<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেওয়া ব্যাংক মার্জারের উদ্যোগ আপাতত বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে শক্তিশালী করার কাজ করছে সংস্থাটি। তবে ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে অন্য ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ বা বন্ধও হয়ে যেতে পারে একাধিক ব্যাংক। পতন হওয়া সরকারের গভর্নরের অপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত, সুশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সময়সাপেক্ষ নিরীক্ষা সমস্যা ও আইনি কাঠামো তৈরি না হওয়ার কারণে প্রক্রিয়াটি এখন স্থগিত। গত ৪ এপ্রিল ব্যাংক একীভূত করার বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তার আগেই বেসরকারি পদ্মা ব্যাংককে শরিয়াভিত্তিক এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার ঘোষণা আসে। ব্যাংক দুটি বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পেয়ে সমঝোতা চুক্তিও করেছে। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর পরিবর্তন এসেছে পদ্মা ও এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে। পদ্মা ব্যাংকের নিরীক্ষা কার্যক্রম শেষ হলেও এখন এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে সংসার বাঁধতে রাজি নয় পদ্মা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত দুই মাস ব্যাংক পরিচালনার জন্য আমরা এক টাকাও ধার করিনি। নতুন করে আমানত পাচ্ছি। আগের পাওনাদারদের অর্থ ফেরতও দিচ্ছি ধীরে ধীরে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক যদি আমাদের কিছু নগদ সহায়তা দেয় তাহলে আমরা নিজেরাই ঘুরে দাঁড়াতে পারব। অন্য ব্যাংকের সহযোগিতা লাগবে না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে মার্জারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মার্জার ছিল সাবেক সরকার ও পর্ষদের একটি সিদ্ধান্ত। এখন তাদের দুটোর কোনোটাই নেই। আমি মনে করি, এখন আমাদের আর মার্জার হওয়ার প্রয়োজন নেই, আমরা নিজেরাই ঘুরে দাঁড়াতে পারব।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আওয়ামী সরকারের আমলে ৩১ জানুয়ারি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে এক বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার পরামর্শ দেয়। এরপর গত ১৪ মার্চ এক্সিম ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ একে অপরের সঙ্গে একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ওই সময় প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন ফ্রেমওয়ার্ক নামের একটি নীতিমালাও জারি করা হয়। ব্যাংক কমানোর এমন উদ্যোগের উদ্দেশ্য ভালো হলেও পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে পুরো প্রক্রিয়াটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের নেওয়া অন্য সব পদক্ষেপের মতো এটিও শুরু হওয়ার আগেই মুখ থুবড়ে পড়ে। তাই নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর প্রক্রিয়াটি আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ব্যাংক একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত নেবে ব্যাংকিং কমিশন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পলাতক আব্দুর রউফ তালুকদারের সময় মার্জার নীতিমালা জারির পর রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে বিডিবিএল একীভূত করার বিষয়ে অনুমোদন দেয় দুই কম্পানির পর্ষদ। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংককে বেসরকারি সিটি ব্যাংকের সঙ্গে এবং ন্যাশনাল ব্যাংককে ইউসিবির সঙ্গে একীভূত করার বিষয়ে আলোচনা হয় ওই সময়। এর বাইরে রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংক বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) একীভূত হওয়ার নির্দেশনা ছিল সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু এগুলোর কোনোটাই আর আলোর মুখ দেখেনি।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দুর্বল ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে (রাকাব) বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে রাকাব থেকে আমানত উঠিয়ে নিচ্ছিল ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীরা। এই প্রক্রিয়া বন্ধ করতে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে অন্য ব্যাংকের সঙ্গে মার্জার প্রক্রিয়া বন্ধ করার দাবিতে রাজশাহী, বগুড়া, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলায় মানববন্ধনও করেন ব্যাংকটির কর্মকর্তারা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ার কোনো ইতিহাস নেই বাংলাদেশে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পেলেই পরবর্তী সময়ে তার পারফরম্যান্স যত খারাপই হোক, ব্যাংক সরকারি সহায়তায় বাঁচিয়ে রাখা হয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা আরো জানান, এরই মধ্যে ৯৫ শতাংশ আমানতকারীর আমানত আমানত-বীমা স্কিমের মাধ্যমে সুরক্ষিত করা হয়েছে। তার পরও শতভাগ আমানতকারীর কথা ভেবে কঠিন সিদ্ধান্তের দিকে যেতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির মাধ্যমে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এমন সহায়তা সব সময় দেওয়া হবে না। অন্য ব্যাংক থেকে ধার করেও নিজের পায়ে দাঁড়াতে না পারলে মার্জারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এমনকি ব্যাংক বন্ধের সিদ্ধান্তও নিতে পারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২২ সেপ্টেম্বর পাঁচ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই চরম তারল্য সংকটে পড়ে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংকগুলো। একই সঙ্গে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারেনি আরো পাঁচটি ব্যাংক। এসব ব্যাংকের সংকট নিরসনে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ গ্যারান্টির ঘোষণা দিয়েছে। সেই বিশেষ তারল্য সহায়তার প্রথম ধাপ সম্পন্ন করেছে পাঁচটি ব্যাংক। তুলনামূলক ভালো ব্যাংক থেকে ধার পেতে পাঁচ ব্যাংকের গ্যারান্টার হয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এই পাঁচটি ব্যাংক হলো</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করা হয়। এর মধ্যে এস আল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‌</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মের নিয়ন্ত্রণে থাকা আটটিসহ মোট ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে নতুন করে পুনর্গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পর্ষদ পুনর্গঠন করা অন্য তিন ব্যাংক হলো, আইএফআইসি, ইউসিবি ও এক্সিম ব্যাংক।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তারল্য সংকটে থাকা কিছু ছোট ব্যাংককে একীভূত করার পরিকল্পনা রয়েছে। কারণ ব্যাংকগুলোর বেশির ভাগ মালিকানা এখন সরকারের অধীনে। তাই সরকারের ক্ষেত্রে একীভূত করা সহজ হবে। তবে বাস্তবতা বুঝে আমরা কাজ করব। ব্যাংক একীভূত হলেও আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা ৯টি ব্যাংকের অডিট করার জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছি। আমরা তিনটি করে ব্যাংকের অডিট করব। এ প্রক্রিয়ার শুরুতেই ইসলামী ব্যাংক অন্তর্ভুক্ত থাকবে। টাস্কফোর্সের মাধ্যমে এসব ব্যাংকের প্রতিটি ঋণ অডিট করা হবে এবং সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করা হবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বর্তমানে তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর নিট ডিপোজিট ইতিবাচক রয়েছে বলেও জানান তিনি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক এমডি ও জ্যেষ্ঠ ব্যাংকার আনিস এ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমাদের দেশে আসলে এত ব্যাংকের প্রয়োজন নেই। অডিট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কিছু ব্যাংক আসলেই মার্জ করে দেওয়া উচিত। তবে এই কাজটা সময়সাপেক্ষ। অন্তত দুই বছর প্রয়োজন।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি আরো বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আগের সরকার ব্যাংক মার্জারের উদ্যোগ নিলেও তা পরিকল্পিত ছিল না। তাই সেটা বাস্তবায়ন হয়নি। এখন বর্তমান সরকার যদি মার্জের কথা ভাবে তাহলে এই প্রক্রিয়ার জন্যই আলাদা একটি টাস্কফোর্স গঠন করা দরাকার।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p>