<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাজশাহী শহরের এক প্রান্তে প্রায় নির্জন গ্রামীণ আবহে অবস্থিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষকের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা বিশ্ববিদ্যালয় হাউজিং সোসাইটি (বিহাস)-এর প্রবেশমুখ থেকে কয়েক ধাপ সামনে এগিয়ে পূর্ব দিকে বাঁক নিয়ে দুটো বাড়ির পরই হাসান আজিজুল হকের বসতবাড়ি </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উজান</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। লেখকের বাড়ির  পেছনে বিস্তৃত ফসলি মাঠ, চমৎকার একটি নৈসর্গিক পরিবেশ। দেড় দশক নিয়মিত যাতায়াত ছিল এই বাড়িতে, যার জৈবিক সমাপ্তি ঘটেছে ১৫ নভেম্বর সোমবার রাত ৯টায়। কত বিচিত্র রকমের অভিজ্ঞতা আর গল্পের ভেতর দিয়ে গিয়েছি, কত বিচিত্র চিন্তা ও কাজের মানুষ তাঁর কাছে আসতে দেখেছি। হাসান আজিজুল হক একটি সার্থক জীবন কাটিয়েছেন এবং একটি গৌরবজনক মৃত্যুর মধ্য দিয়ে জীবনের সমাপ্তি ঘটেছে। তাঁর জীবনজমিন পতিত ছিল না। সেই ষাট দশকের গোড়ায় কিংবা আরো দু-তিন বছর পূর্বে অর্থাৎ কিশোর বয়সেই নিজের লেখকসত্তার ডাক শুনেছিলেন এবং সেই ডাকে সাড়া দিয়ে লেখালেখিকে জীবনের প্রথম কাজ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর দীর্ঘজীবনের বাকি সব কাজ দ্বিতীয় থেকে শুরু হয়েছে। সেই ষাট দশকে শুরু এবং শেষ ২০২১ খ্রিস্টাব্দের ১৫ নভেম্বর সোমবার রাত ৯টায়। ১০টি গ্রন্থে ৭২টি গল্প, দুটি প্রধান উপন্যাস, দুটি অসমাপ্ত উপন্যাস, দুটি উপন্যাসিকা, চার খণ্ডের স্মৃতিকথা ও চারটি স্মৃতিকথাজাতীয় রচনা, দুটি কিশোরসাহিত্য, দুটি অনুবাদগ্রন্থ, সক্রেটিসের জীবনীগ্রন্থ, কয়েকটি কবিতা এবং ১২টি প্রবন্ধগ্রন্থে ২৫০-এর কাছাকাছি প্রবন্ধ নিয়ে হাসান আজিজুল হকের দীর্ঘ ছয় দশকের লেখকজীবন। বাঙালির জাতীয় জীবনের রাষ্ট্র ভাঙাগড়া ও রাজনৈতিক উত্থান-পতনের তথা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, পাকিস্তান আন্দোলন, মন্বন্তর, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, বস্ত্রসংকট, দেশভাগ, পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীন বাংলাদেশে স্বৈরশাসক ও পাকিস্তানি ঐতিহ্যের রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ও বিকাশের মতো ঘটনাপ্রবাহ ও মানবিক বিপর্যয়ের দুঃসহ বাস্তবতার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ তাঁর সৃষ্টিকর্ম। বিরাশি বছর পরিণত বয়স, এক মানবজীবনের পূর্ণতার বয়স, তবু হাসান আজিজুল হকের মৃত্যু অকাল মৃত্যুই মনে হয়, তাঁর শূন্যতাকে  অপূরণীয় মনে হয়। </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কেননা ফলবান গাছকে কখনো বয়স দিয়ে বিচার করা যায় না; তার পঞ্চাশ বছরও যা, এক শ বছরও তা। ফলবান গাছ যদি কখনো ঝড়ে উপড়ে যায় বা অন্য কোনোভাবে মারা যায়, তাতে খুব কষ্ট লাগে; কিন্তু ফলহীন গাছের বেলায় সে কষ্ট লাগে না। হাসান আজিজুল হক ছিলেন আমাদের কাছে এমন এক চিরফলন্ত গাছ।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (স্বরোচিষ সরকার; </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমার শিক্ষক হাসান আজিজুল হক</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হাসান আজিজুল হক মানুষকে ভালোবেসে একটি জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মানুষ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বলতে তাঁর কাছে গোটা একটি মানুষ, সম্পূর্ণ স্বাধীন ও পরিপূর্ণ একটি মানুষ। ধর্ম, বয়স, বিত্ত, লিঙ্গ, সামাজিক অবস্থান, প্রাতিষ্ঠানিক বা রাজনৈতিক পদ-পদবি, নারী-পুরুষ, মফস্বল-শহর-রাজধানী বিবিধ পদ্ধতিতে আমরা যে মানুষকে বিভাজিত করি, বৈষম্য করি, তার সবই অর্থহীন ছিল হাসান আজিজুল হকের কাছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের সঙ্গে আড্ডা-আলাপে যেমন সাবলীল, ছাত্রদের সঙ্গেও একই সাবলীল। একজন লেখকের সঙ্গে শিল্প-সাহিত্যের আলাপ, একজন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে রাজনীতির আলাপ, আর একজন গৃহিণীর সঙ্গে ঘর-সংসারের আলাপ, অর্থাৎ তাঁর সান্নিধ্যে যে-ই আসুক ফিরে গেছে এই প্রত্যয় ও বিশ্বাস নিয়ে যে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমিই হাসান আজিজুল হক সবচেয়ে প্রিয়</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। বাড়িতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, সভা-সমাবেশে-রাজপথে তাঁকে ঘিরে বিপুল বিচিত্র মানুষের উপস্থিতি ঘটেছে। প্রত্যেকেই তাঁকে কী পরিমাণে হৃদয়ে ধারণ করে আছেন তার প্রমাণ মিলেছে মৃত্যুর পরে। মৃত্যুর পর হাসান আজিজুল হকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু গোলাম মুরশিদ </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমার বন্ধু হাসান আজিজুল হক</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নামে স্মৃতিচারণায় লিখেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিষাদে আক্রান্ত হলে আমি সোজা হাসানের ফ্ল্যাটে গিয়ে হাজির হতাম। উনি দুপুরে খাবার পর সুখনিদ্রায় নিমজ্জিত, নাকি অন্য কোনো কাজে জড়িয়ে গেছেন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সেটা আমি বিবেচনা করতাম না; সম্ভবত অন্যরাও করত না, এমনকি উনিও না।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ফেসবুকে হাজারো ছবি ভেসে উঠেছে। প্রত্যেকের সঙ্গেই হাসান আজিজুল হকের ছবি। প্রায় সব লেখকই স্মৃতি লিখেছেন। যেহেতু জীবন বলতে পরিপূর্ণ একটি লেখকজীবনই তিনি যাপন করেন, তাই তাঁর লেখালেখি, জীবনযাপন, শিক্ষকতা সব কিছুরই গতিপথ নির্ধারিত হয় মানুষের সর্বৈব মুক্তি ও সামাজিক দায়বদ্ধতার নিরিখে। এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমি যাদের কথা বলতে চাই তারা হচ্ছে আমাদের দেশের শতকরা ৯৫ ভাগ। আমার রাজনৈতিক বিশ্বাসটা তাহলে কী? এই ৯৫ ভাগ মানুষকে মুক্ত করতে হবে। আমার রাগের কারণ কী? আমার ক্রোধের কারণ কী? এই ৯৫ ভাগ মানুষের প্রতিভা ও কর্মশক্তির কোনো বিকাশ নেই এই সমাজে। ৯৫ ভাগ মানুষ এ দেশে চাপা পড়ে আছে। এত বড় অন্যায় ও অমানবিকতা একজন লেখক যদি অনুধাবন করতে না পারেন, তবে তিনি কিসের লেখক?</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হাসান আজিজুল হক কখনো ঢাকায় ছিলেন না। চাকরিসূত্রে প্রথমে খুলনা পরে রাজশাহীর অধিবাসী। মূলত এই দুই শহরেই তাঁর জীবন ছড়িয়ে আছে। দেখা যায়, ঢাকার সাহিত্যাঙ্গন তো বটেই, কলকাতার বিষ্ণু দে, মহাশ্বেতা দেবী, শঙ্খ ঘোষ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ প্রধান সাহিত্যিক-পরিমণ্ডলে হাসান আজিজুল হক যথেষ্ট শ্রদ্ধা ও সম্মোহনের লেখক। শারীরিকভাবে উপস্থিত না থাকলেও হাসান আজিজুল হক অধিকাংশ সাহিত্য আড্ডা-আলাপ বা অনুষ্ঠানের আলোচনার মধ্যমণি ছিলেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হাসান আজিজুল হক শুধু কথার জাদুকর ছিলেন না, মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির আশ্চর্য জাদুকরী ক্ষমতা ছিল তাঁর। মানুষের প্রতি অন্তহীন ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা যেমন তাঁর মধ্যে দেখি, ঠিক তেমনিভাবে মানুষও তাঁকে অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেন। অসংখ্য চিঠিতে তাঁর আতিথেয়তা ও ব্যবহারের অকুণ্ঠ প্রশংসা দেখতে পাই। অদৃশ্য মায়া বলে হাসান আজিজুল হক বাংলাদেশের অধিকাংশ লেখক-সম্পাদক-পাঠকের প্রিয় মানুষ হয়ে ওঠেন।  প্রত্যেকেই চিঠিতে এতটা দাবি আর অধিকার নিয়ে কথা বলেন, চিঠি দিতে দেরি হলে অভিমানে ফেটে পড়েন, ঘর-সংসারের খবরাদি দেওয়া-নেওয়া করেন, সুপরামর্শ দাবি করেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, তিনিই ওই পত্র প্রেরকের অভিভাবক। জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, হায়াৎ মামুদ, দ্বিজেন শর্মা, গোলাম মুরশিদ প্রমুখ লেখকবন্ধুরা জীবিকার প্রয়োজনে দেশের বাইরে গিয়েছেন, কিন্তু দেখা যায়, তাঁদের পরিবারের সদস্যের চেয়ে হাসান আজিজুল হকের সান্নিধ্য-হারানোর আতঙ্ক ও নিঃসঙ্গতায় কাতর হয়ে পড়ছেন বেশি।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তরুণ প্রজন্মের লেখকদের কাছে হাসান আজিজুল হক ছিলেন স্বপ্ন, প্রেরণা ও অহংকারের প্রতীক। আমাদের সৌভাগ্য, দেশভাগোত্তর  বাংলাদেশের নতুন সাহিত্যে হাসান আজিজুল হকের মতো প্রতিভাবান ও ত্যাগী লেখক পেয়েছি, যিনি শুধু নিজে লিখে সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেননি, সাহিত্য ও সাহিত্যিকের সেবায় নিজের সামর্থ্যের সর্বাংশ বিনিয়োগ করেছেন। তাঁর সময়কালের সম্ভাবনাময় বহু তরুণ লেখকের নতুন বই নিয়ে রিভিউ করেছেন। যেখানেই থেকেছেন সাহিত্যের পত্রিকা বা বই যেন পাঠকের কাছে পৌঁছায় বা পাঠক কেনে তার একটা ব্যবস্থা করেছেন। পত্রিকার সম্পাদকের অনুরোধে অন্য লেখকের লেখাও সংগ্রহ করেছেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হাসান আজিজুল হক বিরাশি বছরের দীর্ঘ বর্ণবহুল কর্মময় জীবনযাপন করে গেছেন। বিরাশি বছর পরিণত বয়স, এক মানবজীবনের পূর্ণতার বয়স, তবু হাসান আজিজুল হকের মৃত্যু অকালমৃত্যু। বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ এবং বিশ্বের যেখানেই বাঙালির বসবাস আছে, সর্বত্রই শোকের ছায়া পড়েছে। নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, এই শোকছায়া আরো দীর্ঘ হবে। কারণ তিনি যে বাংলা ছোটগল্পের মানদণ্ড তৈরি করে গেছেন, তাঁকে অতিক্রম করে শূন্যতা পূরণের যোগ্য উত্তরপ্রজন্ম এখনো গড়ে ওঠেনি। দেশভাগোত্তর বাঙালির জাতীয় জীবনের সাংস্কৃতিক পরিবেশকে উজ্জীবিত ও সৃজনশীল চিন্তাশক্তিকে বিকশিত করার ক্ষেত্রে প্রত্যয়ী ভূমিকা পালন করেন যে কয়জন মনীষী, যাঁরা সম্মুখ সারির যোদ্ধা ছিলেন, হাসান আজিজুল হক তাঁদের অন্যতম একজন। সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম লিখেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একটি যুগের অবসান হলো।...হাসান আজিজুল হক চলে যাওয়া মানে একসময়ের ওপর কালের পর্দা পড়ে যাওয়া। খুব বড় শিল্পী না হলে সময়কে এভাবে নিজস্ব অর্জনের বিষয়ে পরিণত করা সম্ভব হতো না। আর নিজের ভাষায় নিজের সময়কে সাহিত্যে উপস্থাপন হাসান আজিজুল হকের মতো বড় শিল্পীর পক্ষেই কেবল সম্ভব।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মানুষের উষ্ণতা, মানুষকে কাছে পাওয়া, মানুষের কাছে যাওয়ার লোভই শেষ পর্যন্ত তাঁর সৃষ্টিবিশ্বকে সংকোচিত করেছে? এই দ্বিধায় একদিন প্রশ্নই করে ফেলেছিলাম। প্রত্যুত্তরে বলেছিলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কেন লেখা হয়নি, কেন এত কম লিখেছি, বেশি লেখিনি, এসব প্রশ্নের উত্তর আমি কী করে দেব চন্দন? আমাকে এই প্রশ্ন লেখালেখির শুরু থেকেই করছে সবাই। আমি শুধু বলতে পারি, লেখালেখি ছাড়া জীবনে আমি দ্বিতীয় ব্রত গ্রহণ করিনি। সেই কিশোর বয়স থেকে কলম হাতে নিয়েছি, লেখক জীবনযাপন করছি, একটি মুহূর্তের জন্যও আমি এই জীবনের বাইরে যাইনি। সংসার, শিক্ষকতা, আড্ডা, বক্তৃতা, সভা-সমাবেশ, রাজপথে মিছিল যা কিছুই আমি করেছি, সব কিছুই আমার লেখক জীবনযাপনের অংশ, লেখালেখির অংশ। বাস্তবতার বাইরে আমি একটি শব্দও লিখিনি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span>  </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমার মনে বিভ্রম কিছৃতেই কাটছে না এবং না কাটুক এই প্রার্থনাই করি ঈশ্বরের কাছে যে আমি ছোটে যাচ্ছি বিহাসে, হাসান আজিজুল হকের বাসায়, আবার জমে উঠেছে সেই আড্ডা, আমি অপেক্ষা করছি  বুকে একসমুদ্র পরিমাণ অস্থিরতা নিয়ে, কখন স্যার ফাঁকা হবে, কখন আমি সম্পূর্ণ একা পাব, কখন আমি আর স্যার মুখোমুখি বসব, আর কেউ নেই কোথাও। স্যার গভীর তন্ময়, খোঁজে ফিরছেন বিষয়-ভাষা, এদিকে আমি ধরেছি মোবাইল বা রেকর্ডিং অথবা খাতা-কলম নিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে তাকিয়ে আছি, অথবা কিছুই করছি না, মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছি তাঁর কথা। বাতাসে কান পাতলেই এখন শুনি, স্যার ফোন করছেন, কী গো চন্দন, তুমি কি আজ আসবে না? কী গো চন্দন, তোমার কি দেরি হবে আসতে? মাহেন্দ্র বাবু চলে এসেছে তো? ঐ লেখাটা কম্পোজ হয়েছে? একবার প্রুফ দেখিয়ে নেবে না?  হে গো, আমার ঐ  লেখাটি কোন বইতে আছে? মাহেন্দ্র বাবু, চন্দন আজকাল খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, এদিকে আসার সময় কই?   </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমার জীবনের সুখে আনন্দে বিষাদে বিপদে হাসান আজিজুল হক জড়িয়ে আছেন শরীরের রক্ত-মাংসের মতো। এই জড়িয়ে থাকাটা আমৃত্যু পর্যন্ত সতেজ রাখার অদম্য ইচ্ছে থেকে আমার প্রতিভার সামর্থ্য অনুযায়ী তাঁর সাহিত্যকর্ম নিয়ে লেখালেখির চেষ্টা করি।  লেখকজীবন, ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, এক জীবনে আমি যতগুলো জীবন পেয়েছি,  অর্থাৎ আমার চেতনা ও বিশ্বাসের সর্বত্রই হাসান আজিজুল হক জড়িয়ে আছেন অনিবার্য হিসেবে। তাই হাসান আজিজুল হক নেই, হাসান আজিজুল হক মারা গিয়েছেন, এই কথাগুলোর কোনো অর্থই নেই আমার কাছে।</span></span></span></span></p>
