<p>‘ছাত্র-জনতার সফল গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে মহান মুক্তিযুদ্ধের পরে এই প্রথম বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার একটি অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়করা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক এবং অন্যান্য দেশপ্রেমিক অংশীজনেরা ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র পরিচালনার রূপরেখা ঘোষণা করেছেন। আমরা তাদের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত পোষণ করে বলতে চাই যে, একটি স্বাধীন বিচার বিভাগ ছাড়া বিদ্যমান রাষ্ট্রের আইনি কাঠামোর কোনো পরিবর্তনই টেকসই হবে না।’</p> <p>আজ বুধবার (৭ আগস্ট) দুপুরে হাইকোর্টে বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী সমাজ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হোসেন। এ সময় সাধারণ আইনজীবীদের পক্ষে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য আটটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়।</p> <p>প্রস্তাবনাগুলো হলো : ১. দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে অতি দ্রুত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন এবং সেনাবাহিনীর সহায়তায় দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে। ২. বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময়ে দায়েরকৃত সব মামলা ১৫ দিনের মধ্যে নির্বাহী আদেশে প্রত্যাহার করতে হবে। ৩. যে হাকিমেরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে নির্বিচারে জেলহাজতে পাঠিয়েছে তাদেরকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে। 8. কোটা মামলায় রায় দেওয়া হাইকোর্ট বিভাগের দুই বিচারককে অপসারণ করতে হবে। ৫. সুপ্রিম কোর্টে যোগ্য এবং সৎ বিচারক নিয়োগের জন্য অবিলম্বে অধ্যাদেশ জারি করতে হবে। ৬. সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের যেসব বিচারক সাংবিধানিক শপথ ভঙ্গ করে পতিত স্বৈরাচারকে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছেন তাদের এবং দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারকগণকে অবিলম্বে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে হবে। ৭. আগামী ৩০ দিনের মধ্যে বিচারক, আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সরকারি/ রাষ্ট্রের আইনজীবীদের সম্পদের হিসাব দাখিল করে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করতে হবে। ৮. পতিত সরকারের সব এমপি/মন্ত্রী, নেতা, আমলা, ব্যবসায়ী ও সুবিধাভোগীদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করতে হবে।</p> <p>এ ছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট দাবি তুলে ধরে বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী সমাজ। দাবিগুলো হলো : ১. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ৬ মাসের মধ্যে নতুন একটি সংবিধান প্রণয়নের জন্য সংবিধান সভা নির্বাচন করে তাদের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে, যেখানে ভবিষ্যতে কোনো ফ্যাসিবাদ জন্ম নিতে না পারে তার রক্ষাকবচ থাকতে হবে এবং মন্ত্রিপরিষদ ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য রাখতে হবে। ২. দুর্নীতি দমন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে এবং কমিশনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পদের হিসাব গ্রহণ পূর্বক ৩০ দিনের মধ্যে জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে কমিশনের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করতে হবে। অতি দ্রুততার সহিত দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তাদের দুর্নীতি তদন্ত করার জন্য অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। ৩. মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে বিচার বিভাগের পূর্ণাঙ্গ পৃথকীকরণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিচার বিভাগের আর্থিক স্বাধীনতা দিতে হবে। 8. যেসব নেতা বা আমলা দেশ ছেড়ে পালাবে তাদের সম্পত্তি পরিত্যক্ত সম্পত্তি ঘোষণা করে রাষ্ট্রের মালিকানায় নিতে হবে। ৫. ভবিষ্যতে কোনো দ্বৈত নাগরিককে কোনো সাংবিধানিক পদে পদায়ন করা যাবে না।</p> <p>এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার হাসান আজীম হাসান আজীম, ব্যারিস্টার রাকিবুল হাসান, অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব, অ্যাডভোকেট আবদুস সামাদ আজাদ, অ্যাডভোকেট মো. কামাল হোসেন মিয়াজী, ব্যারিস্টার আশফাকুর রহমান, অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল আমান, ব্যারিস্টার সাব্বির ইবনে আজম, অ্যাডভোকেট ধীমান দাস, অ্যাডভোকেট মো. উজ্জল হোসেন, অ্যাডভোকেট হাসান জাহিদ মিথুন, অ্যাডভোকেট আবু হেনা মোস্তফা কামাল, অ্যাডভোকেট মো. নূরুল আমিন, অ্যাডভোকেট মো. আনোয়ার হোসেন, অ্যাডভোকেট অনন্যা বিশ্বাস এবং অ্যাডভোকেট এন কে এম নাজমুল হাসান প্রমুখ।</p>