<p style="text-align:justify">রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির আয়োজনে আবু সাঈদকে নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর শেষ দিনে দর্শনাথীদের ভিড়। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিভিন্ন শ্রেণি -পেশার নানা বয়সী মানুষ ভিড় করছে আবু সাঈদ চত্বরে। রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে আলোকচিত্র তিন দিনেই প্রায় ২০ হাজার মানুষ ও শিক্ষার্থীরা প্রদর্শনীতে দেখতে আসে। তবে আরো এক দিন সময় বাড়ার দাবি করে দর্শনার্থীরা।<br />  <br /> আজ রবিবার শেষ দিনে আবু সাঈদকে নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে মানুষের ঢল নেমে আসে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধান ফটকে। স্থানীয়রা জানায়, সারা দেশে আবু সাঈদকে নিয়ে সাড়া পড়েছে। এই প্রথম রংপুরের এ ধরনের আলোকচিত্রের আয়োজন করা হয়েছে। শহীদ আবু সাঈদকে কখনো ভুলবে না এ দেশের মানুষ। বীর সেনার মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন শহীদ আবু সাঈদ। তরুণ বয়সে জীবন দিতে হয়েছে তাকে।</p> <p style="text-align:justify">গত শুক্রবার (৩০ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে প্রদর্শনী শুরু হয়ে চলবে আজ রবিবার রাত পর্যন্ত। আবু সাঈদ চত্বর সংলগ্ন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটে এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীর তিন দিনের অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী।</p> <p style="text-align:justify">প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পযন্ত চলে শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনী। শেষ দিনেই দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল অনেকটাই বেশি। এ সময় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি দেখতে ভোলেননি রিকশাচালকরাও। অনেকে আবার শিশুদের দেখাছেন এভাবেই। এই আলোকচিত্র দেখতে ব্যবসায়ীরা আসছেন দল বেধে।</p> <p style="text-align:justify">রিকশাচালক হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘জন্ম থেকেই এই রকম আলোকচিত্র কখনো দেখি নাই। আজ দেখে কান্না ধরে রাখতে পারছি না। একজন ছাত্রকে এভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। যারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের বিচারের দাবি করছি।’</p> <p style="text-align:justify">আলোকচিত্রে গত ১৬ জুলাইয়ের আন্দোলনে বিভিন্ন ঘটনাসমূহ দেখানো হয়েছে। আলোকচিত্রে ফুটে উঠেছে আন্দোলনের দিন পুলিশ ও ছাত্রলীগ দ্বারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম হামলার চিত্র।</p> <p style="text-align:justify">রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাবাসুম, সানজিতা বলেন, ‘এই তিন দিনেই আমরা দেখতে এসেছিলাম। অনেক ভালো লাগছে। আলোকচিত্র প্রদর্শনী ৫-৬ দিন থাকলেই ভালো হতো। আবু সাঈদকে যেভাবে পুলিশ গুলি করছে আমরা ছবি দেখলাম। এসব দেখে কান্না থামাতে পারছি না। মানুষকে এভাবে গুলি করে মারতে হয়।’</p> <p style="text-align:justify">রংপুর পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী নুসরাত ও সায়মুনাহার বলেছেন, ‘অনেক ভালো লাগছে এই ছবিগুলো দেখে। এখানে না এলে জানতেই পারতাম না বেরোবির শিক্ষার্থী আবু সাঈদ কতটা সাহসিকতার সঙ্গে আজকে এই বিজয়ঘন মুহূর্তকে উপহার দিয়েছেন। যারা এভাবে আবু সাঈদ নামের একজন শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যা করেছে তাদের শাস্তি চাই আমরা। বেঁচে থাকুক বেরোবি শিক্ষার্থীদের এই সাহসিকতা আর একজন আবু সাঈদ ফিরে আসুক বাংলার মাটিতে। তবে এই ছবি দেখে শিক্ষা নেওয়া সবার উচিত, কিভাবে দেশের মানুষ ও শিক্ষাথীদের জন্য প্রাণ দিলেন।’</p> <p style="text-align:justify">আলোকচিত্রের বিষয়ে ফটো সাংবাদিক আদর রহমান বলেন, ‘আমি প্রথমে শহীদ আবু সাঈদের পরিবারের জন্য গভীরভাবে সমবেদনা প্রকাশ করতেছি। ১৬ জুলাইয়ে সাড়ে ৩০০ ছবি তুলেছি। এর মধ্যে ৫০টি ছবি এখানে প্রদর্শন করা হয়েছে। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে ১৬ জুলাইয়ের অপ্রকাশিত ছবিগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কখনো যদি আবু সাঈদকে নিয়ে গবেষণা করা হয় তাহলে হয়তো এই ছবিগুলো অনেক কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করছি।’</p> <p style="text-align:justify">আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী বলেন, ‘পরিবারে আমরা ৯ ভাই-বোন। ভাইদের মধ্যে আবু সাঈদ ছিল সবার ছোট। পরিবারে একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়তে পেরেছে আবু সাঈদ। আশা ছিল সে বড় হয়ে ভালো কিছু করে পরিবারের হাল ধরবে। ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। যারা আমার ভাইকে আঘাত করেছে ও এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবার কঠোর শাস্তির দাবি করছি।’</p> <p style="text-align:justify">বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আবু সাঈদ সারা জীবন বেঁচে থাকবেন। শহীদ আবু সাঈদ<br /> একটি জাতি সৃষ্টি করছেন। আমরা কখনো ভুলব না তাকে।’</p> <p style="text-align:justify">রংপুর সরকারি কলেজের দর্শন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক মো. সাদাকাত হোসেন বলেন, ‘মেধাবী শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে যেভাবে পুলিশ গুলি করে হত্যা করছে, সেই ছবিগুলো আজ আলোকচিত্রে রূপ নিয়েছে। সারা দেশ আবু সাঈদকে স্মরণ করবে সারা জীবন। এত কষ্ট করে ছবি তুলেছেন আদর রহমান তাকেও ধন্যবাদ জানাই। এক আবু সাঈদ সারা দেশ আলোচনায় থাকবে।’</p>