<p>পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্স কম্পানি লিমিটেডের শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গ করায় ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে ৫০ লাখ টাকা এবং সরকারি কর্মকর্তা আবুল খায়ের হিরুকে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কারসাজির অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় এই জরিমানা করা হয়েছে।</p> <p>গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত বিএসইসির ৯২৩তম কমিশনসভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বিএসইসি।</p> <p>বিএসইসি জানায়, প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্স কম্পানির শেয়ার কারসাজির দায়ে সাত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে মোট এক কোটি ৬৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।</p> <p>এ ছাড়া সাকিব ও হিরুর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মোনার্ক হোল্ডিংসকে এক লাখ টাকা, ইশাল কমিউনিকেশন লিমিটেডকে ৭৫ লাখ টাকা, আবুল কালাম মাতবরকে ১০ লাখ টাকা, লাভা ইলেকট্রোড ইন্ডাস্ট্রিজকে এক লাখ টাকা এবং জাহেদ কামালকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।</p> <p>শেয়ার কারসাজির অভিযোগ ওঠার তিন বছর পর জরিমানার মুখে পড়লেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান।</p> <p>২০২২ সালে বিএসইসির এক তদন্ত প্রতিবেদনে শেয়ার কারসাজির অভিযোগে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের নাম ওঠে, যাঁকে বাজার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে ২০১৭ সালে শুভেচ্ছাদূত করেছিল বিএসইসি।</p> <p>বছর দুয়েক আগে ওয়ান ব্যাংক, বিডিকম, সোনালী পেপারস, ফরচুন শুজসহ কয়েকটি কম্পানির শেয়ারদর অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার কারণ খতিয়ে দেখতে উদ্যোগ নিয়েছিল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা।</p> <p>প্রাইমারি রেগুলেটর হিসেবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জও (ডিএসই) তদন্তদল গঠন করে অভিযোগটি খতিয়ে দেখে। দুটি প্রতিবেদনেই সাকিব এবং তাঁর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মোনার্ক হোল্ডিংসের নাম আসে।</p> <p>সাকিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ব্যক্তিগতভাবে এবং মালিকানায় থাকা কম্পানির বিও হিসাবের মাধ্যমে শেয়ারদরে কারসাজি করেছেন। ওই ঘটনায় সাকিবের কাছে ব্যাখ্যাও চেয়েছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা। </p> <p>সে সময় বিএসইসির মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা রেজাউল করিম বলেছিলেন, কারসাজিতে জড়িত প্রমাণিত হলে কেউ শাস্তি এড়াতে পারে না।</p> <p>দেশসেরা ক্রিকেটার সাকিব নানা ব্যবসায় যুক্ত হওয়ার পর নামেন পুঁজিবাজারে, যৌথ অংশীদারিতে খোলেন ব্রোকারেজ হাউস মোনার্ক হোল্ডিংস।</p> <p>কারসাজির অভিযোগ ওঠার পর মোনার্ক হোল্ডিংস সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলেও তিনি বলেছিলেন, তিনি খেলা ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে মন্তব্য করবেন না। জরিমানার সিদ্ধান্তের পর সাকিব আল হাসানের প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।</p> <p><strong>ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারেও কারসাজি</strong></p> <p>২০২১ সালের শেষের দিকে তালিকাভুক্ত ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারদরের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখতে ডিএসই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল।</p> <p>ব্যাংকটির শেয়ারদর ২০২৩ সালের ১৫ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে ১২ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ৫৯.৫২ শতাংশ বেড়ে ২০ টাকা ১০ পয়সা হয়, যা অস্বাভাবিক মনে হয় বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে।</p> <p>সে সময় ব্যাংকটির প্রধান ক্রেতাদের তালিকা করে ডিএসইর তদন্ত কমিটি দেখতে পায়, ১৫ ব্যক্তি ও কম্পানি ওয়ান ব্যাংকের সর্বোচ্চসংখ্যক শেয়ার কেনাবেচা করেছেন, যার ফলে স্বল্প সময়ের মধ্যে শেয়ারটির দর বেড়ে গেছে।</p> <p>এর মধ্যে শুধু সাকিব আল হাসান কেনাবেচা করেছেন ৮৫ লাখ ২১ হাজার শেয়ার, যার মধ্যে ৭৫ লাখের বেশি শেয়ার কেনা হয়েছে।</p> <p>শেয়ারটি কেনাবেচায় জড়িত ছিলেন প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মচারী সমবায় অধিদপ্তরের (বিসিএস ক্যাডার ৩১ ব্যাচ) ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. আবুল খায়ের হিরু, তাঁর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, হিরুর বাবা আবুল কালাম মাতবর এবং বোন কনিকা আফরোজ।</p> <p>বলা হয়, এই চক্রের নেতা হিরুর মাধ্যমে ১৩টি বিও হিসাবে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার ‘সিরিজ ট্রেডিং’ করে কৃত্রিমভাবে দর বাড়ানো হয়েছে। শেয়ার কেনাবেচায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় আবুল কালাম মাতবরের বিও হিসাব।</p> <p>এ দলকে ডিএসইর প্রতিবেদনে ‘আবুল কালাম মাতবর অ্যান্ড হিজ অ্যাসোসিয়েটস’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।</p> <p>প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ওই সময়ে এক দিনে ওয়ান ব্যাংকের লেনদেন হওয়া শেয়ারের প্রায় ৮৫ শতাংশই কিনেছিল ওই চক্র। সরাসরি বাজার থেকে শেয়ার কেনাবেচার পাশাপাশি ‘ব্লক’ মার্কেট থেকেও একইভাবে কেনা হয়।</p> <p>আবার চক্রটির সদস্যরা নিজেদের মধ্যেও শেয়ার কেনাবেচা করেছেন বলে ডিএসইর তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।</p> <p>এভাবে শেয়ারদর বাড়িয়ে চক্রটি ১৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকার বেশি মুনাফা করেছে শুধু ১৫ দিনে। দর বাড়ার কারণে তাঁদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে আরো ১৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা মুনাফা করার সুযোগ রয়েছে।</p> <p>এ কারসাজিকে ‘সিরিজ ট্রেড’ হিসেবে বর্ণনা করে বিএসইসির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ধরনের লেনদেন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯-এর ১৭ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন।</p> <p>বিধি লঙ্ঘনের জন্য আবুল কালাম মাতবর অ্যান্ড হিজ অ্যাসোসিয়েটসকে ২০২২ সালের আগস্ট মাসে তিন কোটি টাকা জরিমানা করে বিএসইসি।</p> <p>প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এটি প্রমাণ হয়েছে যে আবুল কালাম মাতবর অ্যান্ড হিজ অ্যাসোসিয়েটেস প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১৩টি বিও হিসাব ব্যবহার করে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার সিরিজ ট্রেডিং ও দর বৃদ্ধি করেছে।’</p>