<p>আট মাসেরও বেশি সময় আগে একাডেমিক কাউন্সিলে হামলা ও লাঞ্ছিতের শিকার হয়েছিলেন জানিয়ে বিচারের দাবিতে একটি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) এক শিক্ষক।</p> <p>গতকাল মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুজিবুর রহমান মজুমদারের কাছে এই অভিযোগপত্র জমা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবু বকর ছিদ্দিক। পরে তিনি নিজেই কালের কণ্ঠকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। </p> <p>অভিযোগপত্রে আবু বকর ছিদ্দিক উল্লেখ করেন, গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত আইন বিভাগের একাডেমিক কমিটির ১২১তম সভায় আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আলী মুর্শেদ কাজেমের মাধ্যমে আমি সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছি এবং শারীরিকভাবে চরম লাঞ্ছিত হয়েছি। কোর্স বণ্টন নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে আমার বাবা-মা তুলে গালাগাল করা হয়। এ সময় আমি প্রতিবাদ করলে চেয়ার থেকে উঠে এসে আমার মুখে প্রচণ্ড আঘাত করা হয়। আঘাতের কারণে আমার চশমা ভেঙে যায় এবং মুখে জখম হয়। </p> <p>অভিযোগপত্রে তিনি আরো জানান, বিষয়টি সম্পর্কে ওই দিনই সাবেক উপাচার্য ও আইন অনুষদের সাবেক ডিন ড. এ এফ এম আব্দুল মঈনের সঙ্গে দেখা করে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছিলাম। কিন্তু অভিযুক্ত শিক্ষক তখন উপাচার্যপন্থী হওয়ায় এবং উপাচার্যের আস্থাভাজন হওয়ায় বিষয়টি ওখানেই মিটমাট করে ফেলতে উপাচার্য আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেন। পরে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শিক্ষকদের মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে কেন পত্রিকায় সাংবাদিকরা সংবাদ প্রকাশ করল তা নিয়ে আমার ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন উপাচার্য। </p> <p>অভিযোগকারী শিক্ষক আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, ‘শিক্ষকদের ওই মিটিংয়ে উপাচার্য আমাকে দোষারোপ করে বলেন, আমি উপ-উপাচার্যের সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র করছি। তিনি আমাকে ওই ঘটনায় কোনো লিখিত অভিযোগ না দিতে বলেন। লিখিত অভিযোগ দিলে আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ তুলে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্তের হুমকি দেওয়া হয়।’</p> <p>অভিযোগপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, আলোচনার এক পর্যায়ে বিষয়টির বিচারের ভার আমি উনার ওপর ছেড়ে দিলে উনি রাগান্বিত হয়ে মিটিং ছেড়ে যান। আর বিভাগের একাডেমিক কমিটির মিটিংয়ে বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে বলে রেজল্যুশন নিয়ে আসতে বলেন। উপাচার্যের এমন মন্তব্যে আমি হতভম্ব হয়ে যাই এবং বিষয়টি সেভাবেই অমীমাংসিত থেকে যায়। যা তৎকালীন উপাচার্যের বিচারহীনতার মানসিকতার প্রতিফলন ছিল। এমন পরিস্থিতি বিভাগের একাডেমিক কমিটির মিটিংয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের সন্ত্রাসী হামলা ও লাঞ্ছিতের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার অনুরোধ জানাচ্ছি। এ ছাড়া ওই শিক্ষক আগেও বেশ কয়েকবার আমাকে হেনস্তা করেছেন এবং উনাকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছিল।</p> <p>অভিযোগের বিষয়ে আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, ‘আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে বিচার পাওয়ার জন্য অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি।’</p> <p>গত বছরের ঘটনা এত দিন পরে কেন অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ওই সময় সাবেক উপাচার্য আবদুল মঈন আইন বিভাগের ডিন ছিলেন। তিনি আমাকে এই ঘটনা না বাড়াতে নানা রকমের হুমকি দিয়েছিলেন। তাই আমি অভিযোগপত্র জমা দিতে পারিনি। তা ছাড়া অভিযোগপত্র যেন জমা না দিই সে জন্য ‍উনি অনেকভাবে আমাকে শাসিয়েছেন।’</p> <p>এ বিষয়ে আজ বুধবার (২৮ আগস্ট) বিকেলে আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আলী মুর্শেদ কাজেম বলেন, এ‘ই বিষয়টি একাধিকবার মীমাংসা হয়েছে। ওই সভায় তিনিই আমার দিকে তেড়ে আসেন হামলা করার জন্য; তখন আমি আত্মরক্ষার চেষ্টা করি। তিনি যে আমার ওপর হামলা করেছিলেন সেই প্রমাণও আমার কাছে আছে। আমি বিশ্ববিদ্যালয় ও ডিপার্টমেন্টের সম্মানের কথা ভেবে বিষয়টি নিয়ে সব সময় চুপ ছিলাম। কিন্তু তিনি হঠাৎ মীমাংসিত বিষয় নিয়ে আমার সম্মানহানিসহ আমাকে হয়রানি করছেন।’ </p> <p>আলী মুর্শেদ কাজেম আরো জানান, কিছুদিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান হওয়ার কথা রয়েছে তার। তিনি যেন যে চেয়ারম্যান হতে না পারেন এ জন্য ৮ মাস আগের মীমাংসিত একটি বিষয় নিয়ে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে। </p> <p>এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুজিবর রহমান মজুমদার বলেন, ‘আমি অভিযোগপত্রটি পেয়েছি। যেহেতু বর্তমানে উপাচার্য পদ শূন্য তাই নতুন উপাচার্য নিয়োগ হলে তার সঙ্গে অভিযোগের বিষয়ে কথা বলব।’</p>