<p style="text-align:justify">বাতিল হওয়ার দীর্ঘ ১০ মাস পর জানা গেল চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের জমি অধিগ্রহণ হচ্ছে না। ভূমি অধিগ্রহণে নানা অনিয়ম ও অভিযোগে শেষ পর্যন্ত গত বছরের ডিসেম্বরে বাতিল করা হয়। ওই সময় এটি বাতিল করা হলেও তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. দীপু মনির চাপে তা গোপন রাখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।</p> <p style="text-align:justify">এদিকে, তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমি চাঁদপুরে যোগদানের পূর্বেই অধিগ্রহণ প্রস্তাব বাতিল করা হয়। এরই মধ্যে চাঁদপুর সদরের লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য নামমাত্র মূল্যে এবং জোর করে দখলকৃত সেই ভূমি ফেরত দাবি করছেন জমির প্রকৃত মালিকরা। অন্যদিকে, দ্রুত স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবি চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের।</p> <p style="text-align:justify">একই তথ্য জানান, চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. হেদায়েত উল্লাহ শ্রাবণ। তিনি জানান, গত বছরের ২৮ ডিসেম্বরে ভূমি অধিগ্রহণ বাতিল করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর মৌজায় ৬২ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের আলোচিত চেয়ারম্যান, বালুখেকো সেলিম খান (গত ৫ আগস্ট গণপিটুনিতে নিহত) জোরপূর্বক অনেক পরিবারকে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করেন। এছাড়া এলাকার জমির গড় মূল্যের চাইতে কম দাম দেওয়া হয়েছে তাদের। এই বিষয়ে তখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর ভূমি অধিগ্রহণ বাতিল করে প্রশাসন। আর পরবর্তীতে এমন সংবাদে আনন্দিত জমির মালিকরা।</p> <p style="text-align:justify">ভুক্তভোগী জমির মালিক কালু খান অভিযোগ করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় করার নাম করে আমার কাছ থেকে প্রায় ৫০ শতাংশ জমি জোরপূর্বক নিয়ে গেছে সেলিম খান। আমি দিতে রাজি হইনি। তার লোকজন দিয়ে আমাকে ধরে এনে এবং অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জমি লিখে নেয়। দাম হয়েছে ৩৭ লাখ টাকা। দিয়েছে ১২ লাখ টাকা। আমি আমার জমি ফেরত চাই।’</p> <p style="text-align:justify">লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. কাজল ও হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের বসত বাড়ি ছিল। সেলিম চেয়ারম্যান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির প্রভাব খাটিয়ে আমাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য করে। কিন্তু এখনতো আর বিশ্ববিদ্যালয় হলো না। আমাদের জমি আমরা ফেরত চাই।</p> <p style="text-align:justify">এদিকে, জমি অধিগ্রহণে টানাহ্যাঁচড়ার কারণে বর্তমানে চাঁদপুর শহরের খলিশাডুলি এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে।</p> <p style="text-align:justify">এমন পরিস্থিতিতে স্থায়ী ক্যাম্পাস দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও তার ভাই আওয়ামী লীগ নেতা ডা. জেআর ওয়াদুদ টিপু ও তাদের দোসরদের এই বিষয় দুর্নীতি কারণে সরকার ভূমি অধিগ্রহণ বাতিল করে দেয়। তাদের এখন একটাই দাবি যতদ্রুত সম্ভব এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের ব্যবস্থা করা এবং জমি বরাদ্দ দেওয়া হোক।</p> <p style="text-align:justify">এই বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, ‘অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। শিগগিরই নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। আগে যে স্থানে ভূমি অধিগ্রহণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে, তা বাতিল করা হয়েছে। ওই জায়গায় আর বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে না।’</p> <p style="text-align:justify">জেলা প্রশাসক আরো বলেন, নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নতুন করে এ বিষয় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পেলে আমরা নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য কাজ করবো।</p> <p style="text-align:justify">খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১৯ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভা। সংসদে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে বিল পাস হয় ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। ২০২৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে তিনটি বিভাগের দুই ব্যাচে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮০ জন। আর তাদের পাঠদান চারতলার একটি ভাড়া বাড়িতে চললেও এসব শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বাসাবাড়িতে মেস করে থাকতে হচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার মতো মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ না থাকায় শিক্ষার্থীরা এক দুর্বিষহ সময় পার করছেন করছেন। এই নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও কোনো মন্তব্য করতে চান না।</p>