<p>কয়েক বছর আগে বাহরাইনে অনুষ্ঠিত ‘আত-তাকরিব বাইনাল মাজাহিব’ শীর্ষক একটি সেমিনারে ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠাবিষয়ক একটি প্রবন্ধ পেশ করা হয়। যাতে এমন কতগুলো বিষয় উল্লেখ করা হয়, যা আদর্শিক দূরত্ব দূর করার পূর্বশর্ত। সংক্ষেপে বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো—</p> <p>১. কালেমা পাঠকারীকে কাফির না বলা</p> <p>বিভিন্ন মতবাদ ও সম্প্রদায়ের ভেতরে দূরত্ব কমানোর প্রথম শর্ত হলো কালেমা পাঠকারী মুসলিমদের কাফির বা অবিশ্বাসী আখ্যা না দেওয়া। মুসলিম উম্মাহের বিবদমান দলগুলোর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠায় প্রধান অন্তরায় হলো অন্যকে কাফির আখ্যা দেওয়া, মুসলমানকে ধর্মচ্যুত করা, উম্মাহর থেকে বের করে দেওয়া। কাউকে কাফির বা মুরতাদ আখ্যা দেওয়ার অর্থ হলো তাঁর সঙ্গে আপনি সম্পর্ক ছেদ করলেন এবং সংযোগ কেটে দিলেন। কেননা মুসলিম ও মুরতাদ ধর্মের দুই প্রান্তের মানুষ।</p> <p>কথায় কথায় কাফির বলা প্রকাশ্য বাড়াবাড়ি, যা ধর্মীয়, সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক সব বিবেচনায় ভুল। কাউকে কাফির বলার ক্ষেত্রে ইসলাম সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে। যুদ্ধের ময়দানে অস্ত্রের মুখোমুখি হয়ে এক ব্যক্তি আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা দেয়। তারপর উসামা বিন জায়িদ (রা.) তাকে হত্যা করেন এই ধারণা থেকে যে সে জীবন বাঁচাতে মিথ্যা বলছে। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.) চরম অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘তুমি কেন তার অন্তর চিঁড়ে দেখলে না?’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪২৬৯)</p> <p>২. প্রান্তিকতা পরিহার</p> <p>মুসলমানের ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শীদের মধ্যে সংলাপের শুরু থেকেই প্রান্তিকতা ও চরমপন্থা পরিহার করতে হবে। প্রান্তিক ও গোঁড়া মানুষরা তাদের কথা ও লেখার মাধ্যমে সমাজে বিশৃঙ্খলা ছড়ায়, সমাজের বহু মীমাংসিত বিষয়ে নতুন করে বিবাদ তৈরি হয়। প্রতিটি দল ও সম্প্রদায়ের মুখপাত্র তাদেরই হওয়া উচিত, যারা তুলনামূলক ভারসাম্যপূর্ণ, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ও প্রজ্ঞার অধিকারী। যারা অন্যকে দোষারোপ করে না, একপেশে আচরণ করে না; বরং জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও মধ্যপন্থার সঙ্গে কাজ করে। এবং যেকোনো বিষয়ের সামগ্রিক মূল্যায়ন করে, কেননা ভারসাম্য সাফল্যকে স্থায়ী করে।</p> <p>৩. জ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা প্রদান</p> <p>সংলাপের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো চলমান সংকট ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করা এবং যুক্তি ও প্রজ্ঞার আলোকে নিজ মতের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরা। সব কিছু গোপন করা, সব সময় চুপ থাকা, বিলম্ব করা বা ঝুলিয়ে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। অবস্থান স্পষ্ট করা না হলে কোনো সংকটেরই সমাধান হয় না।</p> <p>৪. শত্রুর ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সচেতন থাকা</p> <p>মুসলিম উম্মাহর নেতাদের সেসব ষড়যন্ত্র সম্পর্কেও সচেতন থাকা আবশ্যক, যা ইসলামের শত্রুরা ইচ্ছাকৃতভাবে মুসলিম সমাজে ছড়িয়ে দেয় বিভক্তি সৃষ্টি, একতা নষ্ট ও বিজয় পতাকা অধঃনমিত করতে। এসব ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সচেতন না হলে মুসলিম জাতি কখনো অভিন্ন লক্ষ্যে একত্র হতে পারবে না, অভিন্ন পথে চলতে পারবে না। এর পরিণতি হবে অনুরূপ—‘তুমি মনে করো তারা ঐক্যবদ্ধ, কিন্তু তাদের মনের মিল নেই; এটা এ জন্য যে তারা এক নির্বোধ সম্প্রদায়।’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ১৪)</p> <p>অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করবে এবং নিজেদের মধ্যে বিবাদ করবে না, করলে তোমরা সাহস হারাবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হবে। তোমরা ধৈর্য ধারণ করো; নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৪৬)</p> <p>৫. সংকটকালে একতাবদ্ধ</p> <p>স্থিতিশীল ও সাধারণ সময়ে মানুষ পরস্পর বিবাদে লিপ্ত হতে পারে। কিন্তু সংকটকালে তাদের জন্য বিবাদে লিপ্ত হওয়া গর্হিত। কথিত আছে, সংকট বিভক্তদের একত্র করে এবং সংকট বিপদগ্রস্তদের এক কাতারে নিয়ে আসে। সংকটকালে মুসলিমরা একত্র না হলে তার পরিণতি সম্পর্কে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা কুফরি করেছে তারা পরস্পরের বন্ধু, যদি তোমরা তা (মুসলিম জাতির পরস্পরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ) না করো, তবে দেশে ফিতনা ও মহাবিপর্যয় দেখা দেবে।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৭৩)</p> <p>আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।</p>