<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পাঠকের জন্য স্বস্তিদায়ক গল্প বলেন না তিনি। সাধারণ পাঠক, বিশেষ করে কোরিয়ার বাইরে আমাদের মতো দেশগুলোর পাঠক, যাঁরা সরল নিস্তরঙ্গ গল্প পড়তে ভালোবাসেন, তাঁদের কাছে কাংয়ের লেখা খুব সাদামাটা মনে হতে পারে। কিন্তু যাঁদের ভাবনা গভীর, ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্র, সমাজ থেকে সংস্কৃতি সম্পর্কে ভাবতে ভালোবাসেন, তাঁরা তাঁর উপন্যাস পড়ে নতুন করে অনেক কিছু ভাবার অবকাশ পাবেন। বলছিলাম, এবার সাহিত্যে নোবেল পাওয়া কথাসাহিত্যিক হান কাংয়ের কথা। কাং শুধু উপন্যাস ও ছোটগল্প লেখেননি, তিনি কবিতা লিখেছেন, প্রবন্ধ লিখেছেন। সাহিত্যের একজন অধ্যাপক হিসেবে কোরীয় সাহিত্য পড়ান। সেই সঙ্গে তাঁর বিশ্বসাহিত্যের পঠনপাঠনও সুবিস্তৃত।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কাংয়ের লেখার প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তিনি পাঠককে মানব-অভিজ্ঞতার একেবারে কেন্দ্রে নিয়ে যান। একক ব্যক্তির অনুভব, ভাবনা ও বিপর্যয়কে সর্বজনীন করে তোলেন। যেকোনো কথাসাহিত্যিকের এ রকমই তো অভীষ্ট লক্ষ্য থাকে। কাংও সে রকমই একজন লেখক। এখন অবধি মাতৃভাষা কোরীয়তে তাঁর আটটি উপন্যাস, দুটি গল্পের বই আর একটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। বোঝাই যায়, তিনি অজস্রপ্রসূ লেখক নন। সেই সঙ্গে লক্ষণীয় তার উপন্যাসগুলো আকারে বেশ ছোট। অনেকটা নোভেলেট বা উপন্যাসিকার মতো। কিন্তু এই উপন্যাসগুলোই ইংরেজভাষী পাঠক-ভুবনে বেশ আলোড়ন তুলেছে এর ধ্বংসাত্মক ও বিরক্তকর বিষয়-আশয়ের জন্য।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্বমঞ্চে তিনি পরিচিতি ও খ্যাতি পান ডেবোরা স্মিথের দুটি অনূদিত উপন্যাসের মাধ্যমে। এর একটি </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দ্য ভেজিটেরিয়ান</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (২০১৫), আরেকটি </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হিউম্যান অ্যাক্টস্</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (২০১৪)। </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দ্য ভেজিটেরিয়ান</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ২০১৬ সালে ম্যান বুকার আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করে। ওই পুরস্কারই তাঁকে প্রথমবারের মতো বিশ্বকথাসাহিত্যের পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে আসে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দ্য ভেজিটেরিয়ান</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> উপন্যাসটি প্রকাশের একটা চমকপ্রদ ইতিহাস আছে। কোরীয় সাহিত্যের প্রসারে কাজ করে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ডালকি আর্কাইভ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নামক কোরিয়ার একটি লাইব্রেরি। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই আর্কাইভের অর্থানুকূল্যে এখন পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে ২৫টি অনুবাদগ্রন্থ। এদের উদ্যোগেই আমেরিকার অনুবাদক ডেবোরা স্মিথ ২০১৫ সালে হান কাংয়ের কোরীয় ভাষায় লেখা </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দ্য ভেজিটেরিয়ান</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> উপন্যাসটি অনুবাদ করেন আর পরের বছর সেটি বুকার পুরস্কার লাভ করে। হান বলেছেন, কোরীয় ভাষায় লেখা মূল </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দ্য ভেজিটেরিয়ান</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> উপন্যাসটি কোরিয়ার পাঠকদের কাছে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চরম এবং উদ্ভট</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> উপন্যাস হিসেবে পরিচিতি পায়। পাঠকপ্রিয়তার কারণে হয়ে ওঠে বিশেষভাবে চিহ্নিত কাল্টসদৃশ বেস্ট সেলার। অর্থাৎ এ ধরনের উপন্যাস পাঠের অভিজ্ঞতা কোরিয়ার পাঠকদেরও ছিল না। এই উপন্যাসটি অভিনব বলেই মনে হয়েছে তাদের। তিনি স্বদেশে এই স্বীকৃতি পাওয়ার পর বুকারের মাধ্যমে বিশ্বস্বীকৃতি পেলে পৃথিবীর ২০টি ভাষার অনুবাদকরা উপন্যাসটির অনুবাদস্বত্ব কিনে নেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দ্য ভেজিটেরিয়ান</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">-এর গল্পটি দুই বোনের বিয়ের গল্প। কিন্তু ব্যক্তিজীবনের মনোজাগতিক সংকট এবং সামাজিক সংকটের নিগূঢ় অভিজ্ঞতায় উপন্যাসটি অসাধারণ আখ্যান হয়ে উঠেছে। গল্পটি ঋজু আর নানা ছোট ছোট তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনায় বিন্যস্ত। যে দুই বোনের গল্প বলা হয়েছে, তাঁদের একজনের নাম ইয়ুং হোয়ে আরেকজন ইন হোয়ে। উপন্যাসটি রচনা করা হয়েছে তিন পর্বে ভাগ করে। এর প্রতিটি অংশই আখ্যানের দিক থেকে স্বতন্ত্র। স্বস্তিদায়ক একটা পৃথিবীতে নারীর বেঁচে থাকার কথাই বর্ণিত হয়েছে সম্পূর্ণ আখ্যানে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইয়ুং হোয়ের চিরায়ত কোরীয় সাংস্কৃতিক কাঠামোকে অস্বীকৃতি জানানোর মধ্য দিয়ে উপন্যাসটির শুরু। একদিন হঠাৎ সে বলে মাংস আর খাবে না। নিরামিষাশী হয়ে গেছে বলে ইয়ুং ঘোষণা করে। এতে তার স্বামী আতঙ্কিত আর বিভ্রান্ত বোধ করতে থাকে। স্ত্রীর প্রতি সে ক্রুদ্ধ-ক্ষুব্ধ হয়। ইয়ুং কাউকে তেমন কিছু বলে না, কিন্তু মাংস খাওয়া বন্ধ করে দিতে চায়। এই যে মাংস না খাওয়া, এই ভাবনাটি তার মনে আসে একটা খারাপ স্বপ্ন দেখে। কিন্তু তার স্বামী-স্ত্রীর এই মাংস না খাওয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারে না। একদিন কর্মক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ একটা ডিনারে সহকর্মীদের সামনে ইয়ুং মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকলে তার স্বামী বেশ বিব্রত বোধ করে। বিস্মিত হয়ে ভাবে, এ কোন ছায়াময় রহস্য তার স্ত্রীর ভেতরে লুকিয়ে আছে, যার হদিস সে পায়নি। এ রকম কিছু যে ঘটতে পারে, কোনো সন্দেহ মনে জাগেনি। ওই মুহূর্তে তার স্বামীর মনে হয়েছে, এত দিন যাকে দেখে আসছি সে তো দেখছি আমার কাছে অজানা-অচেনাই ছিল। উপন্যাসের এই অংশটি শেষ হয় একটা বিপন্ন পারিবারিক দৃশ্যের মধ্য দিয়ে। এরই ধারাবাহিকতায় লেখা হয়েছে উপন্যাসের পরবর্তী দুটি অংশ।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দ্বিতীয় অংশের নাম </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মঙ্গোলীয় চিহ্ন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। এখানে পাওয়া যাচ্ছে তার বোনের স্বামীর সংযুক্তি ও বয়ান। এই লোকটি একজন ভিডিও শিল্পী। কিন্তু সে তার শ্যালিকার জন্মচিহ্নের দ্বারা আচ্ছন্ন হয়ে এমন একটা শিল্পকর্ম নির্মাণ করে, যা তার পরবর্তী জীবনকে একেবারে ধ্বংস করে দেয়। তিনি ভাবতে চেষ্টা করেন, তার এবং ইয়ুংয়ের শরীরী সংযোগের মাধ্যমে কী সৃষ্টি হতে পারত। সে ভাবে, তাদের দুটি শরীর একীভূত একটি শরীর হতে পারত। সেই শরীর কী হতে পারত একটা হাইব্রিড বৃক্ষ, জন্তু অথবা মানুষ? শ্যালিকার প্রতি যখন তার এই বাসনা স্ত্রীর কাছে ধরা পড়ে যায়, তখন সে অনুভব করে তার সমস্ত বাসনা আসলে দুই বোনের মধ্য দিয়েই পূর্ণতা পাচ্ছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উপন্যাসটির তৃতীয় অংশ ু </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জলন্ত বৃক্ষ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> তাদের দুই বোনের হিংসা-বিদ্বেষের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠার গল্পকে সামনে নিয়ে আসে। ইয়ুং হোয়ে তত দিনে না খাওয়ার বিষয়ে আরো কঠোর অবস্থানে চলে গেছে। মৃত্যু আসন্ন হয়ে উঠলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দেখা যায়, সে অ্যানোরেক্সিয়া নারভোসা, অর্থাৎ পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। বড় বোন তার বিছানার পাশে বসে থাকে। শৈশবের প্রিয় খেলা, ছোট বোনের ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে শেষবারের মতো সে চেষ্টা করে তাকে কিছু খাওয়াতে। ইন হোয়ে স্বামীর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চেষ্টা করে বোনের উদ্দেশ্য আর বাসনাকে বুঝতে, যদিও তা অস্পষ্টই থেকে যায়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই উপন্যাসে একজন ব্যক্তি যে আরেক ব্যক্তিকে বুঝতে পারে না, মানুষের সঙ্গে মানুষের এই দূরত্বের বিষয়টি, আধুনিক জীবনযাপনের এই অবিবার্য অনুষঙ্গটি অবিস্মরণীয় দক্ষতায় উপন্যাসটিতে তুলে ধরেছেন হান। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হান তিন পর্বে সম্পূর্ণ গল্পটি বলেছেন। সব মিলিয়ে যে গল্পটি এই উপন্যাস বলে, সেটা ওই ব্যক্তিমানুষের একাকিত্বের কথা। মানুষ হয়তো একজন আরেকজনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে চায়, কিন্তু সেটা কখনোই হয়ে ওঠে না। ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির, সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্প্রদায়ের এই যে বিচ্ছিন্নতা, সেটি সাংস্কৃতিক, খাদ্য গ্রহণের অভ্যাসকে ঘিরেই ঘটে থাকে বলে মনে করেন হান। বিচ্ছিন্নতার এই বোধকে তাই খাদ্যকেন্দ্রিক চর্চাও বলা যায়। খাদ্যের মধ্য দিয়েই অবসান ঘটে যৌনট্যাবুরও। বিপর্যস্ত হয় পারিবারিক দায়িত্ব ও বন্ধন। দুই বোনের গল্পটি ইচ্ছা করেই হান এমন বিক্ষিপ্তভাবে বলেছেন যে একসময় পাঠকও উপন্যাসটির কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। টেক্সট থেকে বিচ্ছিন্নতা ঘটে যায় পাঠকের। তৈরি হয় সামগ্রিক দূরত্ব। গল্পের সঙ্গে গল্পের, চরিত্রের সঙ্গে চরিত্রের এই দূরত্বই উপন্যাসটিকে বিশিষ্ট করে তুলেছে। একটা ভোগবাদী পুঁজিবাদী সমাজে এটাই তো স্বাভাবিক। পুরুষতান্ত্রিক আগ্রাসী দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন হান। এই উপন্যাসে সমাজের সেই ছবিটি বেশ স্পষ্ট।    </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এবার ডেবোরা স্মিথ অনূদিত দ্বিতীয় উপন্যাস </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হিউম্যান অ্যাক্টস</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">-এর কথা বলছি। উপন্যাসটি কোরিয়ার গোয়াংজু ছাত্র ও শ্রমিক আন্দোলনের মর্মান্তিক ঘটনার পটভূমিতে লেখা। আশির দশকে সামরিক স্বৈরশাসক পার্ক চুং হি তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী জেনারেল চুন ডো-হাওয়ানকে হত্যা করেন। এরপর তিনি সারা দেশে সামরিক শাসন জারি করেন। কোরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ করে দেন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়। নিষিদ্ধ করা হয় সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। এরই প্রতিক্রিয়ায় ১৯৮০ সালের ১৮ মে ছাত্ররা গোয়াংজুতে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন শুরু করে। সরকারি সৈন্যরা আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালায়। পরের দিন সারা শহরের মানুষ ফুঁসে ওঠে এবং ওই আন্দোলনে যোগ দেয়। এ রকম চলতে থাকে বেশ কয়েক দিন। কিন্তু মার্কিন অনুমোদন নিয়ে ২৭ মে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করার পর আন্দোলনটি থেমে যায়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঘটনাটি কোরিয়ার ইতিহাসে সুগভীর এক রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক স্মৃতি হয়ে আছে। কিন্তু এই ঘটনার সরল বয়ান নয়, হান তৈরি করেছেন বিপরীত বয়ান বা আখ্যান। একে বলা যায় বিকল্প ইতিহাস। এই ইতিহাস হচ্ছে সেই মানবিক কর্ম, যা অতীত থেকে বর্তমানে প্রসারিত হয়ে আছে। অতীত বর্তমানকে কলুষিত করছে, এমনটাই বলতে চেয়েছেন হান। দুই কোরিয়ার দুঃসহ বিভাজন এবং সব মিলিয়ে পুরো এলাকায় যে অস্থিরতা ও সংকটের সূচনা ঘটল, হান কোরিয়ার সেই জটিল রাজনীতিকে নান্দনিক আখ্যানশৈলীর মধ্য দিয়ে বর্ণনা করেছেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উল্লিখিত দুটি উপন্যাসে একদিকে তীব্র গভীর মানবিক বিচ্ছিন্নতাকে যেমন তিনি তুলে ধরেছেন, অন্যদিকে ইতিহাসের স্মৃতি কিভাবে বর্তমানকে নির্মাণ করে, তাও তার উপন্যাসের বিষয় হয়ে উঠেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মানবিক সংকট, বেদনা, ক্ষত, বিষাদ, বিচ্ছিন্নতা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> মূলত এই হচ্ছে হান কাংয়ের উপন্যাসের বিষয়-আশয়। তাঁর অন্য ছয়টি উপন্যাসে এই আখ্যানই খুঁজে পাবেন পাঠক। এই মুহূর্তে যাঁরা সমগ্র বিশ্বে কোরীয় সাহিত্যের প্রতিনিধিত্ব করছেন, হানের অবস্থান তার শীর্ষে। নোবেল পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়ে তিনি সেটা প্রতিষ্ঠিত করলেন। হানই প্রথম এশীয় নারী, যিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন। রবীন্দ্রনাথের প্রায় ১১০ বছর পরে এশিয়ার </span></span></span></span>তৃতীয় <span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক হিসেবে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করলেন। এশিয়ার মানুষ হিসেবে আমরা তাই তাঁর এই অর্জনে গর্ব অনুভব করতে পারি। অভিনন্দন হান কাং।</span></span></span></span></p>