেন গার্মেন্টসকর্মী। </p> <p>অপরজন দুমরাই গ্রামের মৃত. যেতুল্লার ছেলে মো. লেবু মিয়া (৪০)। তিনি ৫ আগস্ট আশুলিয়া থানার সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হোন। পেশায় তিনি রিকশা চালক ছিলেন। তাদের আয়েই চলতো পুরো পরিবার। পরিবারের উপার্জনক্ষম মানুষকে হারিয়ে পরিবার দুটি এখন অন্ধকার দেখছে।</p> <p>খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃদ্ধ জামাল শেখ-জয়গন বেগম দম্পতির দুই ছেলের মাঝে নজরুল ইসলাম ছিলেন সবার বড়। তার আরেক ভাই আমিরুল ইসলাম বেকার। তিনি ৯ বছর আগে বিয়ে করলেও তাদের কোনো সন্তান হয়নি। যৌথ পরিবারে তিনিই ছিলেন একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তিনি গার্মেন্টসকর্মী হিসেবে দীর্ঘ দিন গাজীপুরেই থাকতেন। তার আয়েই চলতো পরিবারটি। ঘটনার দিন অন্যান্য বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে রাস্তায় নামলে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। সেই সঙ্গে মুহুর্তেই ভেঙ্গে যায় একটি পরিবারের স্বপ্ন।</p> <p>জামাল শেখ জানান, সে এক বিভীষিকাময় দিন গেছে। ফোনে মৃত্যুর খবর পেয়ে তারা নির্বাক হয়ে যান। কোথায় যাবেন, কার কাছে যাবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না তারা। গাজীপুরে গিয়ে ময়নাতদন্ত শেষে ২১ জুলাই লাশ নিয়ে এসে গ্রামের কবরস্থানে দাফন করেন তারা। </p> <p>হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে নজরুলের বাবা বলেন, বলেন, ‘এখন আমাদের এই বৃদ্ধ বয়সে বেকার ছোট ছেলে ও বিধবা পুত্রবধূ নিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছি। আগামী দিনগুলি কিভাবে যাবে, কিছুই জানা নেই।’</p> <p>নজরুলের মৃত্যুর পর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের পক্ষ থেকে নগদ দুই লাখ টাকা, বিএনপির পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা ও রায়গঞ্জ উপজেলা প্রশাসন থেকে ছয় হাজার টাকা সহায়তা পেয়েছেন পরিবারটি। কিন্তু যে সংসারের হাল ধরেছিল আজ সেই তো দুনিয়ায় নেই।</p> <p>স্থানীয়রা জানায়, দুমরাই গ্রামের রিকশা চালক লেবু মিয়ার বাবা নেই। বৃদ্ধ মা নাজমা খাতুন ওরফে সবুরা অপর দুই ভাইয়ের সংসারে থাকেন। প্রায় ৮-৯ বছর আগে তিনি ঢাকার নবীনগর এলাকায় পরিবারের অমতে বিয়ে করে সেখানেই সংসার পাতেন। বাড়ির সঙ্গে তার খুব একটা যোগাযোগ ছিল না। ঘটনার দিন আর সবার মতো সেও আন্দোলনে যোগ দিতে আশুলিয়া থানার সামনে গেলে পুলিশের গুলিতে নিহত হোন লেবু। তাকেও ময়নাতদন্ত শেষে ৬ আগস্ট গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়।</p> <p>নেবু মিয়াও ছিলেন তার পরিবারে একমাত্র আয় করা ব্যক্তি। তার আয় দিয়েই চলতো স্বামী-স্ত্রীর সংসার। বাসা ভাড়া, সংসার খরচ আগামী দিনগুলিতে কেমনে চলবে এ কথা জানেন না নেবু মিয়ার স্ত্রী শেফালি খাতুন।</p> <p>এ বিষয়ে আশুলিয়া থানায় যোগাযোগ করা হলে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবু বকর সিদ্দিকী মামলার তথ্য দেওয়ার কথা বলেও দেননি। তাকে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি তার উত্তর দেননি।</p> <p>বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিরাজগঞ্জ জেলা সমন্বয়ক মুনতাসির মেহেদী হাসান বলেন, তারা ইতিমধ্যে শহীদদের তালিকা তৈরি করে কেন্দ্রে পাঠিয়েছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সিদ্ধান্ত নিবেনন। </p>