<p>কৃষিকাজ ও ব্যবসা কোনো কিছুতেই পোষাতে পারছিলেন মো. রিয়াজ মুন্সী (২০) নামে এক তরুণ। এমন অবস্থায় উন্নত জীবনের আশায় ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিনি। স্বপ্ন অনুয়ায়ী ইতালি যাওয়ার জন্য অবৈধপথে দালালের মাধ্যমে ১৫ লাখ টাকা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন রিয়াজ। তবে গত রজমান মাসে দালালরা তাকে ইতালি না নিয়ে সাগরপথে লিবিয়ায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে টানা কয়েকমাস তাকে আটকে রেখে আরো ১৫ লাখ টাকা দাবি করে নির্মম নির্যাতন চালাতে থাকে।</p> <p>পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা টাকা না দেওয়ায় কয়েকদিন আগে লিবিয়ার বন্দিশালায় রিয়াজকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে হত্যা করে দালালরা। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রিয়াজের নিথরদেহ দেশে এসে পৌঁছায়। আজ সোমবার সকালে তার লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত রিয়াজ ফরিদপুরের সালথা উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নের চরবল্লভদী গ্রামের কৃষক মো. ইউনুস মুন্সীর ছেলে। রিয়াজের পরিবারের সঙ্গে কথা হলে তারা কালের কণ্ঠকে এসব তথ্য জানান।</p> <p>আজ সকালে রিয়াজের বেয়াই মো. মারুফ কাজী কালের কণ্ঠকে বলেন, অভাবের সংসারে হাল ধরতে রিয়াজ প্রথমে কৃষিকাজ করতেন। এতে বেশি আয় করতে না পেরে ব্যবসা শুরু করেন। তাও পোষাতে পারেননি তিনি। পরে ইতালি যাওয়ার জন্য স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। এর প্রেক্ষিতে পাশের মুকসুদপুর উপজেলার মহারাজপুর গ্রামের শাহিন খার ছেলে দালাল শাকিল খার সঙ্গে ১৫ লাখ টাকা চুক্তিবদ্ধ হন। চুক্তি অনুযায়ী ধারদেনা করে ১৫ লাখ টাকা শাকিলের হাতে তুলে দেয় তার পরিবার।</p> <p>পরে গত রমজান মাসের প্রথম সপ্তাহে দালাল শাকিল লিবিয়ায় অবস্থারত আরেক দালাল নগরকান্দা উপজেলার গজারিয়া গ্রামের সালাম কাজীর ছেলে কারী আল আমিনের মাধ্যমে রিয়াজকে ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নৌপথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লিবিয়ায় নিয়ে যায়। সেখানে কয়েক মাস আটকে রেখে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে আরো ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন দালালরা। তবে ওই টাকা পরিবারের পক্ষে দেওয়া সম্ভব ছিল না। যে কারণে দালালরা নির্যাতন চালিয়ে রিয়াজের হাত-পা ভেঙে ফেলে। একপর্যায়ে দালালদের নির্যাতনে গত জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে রিয়াজের মৃত্যু হয়।</p> <p>তিনি আরো বলেন, অনেক তদবির আর চেষ্টা করে রবিবার রিয়াজের লাশ দেশে আনা হয়েছে। সোমবার সকালে লাশটি পুলিশের মাধ্যমে মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় দালালদের বিরুদ্ধে একটি মানবপাচার মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদিকে নিহত রিয়াজের লাশ দেশে আসার পর কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবার ও স্বজনরা। তাদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে বাড়ির পরিবেশ।</p> <p>মুকসুদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশরাফুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, রিয়াজের লাশ লিবিয়া থেকে আশার পর মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। হত্যায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।</p>